Press "Enter" to skip to content

পল রোবসনের কন্ঠে ছিলো কালো মানুষের মুক্তির কথা, তিনি ২০টি ভাষা জানতেন, মার্কিন সরকার ১৯৫০ সালে তাঁর পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়…….

Spread the love

বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, মানবদরদী গানের জন্য তিনি যতটা খ্যাত, জীবদ্দশায় তিনি তার চেয়েও বেশী সুপরিচিত ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অস্থির সময়গুলোতে এই মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক মার্কিন মুল্লুকের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন। কারণ তাঁর কন্ঠে ছিলো কালো মানুষের মুক্তির কথা, উপনিবেশ উচ্ছেদের কথা, মানবাধিকারের কথা। তিনি পল রোবসন। পল রোবসনের পিতা শৈশবে একজন ক্রীতদাস ছিলেন, পরে চার্চের পাদ্রী হন। এক বোন ও তিন ভাইয়ের একজন পল রোবসন স্কুল জীবনেই পড়ালেখার সাথে সাথে খেলাধুলা, অভিনয় এবং গান গাওয়াতে ছিলেন সহপাঠীদের থেকে এগিয়ে। একই ঘটনা ঘটে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও। ১৯২০-২৩ সালে তিনি আইন পড়েন কলম্বিয়া ল স্কুলে। এ-সময়ে তিনি একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। রোবসন ১৯৩৮ সালে University of London এর School of Oriental and African Studies থেকে ডিগ্রী নেন। বলা হয় যে তিনি ২০টি ভাষা জানতেন এবং ১২টি ভাষায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত আর বাস্তবেও আমরা তাঁর কন্ঠে চীনা, রুশ, ইংলিশ বা জার্মান ভাষার গান পেয়েছি। তিনি বাংলা জানলে হয়তো এই গানের ছায়া অবলম্বনে Old Man River গানটি বাংলায় গাইতেন। অবশ্য ভূপেন হাজারিকা সে অভাবটি পূরণ করেছেন তাঁর ‘বিস্তীর্ণ দু’পারে অসংখ্য মানুষের হাহাকার’-এর মাধ্যমে।

১৯২৫-১৯৪২ এই সময়ে পল রোবসন ১২টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর মার্কিন Show Boat (১৯৩৬) বা বিলেতি Song of Freedom (১৯৩৮) ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তবে শুধু গান ও অভিনয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলে নিঃসন্দেহে পল রোবসনের জীবনে চলার পথটি এতোটা বিপদসংকুল হতো না— যদি না তিনি কয়লা শ্রমিকদের পক্ষে কথা না বলতেন, দেশের গৃহযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা না রাখতেন, কালোদের অধিকার আদায়ে The Councion African Affair গঠন না করতেন, যদি না তিনি হো চি মিন-এর পত্রিকায় না লিখতেন অথবা কোনো ইউনিয়ন বা শ্রমিকদের আন্দোলনের সাথে যুক্ত না হতেন। বিভিন্ন দেশে পল রোবসনের জনপ্রিয়তা এতোটাই বেড়েছিলো যে, মার্কিন সরকার ১৯৫০ সালে তাঁর পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয় এবং ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত এফবিআই-এর কড়া নজরদারীতে দেশে অন্তরীণ রাখে। বলা যায়, আমেরিকার ইতিহাসে গান-বাজনা আর বিনোদনের সাথে যুক্ত আর কোন ব্যক্তির ওপর এমন নজরদারি পল রবসন ছাড়া অন্য কোন গায়ক-শিল্পীর ভাগ্যে এ-যাবৎ জোটেনি। রাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘদিন মামলা চালানোর পর ১৯৫৮ সালে পাসপোর্ট হাতে পেয়েই তিনি পুনরায় ইউরোপ অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়া সফরে বেরিয়ে পড়েন— যতটা গান গাওয়ার জন্য ততটাই রাজনৈতিক আন্দোলন সংঘবদ্ধ করার জন্য।

১৯৬১ সালে পল রোবসন মস্কোর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ধারণা করা হয় যে কেউ পানপাত্রে হেলুসিনেসন উৎপাদী দ্রব্য মেশায়— যা পরে তাঁর রক্ত পরীক্ষায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে লন্ডনের The Priory হাসপাতালে, যেখানে তাকে ৫৪ দফা শক-থেরাপী দেওয়া হয়। অবশেষে পূর্ব-বার্লিনের একটা হাসপাতালে তিনি খানিকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং ১৯৬৩ সালে দেশে ফেরেন। তবে বাকী জীবনে তিনি আর সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেননি।

১৯৭৬ সালের ২৩ জানুয়ারি পল রোবসন হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন।

পল রোবসন ১৮৯৮ সালের ৯ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.