রণবীর ভট্টাচার্য: কলকাতা, ১৫মে ২০২০। আশির দশক হিন্দি সিনেমার ক্ষেত্রে ছিল অদ্ভুত এক মাহেন্দ্রক্ষণ, তথাকথিত অনেক অভিনেতার উঠে আসা সেই সময়ে। জরুরি অবস্থার সময় অতিক্রান্ত, অমিতাভ বচ্চন বা ধর্মেন্দ্র যুগ পেরিয়ে বলিউড খুঁজছিল নতুন মুখ। সানি দেওল, সঞ্জয় দত্ত, অনিল কাপুর, জ্যাকি শ্রফ – অনেকেই এসেছেন রুপোলি পর্দায় সেই সময়ে। আর নায়িকাদের কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে সেখানেও ছিল চমক – আর অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত, যার আজ জন্মদিন।
একদিকে রেখার মতো তারকা, শ্রীদেবীর মত জনপ্রিয় অভিনেত্রী আর অন্যদিকে জুহি চাওলার মত নবাগতা, মাধুরী দীক্ষিত যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েননি, তা একেবারেই নয়। বলা যেতে পারে, পারিবারিক সিনেমা যেখানে দুই ভাই বা দুই বন্ধু রয়েছে বা সামাজিক আঙ্গিক মুখ্য, মাধুরী তার অভিনয় দক্ষতায় ছাপিয়ে গিয়েছিলেন অনেককেই।
আশির দশকের নায়িকাদের কথা বললে যেমন মাধুরী দীক্ষিত আর শ্রীদেবীর কথা বলতেই হবে, সেইরকম অনেকেই হয়তো বলবেন ডিম্পল কাপাডিয়া, অমৃতা সিং, মীনাক্ষী শেষাদ্রি, জয়াপ্রদার কথাও। স্মিতা পাটিলের আকস্মিক মৃত্যু না হলে হয়তো অন্য রকম হতেই পারত আশির দশকের শেষের সময়টা। তবে সিনেমার দিক থেকে বলাই যায়, অভিনয় জীবনের শুরুর থেকেই মাধুরী ছিলেন পরিণত – অভিনয়, লাস্যময়ী উপস্থিতি, নৃত্য পটিয়সী – অচিরেই কিন্তু ব্র্যান্ড মাধুরী হয়ে উঠেছিলেন হিট সিনেমার অন্যতম অংশ। আজকের যুগে যখন সিনেমার বিষয়বস্তুতে গুরুত্ব দেওয়া হয় নারী চরিত্রকে, সেই যুগে কিন্তু মাধুরী আদায় করেছিলেন সেই আলাদা জায়গা। তার আগে হেমা মালিনীর ক্ষেত্রেও বলা চলে অনেকটা। তবে সেক্স সিম্বল হিসেবে ওনাকে তুলে ধরার চেষ্টা যে হয়নি, তা নয়। সেই ‘ধক ধক গার্ল’ বলাই হোক কিংবা ‘চোলি কা পিছে ক্যায়া হেয়’ – তবে অনেক সিনেমা কিন্তু স্রেফ মাধুরী ছিলেন বলেই মানুষ দেখেছেন।
বলিউডের তিন খান কিন্তু অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে মাধুরীর সাথে শুধু অভিনয়ই করেননি, হিট উপহার দিয়েছেন। আমির খানের সাথে ‘দিল’, সলমান খানের সাথে ‘হাম আপকে হেয় কৌন’ আর শাহরুখ খানের সাথে তো একাধিক সিনেমা মন জয় করে নিয়েছিলেন আপামর সিনেমাপ্রেমী ভারতবাসী সহ বিশ্ববাসীর। মাল্টিস্টারার সিনেমা থেকে নতুন দশকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করা, এই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সফল হয়েছিলেন মাধুরী।
তাই নব্বইয়ের দশকে জুহি চাওলা, কাজল, করিশমা কাপুর, অল্প সময়ের জন্যে দিব্যা ভারতী, ঐশ্বর্য রাই, সুস্মিতা সেন – তথাকথিত নতুনদের মধ্যে কাজ করেও কিন্তু চূড়ান্ত সফল হয়েছেন মাধুরী। তদানীন্তন নরসিমহা রাওয়ের আমলে অর্থনৈতিক সংস্কারের পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সিনেমার আঙ্গিকের পট পরিবর্তন হয়। তখন মাধুরী ও শ্রীদেবী ছিলেন পুরোদস্তুর স্টার। সম্পূর্ণ নতুন ধারার কাজ ও বিশ্বব্যাপী দর্শকের কাছে হিন্দি সিনেমা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে মাধুরীর ভূমিকা কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না। ‘এক দো তিনের’ মাধুরী যখন সঞ্জয় লীলা বনশালীর ‘দেবদাস’ সিনেমায় চন্দ্রমুখীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তখন মুগ্ধ হয়েছেন সবাই। আবার ‘দিল তো পাগাল হেয়’ সিনেমার শেষ দৃশ্যে যখন মাধুরীর চোখে জল, আপামর সিনেমাপ্রেমীর চোখে পলক পড়েনি এক মুহূর্তের জন্য।
বিবাহ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ অবসর কাটিয়ে যখন মাধুরী ‘কামব্যাক’ করেছেন, তখন আবারও দেখিয়েছেন যে অভিনয় দক্ষতার দিক থেকে এতটুকু মরচে পরতে দেননি। বর্ষীয়ান নাসিরুউদ্দিন শাহের বিপরীতে অন্য ধারার সিনেমা ‘দেড় ইশকিয়া’ সিনেমায় দেখিয়েছেন সেই মাধুরী ম্যাজিক। নাচকেন্দ্রিক বিভিন্ন রিয়ালিটি শো এর বিচারকের দায়িত্বে রয়েছেন বর্তমানে মাধুরী দীক্ষিত।
তবে একটা কথা যেটা না বললেই নয়, বর্তমানে নারীকেন্দ্রিক সিনেমা তৈরি হলেও, স্রেফ নিজের জোরে সিনেমাকে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে, মাধুরীর সমকক্ষ কেউ হতে পারেননি – দীপিকা পাডুকোন থেকে তাপসী পান্নু, সবাইকে মাথায় রেখেই বলা যায় এই কথা। দর্শককে যদি আবার সিনেমা হলে ফেরাতে হয়, তাহলে ভালো গল্পের সাথে চাই মাধুরী দীক্ষিতের মত মহানায়িকাও।
জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, মাধুরী দীক্ষিত।
Be First to Comment