শু ভ জ ন্ম দি ন শা হ রু খ খা ন
বাবলু ভট্টাচার্য : অভিনয় জীবনের ৩০ বছরে পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য ও জনপ্রিয়তা। এক দরিদ্র ভারতীয় তরুণ থেকে নিজের যোগ্যতায় বলিউডে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তিনি। অর্থ ও প্রতিপত্তির পাশাপাশি অভিনয় জাদুতে মুগ্ধ করেছেন সারা বিশ্বের দর্শককে।
‘বাজিগর’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘কাভি খুশি কাভি গম’, ‘কাল’, ‘ডন’ এবং সাম্প্রতিক ‘জোয়ান’সহ অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়ে বলিউডের ‘কিং খান’-এর খেতাব জয় করেছেন তিনি।
শাহরুখের বাবা তাজ মোহম্মদ খান ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর নেতা এবং মা লতিফ ফাতিমা ছিলেন একজন ম্যাজিষ্ট্রেট ও সমাজসেবী। যিনি জাঞ্জুয়া রাজপুত পরিবারের মেজর জেনারেল শাহ নওয়াজ খানের কন্যা। শাহ নওয়াজ খান ছিলেন সুভাষচন্দ্র বোসের অধীনে আজাদ হিন্দ ফৌজের অধিনায়ক।
শাহরুখ দিল্লীর সেইন্ট কলম্বাস স্কুলে পড়তেন এবং এখানে তিনি ক্রীড়া, নাটক ও পড়াশোনায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। এখানে তাকে সম্মানজনক ‘সোর্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। পরে তিনি হন্সরাজ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে সম্মান ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মাস কম্যুনিকেশন’ নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।
তার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর ১৯৯১ সালে শাহরুখ খান নতুনভাবে জীবন শুরু করার জন্য নতুন দিল্লী ত্যাগ করে মুম্বাইতে আসেন।
১৯৮৮ সালে ‘ফৌজী’ টেলিভিশন সিরিয়ালে কমান্ডো অভিমন্যু রাই চরিত্রের মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন।
‘ফৌজী’তে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি হেমা মালিনীর চোখে পড়েন— যিনি শাহরুখ খানকে তাঁর অভিষেক ছবি ‘দিল আশনা হ্যায়’তে অভিনয়ের সুযোগ দেন। ‘দিওয়ানা’ (‘৯২) ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা শুরু করেন। এ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন দিব্যা ভারছবিটি ব্যবসা সফল হয় এবং তিনি বলিউডে আসন গাড়তে সক্ষম হন। আসলে তার প্রথম ছবি হওয়ার কথা ছিল ‘দিল আশনা হ্যায়’ কিন্তু দিওয়ানা প্রথমে মুক্তি পায়।
১৯৯৩ সালে ‘বাজিগর’ ও ‘ডর’ ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিপুল খ্যাতি পান। বাজিগর ছবির জন্য তিনি তার ক্যারিয়ারের প্রথম ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরষ্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ‘কভি হাঁ কভি না’ ছবিতে একজন ব্যর্থ যুবক ও প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করেন— যার কারনে তিনি সমালোচকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা নির্বাচিত হন।
১৯৯৪ সালে তিনি ‘আঞ্জাম’ ছবিতে অভিনয় করেন যেটি ব্যবসাসফল হয়নি। তবে সাইকোপ্যাথ হিসেবে তার অভিনয় সমাদৃত হয় এবং তিনি ১৯৯৫ সালে ফিল্ম ফেয়ার শ্রেষ্ঠ ভিলেন পুরষ্কার লাভ করেন।
১৯৯৫ ছিল তার জন্য খুব সাফল্যের বছর। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ বক্স অফিস রেকর্ড ভাঙ্গে এবং এর সব কৃতিত্ব পান তিনি। ছবিটি ৫২০ সপ্তাহের বেশি প্রদর্শিত হয়। ছবিটি বর্তমানে বারো বছর ধরে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং প্রায় ১২ বিলিয়ন রুপির চেয়েও বেশি অর্থ আয় করেছে।
‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’র পর তিনি বেশ কটি ছবিতে বলিউডে সফলতা পেতে থাকেন। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ ‘পরদেশ’, ‘দিল তো পাগল হ্যয়’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যয়’, ‘মোহাব্বতে’, ‘কভি খুশি কভি গম’, ‘কাল হো না হো’ এবং ‘বীর-জারা’।
এছাড়া অন্যান্য পরিচালক, যেমন- আজিজ মির্জার ‘ইয়েস বস’, মনসুর খানের ‘জোশ’ এবং সঞ্জয় লীলা বনসালির ‘দেবদাস’ ব্যবসা সফল হয়।
২০০৬ সালে করন জোহরের ‘কভি আলবিদা না কেহনা’ ছবিটি ভারতে মোটামুটি ব্যবসা করলেও বিদেশে ব্যবসাসফল হয়। একই বছরে ‘ডন’ ছবিতে অভিনয় করেন যেটিও ব্যবসাসফল হয়েছিল।
২০০৭ সালে শাহরুখের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল ‘চাক দে ইন্ডিয়া’। বাণিজ্য সফল এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য শাহরুখ সপ্তমবারের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। তার অন্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ওম শান্তি ওম’ সবচেয়ে বাণিজ্য সফল ছবি। ২০০৮ সালে শাহরুখের ‘রব নে বানা দি জোড়ি’ ছবিটি খুব ভাল ব্যবসা করে।
বর্তমানে সারা বিশ্বে বলিউডের জনপ্রিয়তম ব্যক্তিত্বদের মধ্যে শাহরুখ খান অন্যতম। তার অভিনীত হে রাম, দেবদাস এবং পহেলি ভারত থেকে অস্কার-এ পাঠানো হয়েছিল।
শাহরুখ খানকে ফরাসি সরকার চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ‘Ordre des Arts et des Lettres’ সম্মাননায় ভুষিত করেছে। লন্ডনে মাদাম তুসোর মোম জাদুঘরে তার মুর্তি রয়েছে।
শাহরুখ খান ১৯৬৫ সালের আজকের দিনে (২ নভেম্বর) নিউ দিল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment