নিগমানন্দ ঠাকুর: কলকাতা, ২১মে ২০২০। মহামারী করোনা ভাইরাসকে আটকাতে রাজ্য তথা দেশের সব মানুষই এখন গৃহবন্দী। এই অবস্থায় থাকার প্রথম কয়েকদিন মানুষ শুয়ে, বসে, খবরের কাগজ পড়ে, টিভি দেখে কাটালেও এখন অনেকেই যে যার মতো করে শিল্প চর্চায় মন দিয়েছেন।
কেউ গান, কবিতা, গল্প লিখছেন । কেউ খুব যত্ন সহকারে শরীর চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার বহু বছর পর ধুলো ঝেড়ে বসে পড়েছেন হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার নিয়ে।
এই রকমই একজন শিল্পী মানুষ পঞ্চানন সেনগুপ্ত। প্রায় পনের বছর পর আবার হাতে তুলে নিলেন রং-তুলি এবং একটি নখ কাটা নরুণ। আদতে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহরের নিমতলার স্থায়ী বাসিন্দা পঞ্চাননবাবু কর্মসূত্রে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
বর্তমানে তিনি একটি বৃহৎ স্টিল ও সিমেন্ট উৎপাদক সংস্থায় জেনারেল ম্যানেজার (সিভিল) পদে কর্মরত। এই শিল্পী মানুষটি এখন ছেলের পড়াশোনা’র কারণে বসবাস করছেন কলকাতায়। সেখানেই গৃহবন্দী হয়ে ক্যানভাসের উপর একের পর এক ফুটিয়ে তুলছেন তাঁর শিল্পকর্ম। একই সঙ্গে শুধু মাত্র একটি নরুণের সাহায্যে সাবানের উপর ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষী-নারায়ণ, গনেশে”র অপূর্ব মূর্তি, যা ইতিমধ্যেই সকলের কাছে প্রসংশা পেতে শুরু করেছে।
তাঁর এই শিল্পকর্ম আজকের নয়, শুরু হয় বহু বছর পূর্বেই। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় অর্থাৎ এগার বছর বয়সেই তাঁর এই শিল্পকর্মের হাতেখড়ি। বিগত দিনে তিনি স্থানীয় ও জেলা স্তরে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করে প্রচুর সুনামও কুড়িয়েছেন এবং বেশ কিছুদিন তিনি স্থানীয় ন্যাশনাল ক্লাব-এর সদস্য-সদস্যা’দের রং-তুলি ধরতেও শিখিয়েছেন।
একসময়ে প্রচণ্ড আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে জীবন কাটালেও কোনদিনই এই শিল্পকর্মকে নিজের পেশা হিসাবে তিনি নেন নি। কর্মজীবনে প্রবেশ করেও অবসর সময়ে চালিয়ে যেতেন তাঁর শিল্পকর্ম, কিন্তু পরবর্তী সময়ে কর্মস্থলে পদোন্নতি ও সাংসারিক চাপে রং-তুলি ও নরুণের থেকে নিজেকে তিনি দূরে সরিয়ে রাখতে বাধ্য হন।
সেই শিল্পী পঞ্চানন সেনগুপ্ত গৃহবন্দী অবস্থায় নিজের অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে আবার ফিরে পেলেন তাঁর শিল্পী স্বত্বা ও শিল্পী জীবন। কর্মস্থলের বিশাল দ্বায়িত্বের জন্য তাঁর মন সেখানে পড়ে থাকলেও গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় তিনি যে তাঁর শিল্পী জীবন ফিরে পেয়েছেন এতেই খুশী পঞ্চাননবাবু।
Be First to Comment