Press "Enter" to skip to content

দ্য বেঙ্গল চেম্বার আয়োজিত ‘‌ভারতে কোভিড–১৯–এর প্রভাব এবং সেই সমস্যা কাটানো:‌ একটি আর্থিক পরিমাপ’‌ শীর্ষক ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু………

Spread the love

নিউজ স্টারডম: কলকাতা,১৪ মে ২০২০, দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে কোভিড–১৯। তবে এর মাঝে ভারতের জন্য আশার আলোও দেখছেন বিশেষজ্ঞরা, বিশেষ করে উৎপাদন শিল্পে। বিশ্বের খাদ্যশৃঙ্খলে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। এবং সেইসঙ্গে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠতে পারে। এই আবহে দ্য বেঙ্গল চেম্বার ‘‌ভারতে কোভিড–১৯–এর প্রভাব এবং সেই সমস্যা কাটানো:‌ একটি আর্থিক পরিমাপ’‌ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছিল গত১৩ মে।ওয়েবিনার আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য, দেশের আর্থিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশিষ্টদের মতামত জানা। করোনা–ধাক্কা সামলে কী করে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করা যায়, তা জানার চেষ্টা। করোনার জন্য বিশ্বের বাণিজ্য–ছবি বদলে যাবে। সরকারকে এ ব্যাপারে সুপারিশ এবং নীল নকসা দেওয়ার দরকার। যাতে আর্থিক বিভিন্ন বিষয়ে সমাধানের রাস্তা খোলে। সভা সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন অর্থনীতিবিদ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, দ্য বেঙ্গল চেম্বারের আর্থিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ড.‌ অজিতাভ রায়চৌধুরি। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, কর্নেল ইউনিভার্সিটির কার্ল মার্কস প্রফেসর অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ, ভারত সরকারের প্রাক্তন প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা ড.‌ কৌশিক বসু বলেন, ‘‌ভারতের আমলারা তাঁদের কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তাঁরা নিজেদের কাজ খুব ভাল ভাবে করেন, নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন। আমাদের এটা কাজে লাগাতে হবে এবং একটা প্যাকেজ ঘোষণ করতে হবে। আমরা একটা বড়সড় বিপর্যয় মোকাবিলা করছি। আর্থিক ভাবে দুঃস্থ মানুষকে সুরাহা দিতে খাবার, ওষুধ কেন্দ্রীয় ভাবে সরাসরি পৌঁছে দিতে হবে। এদেশে প্রচুর অসাম্য রয়েছে। আমাদের এমন একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেখানে বিত্তবানেরা আরও বেশি করে আয়কর, স্বাস্থ্যকর দেবেন। আর যা গরিব মানুষের উপকারে কাজে লাগাতে হবে। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পকে কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি ভাল সিদ্ধান্ত। তবে কর্পোরেশনগুলিকে উৎপাদন এবং লাভ করার সুযোগ দিতে হবে। অদৃশ্য হস্তের তত্ত্বকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সরকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। ওপর থেকে নিচে আসা নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি বড়সড় সমস্যার। কর ব্যবস্থা, গরিবরদের সুযোগসুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিশ্বের বড় বড় শিল্প সংস্থা আমাদের দেশ নিয়ে চিন্তিত। মার্চে ১৬ বিলিয়ন ডলারের পুঁজি এদেশ থেকে চলে গিয়েছে। যা একটা বাজারের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় নির্গমন। গত দু’‌বছরে ভারতে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অতিমন্দা দেখা দিয়েছে। তবে ব্যবসা করার সুযোগ ভাল ছিল। তাই ব্যবসা করা সহজ হয়েছে। অনেক বহুজাতিক সংস্থা এ দেশ ছেড়ে ভিন দেশে পাড়ি দিচ্ছে। আমাদের সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। এমন সংস্কার দরকার যা আমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করবে।’‌ আইএসআই–এর অর্থনীতির অধ্যাপক, রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার বলেন, ‘‌ধাপে ধাপে লকডাউন তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। থমকে থাকা আর্থিক কাজকর্ম শুরু করতেই হবে। উৎপাদন শুরু করতেই হবে। সরবরাহকারীদের ভর্তুকি এবং সহায়তা দিতে হবে। ছোট উদ্যোগপতিদের জন্য কাজ শুরু করা বেশ অসুবিধার হবে। কারণ নিয়মিত আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাদের বেশিরভাগকে ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঋণ, তার সুদ মেটাতে হবে। তাই সরকারের দরকার সরল সুদে ঋণের ব্যবস্থা করার। তেমন প্রয়োজন হলে ঋণ মকুবের কথাও ভাবতে হবে। মানুষকে কাজে যেতে হবে। তাই পরিবহণ ব্যবস্থায় ভর্তুকি এবং সাহায্য দিতে হবে। না হলে পরিবহণ ব্যবস্থা নিরাপদতর এবং সহজতর থাকবে না।’‌ ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি–র অধ্যাপক এন আর ভানুমূর্তি বলেন, ‘‌অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদন –২ থেকে –৩ পর্যন্ত যেতে পারে। তার অনেক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। চলতি অর্থবর্ষে আমরা ঋণাত্মক বৃদ্ধি দেখব। এবং সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে মূল্যবৃদ্ধিও হবে। আমরা আশা করেছিলাম, অর্থনীতির হাল সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করবে। প্রধানমন্ত্রী সে ব্যাপারে ঘোষণা করেছেন। দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা এবং জাপানের পর এটা সবথেকে বড় প্যাকেজ। আমাদের এ কথা মাথায় রাখতে হবে, বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হবে এবং সরকারের রাজস্ব কমবে। এই বিপর্যয়কে সরকারি মূলধনী ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। আর্থিক ঘাটতি থাকলেও এ কাজ করা দরকার। কারণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি প্রভাব ফেলবে।’‌ এক্জিম ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডেপুটি এম ডি এবং আইডিবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের প্রাক্তন এমডি এবং সিইও দেবাশিস মল্লিক বলেন,
‘সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রবল ধাক্কা দিয়েছে কোভিড। আমার মনে হয়, এটি আগামী দিনে আরও ধাক্কা দেবে। সরবরাহ শৃঙ্খলে আরও বড়সড় সমস্যা তৈরি হবে বলে মনে করি।

