তুষার পাটোয়ারী : গঙ্গাসাগর, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪। গত কয়েক বছর ধরে মিলন তীর্থ গঙ্গা সাগরে সন্ধ্যা আরতির মাধ্যমে পূনার্থীদের বিশেষভাবে পূর্ণ অর্জনের যে পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে তাতে এইবার বিশেষ চমক আনা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও ১২ ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় গঙ্গাসাগর মন্দির সংলগ্ন দুই ও তিন নম্বর সমুদ্র পাটের মধ্যবর্তী স্থানে সন্ধ্যারতির আয়োজন করা হয়। সেখানে হাজির ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা সহ গঙ্গাসাগর কপিলমুনি মন্দিরের পুরোহিত গন এবং বঙ্গোপসাগরে আগত অন্যান্য সাধুসন্তরা। ইতিমধ্যে গঙ্গাসাগরে হাজির হয়েছেন ভিন রাজ্যের কয়েক হাজার পুন্যর্থী। তবে আশঙ্কাকে সত্যি করে এদিন বিকালের পর পূর্নাথীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয় হাতানিয়া দেয়ানিয়া নদীতে। ভাটা পড়তেই মাঝ সমুদ্রে আটকে যায় কয়েকটি ভেসেল। সমস্যায় পড়েন ভিন রাজ্য থেকে আগত তীর্থযাত্রীরা।
তবে জোয়ার আসার পর সেই ভেসেল আবার লট এইট থেকে কচুবেড়িয়া আসে। যদিও কচুবেড়িয়া থেকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা তৈরি হয়নি। পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা থাকার কারণে এখন সহজেই পূর্নাথীরা গঙ্গাসাগরে আসছেন। বহুজনদের দেখা গেছে শুক্রবার গঙ্গা স্নান সেরে কপিলমুনি মন্দিরে পূজো দিয়ে আবার ফিরেও যাচ্ছেন। কয়েকজন পূর্নার্থীর অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। তাদের দ্রুত কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে। বিহার থেকে আগত ৫৫ বছর বয়সি এক পূর্নার্থী এদিন গঙ্গাসাগরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আসার পর তিনি অসুস্থতা অনুভব করেন। তাকে দ্রুত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এর মাধ্যমে কলকাতার এমার বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরো এক তীর্থযাত্রীর অসুস্থ হওয়ার খবর মিলেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলা থানার অন্তর্গত দুর্গাপুরে বাসিন্দা স্বপ্না মুখার্জি অসুস্থতা বোধ করলে তাকে এ আর অ্যাম্বুলেন্স এর মাধ্যমে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য। প্রতিবছরের মত গঙ্গাসাগরে এসেছেন পুরীর শংকরাচার্য। তাকে সসম্মানে নির্দিষ্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে লট এইট থেকে কচুবেড়িয়ায় আনা হয় এবং সেখান থেকে নিজস্ব ভক্তদের নিয়ে তিনি গঙ্গাসাগরের এক নম্বর রাস্তার টেন্টে চলে আসেন । গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হয়েছে এবার। ভারত সেবাশ্রম সংঘ, ইসকন, সহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তা ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলায় আরও উন্নত পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।
গোটা মেলার দায়িত্বে থাকা রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা এদিন সন্ধ্যায় জানান এবছর গঙ্গাসাগর মেলায় সমস্ত ধরনের পরিষেবা বজায় রয়েছে আরো বেশি পূর্নার্থী এখানে আসবেন যারা স্নান করে শান্তিপূর্ণভাবে এখান থেকে ফিরে যেতে পারবেন। মকর সংক্রান্তির দিন অর্থাৎ রবিবার ভোর থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কয়েক লক্ষ পূর্নার্থী এখানে আসবেন। তাদের কোনরকম অসুবিধা হবে না। যাতে তারা শান্তিপূর্ণভাবে গঙ্গা স্নান সেরে পুন্যতীর্থ এ এসে কপিলমুনি মন্দিরে পূজো দিয়ে আবার যাতে কোন রূপ অসুবিধা ছাড়া কচুবেড়িয়া থেকে লট এইটে ফিরে কলকাতার দিকে রওনা হতে পারেন তার জন্য সমস্ত পরিষেবা বজায় রয়েছে। অতিরিক্ত বাস এবং ভেসেল পরিষেবা রয়েছে। তিনি তীর্থযাত্রীদের কাছে আবেদন করেন প্রশাসনের যে সমস্ত গাইড লাইন রয়েছে সেগুলি মেনে চললে রাস্তায় এবং কচুবেড়িয়ার নদীপথে যে ভেসেলের সামান্য সমস্যা রয়েছে সেগুলোর মুখেও পড়তে হবে না অর্থাৎ যখন ভাটার সময় হয় তখন কিছু পরিষেবা বন্ধ থাকে তখন যাতে যাত্রীরা কচুবেড়িয়ায় গিয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়তে না হয় তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তাদের থাকাও খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে তারা যেন সেখানেই থেকে যান আবার প্রশাসনের নির্দেশ এলে নির্দিষ্ট বাসে তারা যেন কচুবেড়িয়া যান এবং সেখান থেকে আবার কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেন। এছাড়াও সাগরের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে যাত্রীদের কোন অসুবিধা এখানে হবে না। দেশ ও দশের মিলনতীর্থ গঙ্গা সাগরে গোটা ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের মানুষকে স্বাগত জানিয়েছেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। জিভিডিএ’ র পক্ষ থেকে সমস্ত পরিষেবা আরো উন্নত করা হয়েছে বিগত বছর গুলির থেকেও। এলাকার সৌন্দর্যায়ন রাস্তাঘাট এবং কপিলমুনি মন্দির সংলগ্ন এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে জিবিডিএ’র পক্ষ থেকে। এছাড়াও সাগর পঞ্চায়েত সমিতি, এবং স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে গঙ্গাসাগরের সমস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সাজিয়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারেও গঙ্গারতিতে হাজির ছিলেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা সহ প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকরা।
তিনি বলেন উন্নত পরিষেবার মাধ্যমে এবারের গঙ্গাসাগর মেলায় কয়েক লক্ষ পূর্নার্থী আসবেন তাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। তাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা কলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় বিশেষ নজর রেখেছে। সবাইকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
Be First to Comment