—————–স্বাস্থ্য গুনে ভরপুর দৈ—————- মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ১৩মে২০২০। সারা বছর ধরেই আমাদের কাছে দৈ অত্যন্ত প্রিয় খাবার। বিশেষত, গরমকালে দৈ এর ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। খাদ্য গুনে ভরপুর দৈ পুরাকালে র মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। পূজা র উপকরণ শুধু নয়, মানুষের হজম প্রক্রিয়া কে সঠিক রাখতে দৈ অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে, মিষ্টি দৈ এর স্বাদ ছাড়া কোনো বিশেষ গুন নেই। যীশু খ্রীষ্টের জন্মেরও দশ বছর আগে ও দুধকে ফারমেন্টেশন দ্বারা দৈ করা হতো। পুরাণে দধি মন্থন করে মাখন তৈরি র উল্লেখ আছে। দৈ আ্যন্টি বায়োটিক হিসাবে শরীরে রোগপ্রতিরোধ এ সাহায্য করে। এইপ্রকার আলোচনা ১৭০০থেকে ১৮০০সালেও হয়েছে। আবার, ১৯০০ সালে ইউরোপ দৈ কে প্রো বায়োটিক ফুড বলে ঘোষণা করেছে।
প্রো বায়োটিক খাদ্য হল শরীরের উপকারী জৈব। অর্থাৎ, প্রো বায়োটিক খাদ্যের ব্যাকটেরিয়া শরীর ধর্মী, যেমন…. ল্যাকটোব্যাসিলাস, লিউকোলস্টক, স্টেপটোকক্কাস ইত্যাদি। এই সবকিছু দৈ এর মধ্যে থাকে। বিশ্ব জুড়ে দৈ এর যে সাজা ব্যবহার হয়, সেটি আসলে কয়েকটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া র সমন্বয়, এগুলো কেই প্রোবায়োটিক বলে, যা আমাদের শরীরে আন্টিবায়োটিকের কাজ করে। এখন প্রশ্ন কেন দৈ মানব শরীরের পক্ষে প্রয়োজনীয়? তাহলে, ১০০গ্ৰাম দৈ এর পুষ্টি গুনে র একটা হিসাব দেওয়া যাক। প্রোটিন-৩.১গ্ৰাম, ফ্যাট-৪.১ গ্রাম, শর্করা-৩.০গ্ৰাম, ক্যালরি-৬০গ্ৰাম, ক্যালসিয়াম-১৪৯মি.গ্ৰাম, ফসফরাস-৯৩মি.গ্ৰাম, ভিটামিন এ-১০২ মি. গ্ৰাম, ভিটামিন বিটু-০.১৩মি.গ্ৰাম, ভিটামিন-সি০.১১ মি গ্ৰাম।
দৈ এর উপকারিতা: মানবদেহের রক্তসঞ্চালনে ও সমস্ত নার্ভকে সতেজ রাখে, রক্তে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কে জমতে সাহায্যকারী উপাদান গুলিকে ধ্বংস করে দৈ, হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে, গরম কালে, শরীরকে ঠান্ডা রেখে সানস্ট্রোক কমাতে দৈ ও ভাত মেখে খাওয়া ভালো।
আসলে দৈ এর মধ্যে তাপ বিরোধী উপাদান থাকে বলে, দৈ ভাত শরীর ঠান্ডা রাখে। আ্যন্টি অক্সিডেন্ট পূর্ণ দৈ খাওয়া অভ্যাস করলে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা র উন্নতি হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারিত খাদ্য দৈ। সারা দিনের কাজের আগে একবাটি দৈ খেলে প্রচুর এনার্জি শরীরে জমা হয়। দুধের তুলনায় দৈ তে বেশী পরিমাণ ল্যাকটোব্যাসিলাস থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষ উপকার হয়। দুধের তুলনায় দৈ তে বেশী মাত্রায় ভিটামিন -বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়, ফলে ফলিক আ্যসিড বেশী থাকে, শরীরে তার চাহিদা মিটিয়ে দেয়। যারা নিয়মত ভাবে আ্যসিডিটিতে আক্রান্ত থাকেন, তারা প্রতি দিন এক বাটি টক দৈ খান, সমস্যার সমাধান হবে ই।
সাথে অন্য খাবার ও সহজ পাচ্য হবে। কনষ্টিপেশন, পেটের সমস্যা র সমাধান করতে টক দৈ অনবদ্য। তবে, মনে রাখবেন, দোকান থেকে আমরা যে জমাট বাঁধা মিষ্টি দৈ খাই, তা অত্যন্ত সুস্বাদু, কিন্তু এতে ডালদা ও রং মেশানো থাকে, তাতে রক্তে লিপিড ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই প্রতি দিন ঘরে পাতা দৈ খাওয়া অভ্যাস করুন ,তার সাথে গলা ভেজাতে দৈ এর ঘোল জমে যাবে গরমের দিনগুলো তে।
Be First to Comment