———–জন্মদিনে স্মরণঃ বসন্ত চৌধুরী——–—-
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ‘ওঁর মতো কণ্ঠস্বর আর চেহারা পেলে আমি আরও অনেককিছু করতে পারতাম’– বলেছিলেন স্বয়ং উত্তম কুমার। তার আগে অবশ্য ওঁর কাছ থেকেই রোম্যান্টিক নায়কের ব্যাটন নিঃশব্দে চলে এসেছিল ভবানীপুরের ভূমিপুত্রের হাতে। তাতে বিন্দুমাত্র ম্লান হয়নি পূর্বজর আভিজাত্য আর গরিমা। প্রখর গ্রীষ্মে জন্ম হয়েও তিনি বাংলা ছবির ঋতুরাজ, বসন্ত চৌধুরী। আদতে প্রবাসী বাঙালি। জন্ম নাগপুরে, অভিজাত ও সম্পন্ন দত্ত চৌধুরী পরিবারে। সিদ্ধেশ্বর ও কমলা চৌধুরীর বড় ছেলে।
নাগপুরে কলেজপাঠ শেষ করে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। শখে শুরু করেছিলেন অভিনয়। পরে তা বিকশিত হয় তাঁর প্রতিভা আর ব্যক্তিত্বে। তাঁর প্রথম ছবি কার্তিক চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘মহাপ্রস্থানের পথে’। তারপর একে একে ‘ভগবান শ্রীচৈতন্য’, ‘যদুভট্ট’, ‘আঁধারে আলো’, ‘অনুষ্টুপ ছন্দ’, ‘অভয়া ও শ্রীকান্ত’, ‘দেবী চৌধুরাণী’ এবং অবশ্যই ‘দীপ জ্বেলে যাই’। ১৯৬৫ সালে ‘রাজা রামমোহন রায়’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য বি এফ জে এ পুরস্কার। নায়কোচিত অভিনয়ের পাশাপাশি অনায়াস গতি খলনায়কের ভূমিকায়ও। ‘দিবারাত্রির কাব্য’ ছবিতে সেরকমই একটি নেগেটিভ চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়। এরই পাশাপাশি ভাবুন নবীন পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রথম ছবি ‘হীরের আংটি’-তে তাঁর কাজ।
অভিনেতার পাশাপাশি তাঁর আর এক সত্ত্বা অবশ্যই পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহ। পশমিনা-সহ কাশ্মীরি বা পার্সিয়ান শাল থেকে শুরু করে প্রাচীন মুদ্রা !তাঁর সংগ্রহ যে কোনও গবেষকের কাছে ঈর্ষণীয়। স্বয়ং সত্যজিত্ রায় তাঁর সংগ্রহ থেকে শাল ব্যবহার করেছিলেন নিজের ছবিতে। অভিনয়-পরবর্তী জীবনে বসন্ত চৌধুরীকে দেখা গেছে নন্দন-এর চেয়ারম্যান রূপে। আবার অভিনয় বৃত্তের সম্পূর্ণ বাইরে গিয়ে কলকাতার শেরিফ হিসেবেও তিনি সমুজ্জ্বল। সে রকমই উজ্জ্বল তাঁর ছেলে সৃঞ্জয় চৌধুরীও। তিনি প্রখ্যাত সাংবাদিক।
২০০০ সালের ২০ জুন প্রয়াত হন বাংলা চলচ্চিত্রের ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর। বসন্ত চৌধুরীর চলে গেছেন অপার্থিব জগতে। তবে তাঁর পার্থিব সংগ্রহের কিছু অংশ আলো করে আছে ঐতিহাসিক সংগ্রহশালা। তাঁর ইচ্ছেতেই দান করে দেওয়া হয়েছিল।
Be First to Comment