Press "Enter" to skip to content

ফাঁসিই কি সমস্যার একমাত্র সমাধান?

Spread the love

———————-আজ শেষ পর্ব——————-
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়:২৬শে জানুয়ারি ২০২০ আর মাত্র কযেকদিনের অপেক্ষা। নির্ভয়া কাণ্ডের চার আসামির তিহার জেলে ফাঁসি হতে চলেছে। একদিকে চিকিৎসক ও প্রশাসনের কড়া নজরে আসামিরা, অন্যদিকে যে ফাঁসুড়ে ফাঁসি দেবে সেও নিজেকে রোজ একটু একটু করে মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রথম চারজনকে একসাথে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে। তিহার জেলের তিন নম্বর সেলে ঘটতে চলেছে এই ঐতিহাসিক ঘটনা । যত বড় অপরাধী হোক জীবনের মায়া কার না আছে? রাষ্ট্রপতি ক্ষমা ভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টা ব্যর্থ। তবু আসামি পক্ষের আইনজীবীরা শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল শীর্ষ আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করে আবার আদালতে অভিযোগ জানানো হয়েছে তিহার জেল কর্তৃপক্ষ পিটিশনের কাগজ আটকে রেখেছে। যদিও জেল আধিকারিকের পক্ষে এই অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালতকে।

অভিজ্ঞ মহলের খবর, গণতন্ত্রের নিয়মে আগামী পয়লা ফেব্রুয়ারি ফাঁসি রদ হলেও হতে পারে।সেক্ষেত্রে ফাঁসি পিছিয়ে যেতে পারে কিম্বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। ধর্ষিতা মেয়েটির মা বাবা কিম্বা জনতার অধিকাংশ মনে করে এদের ফাঁসি দিলে তবেই মৃত মেয়েটির আত্মা শান্তি পাবে । শেষপর্যন্ত কি হবে সাধারণতন্ত্রের দিনে বলা মুস্কিল। ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে মন্তব্য করেছেন, এই ধরণের মামলার ক্ষেত্রে নির্যাতিতার অধিকার সুরক্ষিত করার দিকেই নজর রাখবে শীর্ষ আদালত। দেখা হবে আইনের ফাঁক দিয়ে কোনো অপরাধী যেন বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘতর না করতে পারে। বিচারপতি বোবদে আরও বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা যেন অপরাধীর অধিকার না হয়। এমন হলে সাধারণ মানুষের বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা চলে যাবে। এর আগে কেন্দ্রীয় সরকার ফাঁসির বিলম্ব রুখতে আইনি সংশোধন চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
মানবতাবাদী সংগঠনের অনেকে বলছেন, নারী ধর্ষণ বা হত্যা আজও সমাজে সহজলভ্য হয়ে ওঠার জন্য অপরাধীদের মানবিক সচেতনতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। বিচারের ক্ষেত্রে দরিদ্র শ্রেণীর অপরাধীরা যতটা কঠিন সাজা পায়, একই অপরাধে অপরাধী সমাজের ধনী শ্রেণী গুরু পাপ লঘু দণ্ড পান। নারীকে শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্য ভাবার পেছনে সমাজ, ধর্ম কতটা দায়ী সেটাও দেখা দরকার। এই সমস্যা শুধু ভারতেই নয়,পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র।
বিশ্ব জুড়ে নারী নির্যাতনের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। রাষ্ট্রসংঘের সমীক্ষা বলছে, উন্নত ইউরোপে এক তৃতীয়াংশ নারী কোনও না কোনও ভাবে শারীরিক ও যৌন হামলার শিকার হচ্ছেন। অর্ধেকের বেশি নারী মারা যাচ্ছেন বাড়ির লোকেদের বা ঘনিষ্ট জনে দের কাছে। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষাও তাই বলছে।
সভ্যতার শুরু থেকে পুরুষ মেয়েদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে ভাবতে শিখিয়েছে। গ্রীক দার্শনিক পিথাগোরাস বলেছেন, নারীর চোখে দুধরনের অশ্রু থাকে। একটি দুঃখের, একটি ছলনার। আচার্য্য শঙ্করাচার্য বলেছেন, নারী নরকের দ্বার, ইসলাম ধর্মের নবী (স) ইবনে মাজাহ, ১৮৫৫ নং হাদিস এ বলা হয়েছে, দুনিয়া হচ্ছে সম্পদ উপভোগের বস্তু। আর পূণ্যবতী স্ত্রীর চেয়ে অধিক উত্তম সম্পদ নাই। বৌদ্ধ শাস্ত্রের ৫৩৬ নং জাতক কুণাল এ বলা হয়েছে, নারী বিষ মিশ্রিত মলভান্ডের মত দুর্গন্ধযুক্ত, বিষ মিশ্রিত মদিরার মত অনিষ্টকারী, বিষবৃক্ষের ন্যায় বিষফল প্রসবিনী।

মহাভারত দেখা যাক ভীষ্ম পর্বের ৩৩/৩২ এ যুধিষ্ঠির বলেছেন পূর্বজন্মের পাপের ফলে মানুষ পরজন্মে নারী হয়ে জন্ম নেয়। পোপ ফ্রান্সিস স্বীকার করে বলেছেন অনেক যাজক নান দের যৌনদাসী বানিয়েছে। এমন বহু নিদর্শন সব ধর্মে সমাজে নারীকে হীন হিসেবে দেখানো হয়। ছোট থেকেই পুরুষ বোঝে এক ধ্বংসাত্মক শিক্ষা। যে সমাজে দারিদ্র্য শিক্ষাহীনতা রয়ে গেছে সেখানে ফাঁসি দিয়ে কি এই সমস্যার সমাধান সম্ভব? ভোগবাদী সমাজব্যবস্থার শিকার হয়ে কিশোর পুরুষ হয়ে উঠছে নারীকে ভোগ্যপণ্য ভেবে। রাজনৈতিক নেতারা শিষ্ঠাচারের তোয়াক্কা না করে মহিলা রাজনৈতিক কর্মী বা নেতাকে কুৎসিত ভাষা তে আক্রমণ করছে জনসভাতে দাড়িয়ে। নেই সেই অন্যায়ের বিচার। মনে পড়ছে, বাংলা জনপ্রিয় সিনেমার মান্না দে র গাওয়া একটি গান “মানুষ খুন করলে পরে, মানুষই তার বিচার করে নেইতো খুনীর মাফ, তবে কেন পায় না বিচার নিহত গোলাপ”।

আলিপুর জেল থুড়ি সংশোধনাগার স্থানান্তর হয়েছে বারুইপুরে। সেখানে অপরাধীকে সংশোধন করতে গড়ে তোলা হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চ।
————————(শেষ)—————————-

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.