পিন্টু মাইতি : কলকাতা, ১৫ মে ২০২০। সরকারি সাহায্য ছাড়াই যে সমস্ত ক্লাব-সংগঠন লকডাউনের তিনটি পর্বেই খাদ্যের যোগান দিয়ে চলেছে, তার মধ্যে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত আলমবাজার নবজ্যোতি সংঘ অন্যতম একটি সংগঠন। সুষম খাদ্যের ভান্ডারকে একটি সুসংহত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র শ্রেণীর মানুষকে যে সেশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রেখে তুলে দেওয়া দেওয়া যায়, সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করল আলমবাজার নবজ্যোতি সংঘ। ১৪ই মে সন্ধ্যায় অভিনব “বিনামূল্যে বাজার পরিষেবা “ পরিচালনার মাধ্যমে মাথার তেল, দাঁতের মাজন থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য প্রসাধনী ও সুষম খাদ্যদ্রব্য তুলে দেওয়া হল স্থানীয় আড়াইশো দরিদ্র মানুষের হাতে। উপস্থিত ছিলেন দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সৌগত রায়, বাংলা ফুটবল দলের কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য, বরানগর পুরসভার উপ পুরপ্রধান জয়ন্ত রায় প্রমুখেরা। সাংসদ নিজ হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দিয়ে শিবির পরিদর্শন করে উক্ত অভিনব ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ক্লাব সম্পাদক পুলক ঘোষের নেতৃত্বে নবজ্যোতি সংঘ লকডাউনের সময়গুলিতে শুকনো এবং রান্না করা খাবার ত্রাণ হিসেবে বিলি করে এসেছে। কিন্তু বাজার পরিষেবার মাধ্যমে নতুন কৌশলে মানুষকে যে নিরাপদে ত্রাণ দেওয়া যায়, সেটা এই সংগঠন করে দেখাল। তিনি জানান, সাংসদ হিসেবে তাঁর নৈতিক দায়িত্ব মানুষের পাশে থাকার। নিজের শারীরিক অবস্থাকে কোনমতে রক্ষা করে লকডাউন দুর্গতদের ত্রাণ বিলি কর্মসূচীতে যেতে পেরে তিনি মমতা ব্যানার্জীকে অনুপ্রেরণা হিসেবে মানেন।
যে মানুষটির অক্লান্ত পরিশ্রমে এই শিবির অনুষ্ঠিত হয় তার অন্যতম রূপকার বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা ক্লাবের সম্পাদক পুলক ঘোষ বলেন, বিগত বছরগুলোতে তাঁরা যেভাবে মানুষের দুর্দিনে পাশে থেকে সহায়তা করেছেন, সেই তাগিদ থেকেই অভিনব বিনামূল্যে বাজার পরিষেবার আয়োজন করা। “প্যাকেজড ফুড”- এর অন্তর্গত কুড়ি ধরনের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে একটি যে নজির তাঁরা স্থাপন করেছেন, তা অন্য সংগঠন গুলোর কাছে উদাহরণ হিসেবে থাকবে। করোনা নিয়ে রাজনীতির জল সামান্য হলেও গড়াচ্ছে। কিন্তু যারা এই মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সামঞ্জস্য বিধান করার কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁরা এই ঘৃণ্য রাজনীতির আবহে তিতিবিরক্ত। বিশিষ্ট উদ্বাস্তু নেতা তথা সংগঠক গণপতি মজুমদার বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছু বিজেপি নেতা আলটপকা মন্তব্য করে নিজেদের ওজন হ্রাস করে ফেলেছেন। রাজ্যপালের ভূমিকাতেও তারা সন্তুষ্ট নন। যখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা, সে সময় রাহুল সিনহা, দিলীপ ঘোষের মত বিজেপির নীচু দরের নেতারা রাজনীতি করে লকডাউনের পরিবেশকে কলুষিত করেছে। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। এদিন প্রত্যেক প্রাপককে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড় করিয়ে হাতে স্যানিটাইজার প্রয়োগ করার পর বাজারে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেই সাথে ছিল থার্মাল গান দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার সুবিধাও। ফুটবল কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য নিয়মিত শরীরচর্চা ও প্রোটিন জাতীয় খাদ্যগ্রহনের মধ্যে দিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতাকে বৃদ্ধির পরামর্শ দেন, সেই সাথে ক্লাবের এ জাতীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
ক্লাবের প্রত্যেকটি সদস্য নিষ্ঠার সাথে তাঁদের মানবিক মুখগুলোকে আরো একবার উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন পুলক ঘোষের আন্তরিক সাহচর্যে। আগামী দিনে লকডাউনের পরিস্থিতি তৈরি হলে নবজ্যোতি সংঘ এই সমস্ত মানুষের পরিষেবা দিতে প্রস্তুত আছে বলে সম্পাদক পুলক ঘোষ জানিয়েছেন।
ছবি: সুবল সাহা
Be First to Comment