—-নববর্ষের বইপাড়া এবার শুধুই অন্ধকারে—-
ভাস্কর ভট্টাচার্য/গোপাল দেবনাথ, কলকাতা, ১৩ এপ্রিল ২০২০। কথায় বলে হাতে পাঁজি মঙ্গলবার। এর রূপক অর্থ মনে হয় বলে দিতে হবে না। আগামীকাল বাংলা নববর্ষ। করোনার দোষে দুষ্ট হয়ে বাঙালি জীবনে প্রবেশ করবে একটি নতুন বছর। এবার ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ প্রায় নির্জলা উপবাসের মতো নববর্ষের দিনটি কাটাবেন। আনন্দ বাধা প্রতি পদে।
নববর্ষে এ বার সব ব্যবসারই কালাশৌচ যেন। ব্যবসায়ীদের হিসাবের খাতা ইংরেজি মতে চললেও বাঙালির নববর্ষ ও হালখাতা এক অনন্য জিনিস। বিশেষ করে স্বর্ণ ও পুস্তক ব্যবসায়ীদের কাছে। কালীঘাট থেকে বেলুড় মঠে এবারে আর ভক্তসমাগম হবে না-ই হয়তো।
গণেশ সাধনায় বাঙালির বিত্ত লাভ এবার অন্ধকারে। নববর্ষের বই পাড়াও এবার শুধুই অন্ধকার। বাঙালি লেখক প্রকাশকের কাছে এক পরম মিলনের দিন। নতুন বই প্রকাশের দিন। মধুর সম্পর্ক বিনিময়ের মাস বৈশাখ।
প্রকাশকের ঘরে ঘরে লেখকদের নতুন বইয়ের প্রকাশ কে ঘিরে গোটা কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় প্রকাশকের ঘরে ঘরে নামীদামি লেখকের পাশাপাশি নবীন লেখকের আত্মপ্রকাশের এক মহা লগ্ন বাঙালির নববর্ষ।
কলেজ স্ট্রিটের বাইরেও বহু প্রকাশনা সংস্থায় মহা ধুমধামের সাথে নতুন বই প্রকাশ ও ঢালাও মিষ্টি মুখের আয়োজন করে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম দেব সাহিত্য কুটির। প্রতি বছর ওই সংস্থার অফিসে বহু লেখকের সমাগম হয় তার সাথে নতুন বই প্রকাশ।
এই সংস্থার অন্যতম কর্ণধার, নব কল্লোল ও শুকতারা ম্যাগাজিনের সম্পাদিকা রুপা মজুমদার হতাশ কণ্ঠে জানালেন তাদের ও মন খুবই খারাপ।
এই দিনে লেখকদের সাথে সাধারণ পাঠকদের মুখোমুখি আলাপচারিতার সুযোগ হয়। কিন্তু কি আর করা যাবে নিয়ম তো মানতেই হবে।
এবার সে সব থেকেই বঞ্চিত গোটা বিশ্বের সঙ্গে বই পাড়াও। বাংলা বইয়ের নববর্ষের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বই প্রকাশিত হবে না। বাংলা প্রকাশনের ইতিহাসে প্রথম।
বিষাদের সুর প্রকাশকের কণ্ঠেও। দে’জ এর সুধাংশু শেখর দে র সঙ্গে পরিচয়ের তিন দশকে এমন বিষণ্ণ দেখিনি। বললেন, কী আর করা সবই মেনে নিতে হবে। কলেজ স্কোয়ারে কয়েক বছর আগে চালু করছিলেন নববর্ষ বইমেলা। এবার সেখানেও করোনার থাবা!
পাঁজি দিয়ে শুরু করেছিলাম, পাঁজির দুর্দশা দিয়ে শেষ করব। পাঁজি সবার মঙ্গল অমঙ্গলের বার্তা বহন করে। শুভ দিনে লাউ ভক্ষণ থেকে পরিণয় মঙ্গলের বার্তাবহু। এই নববর্ষের দিন থেকেই শুরু হয় গণনা।
যদিও অনেক আগে থেকেই বাজারে চলে আসে। ট্রেনে বাসে বিমানে বিভিন্ন প্রকাশকের পাঁজি পাড়ি দেয় দেশবিদেশের ঘরে ঘরে। এবার বিশাল ক্ষতির মুখে পাঁজিওয়ালারাও। সব দিন পেরিয়ে গেল যে কে আর পাঁজি ঘরে নিয়ে যাবে।
লক্ষ কোটি ক্ষতি। সব মিলিয়ে এক বিশাল ক্ষতির মুখে বাঙালির বই পাড়া। বাঙালির নববর্ষ। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কথা না -ই বললাম।
পাঁজি কি কিছু আগাম বার্তা দিয়েছিল?
Be First to Comment