তা মোকাবিলায় বাজারে টাকার জোগান ঠিক রাখতে হবে। স্টার্ট আপের জন্য পুঁজি বরাদ্দ করতে হবে। যাতে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প নিজেদের উৎপাদন বজায় রাখতে পারে। চাহিদা, সরবরাহ এবং নগদের জোগানে ভারসাম্যে একটা সঙ্কট তৈরি হবে। মানুষের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। তাই আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেবে। যদি পৃথিবীর মূল্যায়ন–শৃঙ্খলে প্রভাব পড়ে, তবে এদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া অনেক কিছুর ওপর তার প্রভাব পড়বে। আত্মনির্ভরতার ক্ষেত্রে বলা যায়, এটা থেমে থাকবে না, এটা আরও বাড়বে। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের প্রধান অর্থনীতিবিদ সৌগত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‌আমরা যখন এই পর্যায়ে ঢুকেছি, তার আগেই আমরা দুর্বল অবস্থায় ছিলাম। ক্রেডিট, কেভিড, ক্রুড এবং এবং ভারতের জন্য বিশেষ করে কনফিডেন্স, এই চারটি সি–র ভয়ঙ্কর সঙ্গমে আমরা রয়েছি। এই চারটি বিষয় বিভিন্ন রকম ভাবে কাজ করছে। চাহিদা এবং জোগান, আর্থিক, রিয়েল এস্টেট, বিশ্ব এবং ঘরোয়া বাজারে ধাক্কা দিচ্ছে। এই সমস্যার একাধিক মাত্রা রয়েছে। এবং তাই সমস্যা সমাধানে নীতি তৈরি করতেও সমস্যা হবে। আর্থিক বৃদ্ধির হার হ্রাস নিয়ে বলা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ঠিক যেমন বলা যাচ্ছে না, কী করে সব ফের খুলবে। এটা নির্ভর করছে বিভিন্ন ক্ষেত্রের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর। যেমন অটোমোবাইল, এফএমসিজি এবং অন্যান্য আরও ক্ষেত্রের ওপর।’‌ সভায় উপস্থিত বিশিষ্টদের ধন্যবাদ জানান দ্য বেঙ্গল চেম্বারের আর্থিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এবং প্রাক্তন রাজস্ব এবং অর্থসচিব সুনীল মিত্র।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.