————-শুভ জন্মদিন ব্রায়ান লারা————
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, যে বয়সে একটা ছেলেকে মা-বাবা নিজ হাতে স্কুলে নিয়ে যায়, সে বয়সে ছেলেটা কি না ভর্তি হলো ক্রিকেট শেখার কোচিংয়ে। সবার আদরের ‘প্রিন্সি’ বাবা আর বড় বোনের হাত ধরে মাত্র ছয় বছর বয়সে ভর্তি হলেন স্থানীয় এক ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেখান থেকে ক্রিকেট টেকনিকের দীক্ষা শুরু। ছোটবেলায় পারদর্শী ছিলেন জুনিয়র সকার আর টেবিল টেনিসেও। কিন্তু তিনি যে বাইশ গজের হিরো হবেন, তাই তার ভালোবাসার সবটুকু জুড়ে ছিল ক্রিকেট। লারার প্রথম স্কুল ছিল সেন্ট জোসেফ রোমান ক্যাথলিক প্রাইমারি স্কুল। এরপর তাকে সান-জুয়ান সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল।ক্রিকেটের নায়ক হয়ে ওঠার সত্যিকারের শুরুটা হয়েছিল পোর্ট অব স্পেনের ফাতিমা কলেজে ভর্তির মাধ্যমে। বয়স তখন সবে চৌদ্দ। সেখান থেকেই কোচ হ্যারি রামদাসের অধীনে লারার নায়ক হয়ে ওঠার প্রথম সিঁড়িতে পদার্পণ। ইন্টার স্কুল কম্পিটিশন টুর্নামেন্টে ১২৬.১৬ গড়ে ৭২৪ রান করে জায়গা পান ত্রিনিদাদের অনূর্ধ্ব-১৬ দলে। এক বছর পর লারার বয়স যখন পনের, তিনি ডাক পান ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।
১৯৮৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে ৪৯৮ রানের ইনিংসের মাধ্যমে কার্ল হুপারের ৪৮০ রানের রেকর্ড ভাঙেন লারা। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে লারার অভিষেক, প্রতিপক্ষ ছিল লিওয়ার্ড আইল্যান্ড। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বার্বাডোসের বিপক্ষে ৩০০ মিনিট ক্রিজে থেকে খেলেন ৯২ রানের এক ম্যারাথন ইনিংস। প্রতিপক্ষের বোলিং লাইনআপে ছিলেন নব্বই দশকের বিধ্বংসী বোলার, দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি ম্যালকম মার্শাল আর জোয়েল গার্নার। ওই বছরই ভারত অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে খেলেন ১৮২ রানের আরেকটি দুদান্ত ইনিংস। ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অধিনায়ক। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো ডাক পান ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলে। ১৯৯০ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন লারা। একই বছর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের উপস্থিতি জানান দেন লারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ন্যাশনাল স্টেডিয়াম, করাচিতে ওয়ানডে অভিষেক হয় লারার। ওয়াকার ইউনিসের বলে আউট হওয়ার আগে করেন মাত্র ১১ রান।
জানুয়ারি, ১৯৯৩। নিজের পঞ্চম টেস্টে গিয়ে সেঞ্চুরি পান রেকর্ডের বরপুত্র ব্রায়ান লারা। বড় বড় ইনিংস খেলা যার অভ্যাস, তার কি আর ছোট সেঞ্চুরিতে তৃপ্তি আসে? তার আসেনি। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মহাকাব্যিক ২৭৭ রানের ইনিংস দিয়ে সেঞ্চুরির জাদুর বাক্স খোলেন লারা। ক্যারিয়ার জীবন্ত করা আর রঙিন হয়ে ওঠার পথে সিডনিতে করা ২৭৭ রানের ইনিংসটির স্মরণেই হয়তো লারা নিজের মেয়ের নাম রাখেন ‘সিডনি’। রেকর্ড ভাঙা-গড়াটাকে নিয়মিত অভ্যাস বানিয়ে ফেলা লারা পরের বছর আরও বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৭৫ রানের একটা ইনিংস খেলে স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্সের ২৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি। ১৯৯৪ সালে ইংলিশ কাউন্টি দল উস্টারশায়ারের হয়ে ডারহামের বিপক্ষে অ্যাজবাস্টনে লারা খেললেন ৫০১ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস, যেটি এখনও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ম্যাথু হেইডেন ৩৭৫ রানের রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার পর ২০০৪ সালে আবারও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০০ রানের ইনিংস খেলে হারানো রেকর্ড পুনরুদ্ধার করেন লারা। এ অমর ইনিংসটির মধ্য দিয়ে তিনি দুটি ৩৫০+ রানের ইনিংস খেলা একমাত্র ব্যাটসম্যান হয়ে যান।অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোরের মালিকও লারা (৪০০*)। এ ইনিংস দিয়েই পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন বছরে ১,০০০ টেস্ট রান করার বিরল রেকর্ডের মালিক হন লারা। ইনিংস বিবেচনায় দ্রুততম ১০ ও ১১ হাজার রান করার রেকর্ড লারার। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ২০০৭ বিশ্বকাপ চলছে তখন। লারা ঘোষণা দিলেন, বর্ণিল ক্যারিয়ারের সমাপ্তিরেখা টানবেন। কারো আর বুঝতে বাকি রইলো না, ২১ এপ্রিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটাই হতে যাচ্ছে এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির শেষ ম্যাচ। গুরুত্বহীন ম্যাচটায় হঠাৎ সবার চোখ আটকে গেল, ক্যারিবিয়ান রাজপুত্রের বিদায় বলে কথা!
নিজের শেষ ম্যাচে ১৮ রানে আউট হন ‘ত্রিনিদাদের প্রিন্স’।
ব্রায়ান (চার্লস) লারা ১৯৬৯ সালের আজকের দিনে (২ মে) ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট প্রদেশ কান্তারোয় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment