সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় :কলকাতা,২৪ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার মুক্তি পেলো নতুন বাংলা ছবি আমার আর্তনাদ। ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে একটি ছ বছরের মেয়ে স্কুলে শিক্ষকের কাছে ব্যাড টাচের শিকার হয়। তারপর শিশুটির পরিবার সমাজ আইন,রাজনীতির যৌথ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মানসিক ধর্ষিত হয়। তারই টুকরো টুকরো ছবি পরিচালক সুজিত সাহা তুলে ধরতে চেয়েছেন। জয়দীপ মুখার্জি ও অরিজিৎ দত্ত নিবেদিত এই ছবির চরিত্রলিপিতে আছেন – সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,মনোজ মিত্র, বিশ্বজিত চক্রবর্তী,অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়,অঞ্জনা বসু,অর্পিতা মুখার্জি,জয় সেনগুপ্ত, গায়ক অভিনেতা সিধু, সায়ন্তনী গুহ ,মানসী সিনহা এবং দুই ক্ষুদে শিল্পী ঐশী গুহঠাকুরতা ও সোনালি রায়।
অস্বীকার করার উপায় নেই স্বল্প বাজেটের ছবি করতে গিয়ে পরিচালকদের অনেক সমঝোতা করতে হয় ছবির সঙ্গে ।পাশাপাশি এটাও বুঝতে হয় কোনও সামাজিক জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে ছবি করতে হলে বিষয়টির ওপর স্বচ্ছ ধারণা তৈরি প্রয়োজন।পরিচালক সুজিত সাহা আসলে সমস্যার গভীরে ঢুকে জটিলতা বাড়াতে চাননি।ফলে আইনজীবীর চরিত্র নীলাঞ্জনা ওরফে অর্পিতা চ্যাটার্জি আর ডক্টর স্মৃতি সেন ওরফে অঞ্জনা বসুকে দিয়ে পকসো আইনের কথা ছোট করে জানিয়ে আইনের প্রসঙ্গটিকে উত্থাপন করেছেন।ছবির চরিত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে খামতি থেকে যাওয়ার অন্যতম কারণ চিত্রনাট্যের অপুষ্টি।এরই মধ্যে তিনজন আলাদা নজর কাড়েন অঞ্জনা বসু ,মনোজ মিত্র এবং পুলিশ অফিসারের চরিত্রে ইন্দ্রজিৎ মিদ্দে।
সৌমিত্র ছবির নির্যাতিত শিশুর দাদু। মেয়েটির একান্ত বন্ধু হিসেবে যাকে দেখানো হলো।অথচ নির্যাতিত হওয়ার পর সেই বিশ্বাস ও ভরসার মানুষটিকে পেলাম না।একটি শিশুর মানসিক স্থিতি নির্যাতনের পর কেমন হয় তা তুলে ধরলে দর্শক নিজেদের বিষয়টির সঙ্গে একাত্ম বোধ করতে পারতেন।
স্কুলের শিক্ষক অভিজিতের চরিত্রে চন্দ্রনিব মুখার্জি সবচেয়ে বেশি দুর্বল চিত্রনাট্যের শিকার হয়েছেন ।
বিবাহিত এক স্কুল শিক্ষক কোন মানসিকতায় এমন ঘৃণ্য কাজ করলেন তার একটা ব্যাখ্যাও দেওয়া দরকার।আমরা দেখলাম স্কুল পরিচালন কমিটির প্রভাবশালী ক্ষমতায় ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও অভিযুক্ত শিক্ষক গ্রেপ্তার হন না।বাড়িতে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছেন না মানসিক বিকৃতির শিকার হয়েছেন তা বোঝা গেলো না।পরিচালক অবশ্য বলতেই পারেন, সামাজিক সমস্যাটি তুলে ধরাই তার কাজ। বিশ্লেষণ করবেন দর্শক ।কিন্তু ছবির নামে যখন আর্তনাদের মত একটি শব্দ সংযোজিত হয়,সেখানে সমাজ , নির্যাতিত, নির্যাতিতের পরিবার ,আইন,প্রশাসন সবকিছুর একটা পারস্পরিক স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ছবির ট্রিটমেন্টে থাকা দরকার ছিল । মনোবিদরা বলেন,শিশুদের ওপর যৌন লিপ্সার কারণ অনেকগুলি।অন্যতম কারণ পিডোফেলিয়া ।
গবেষক ড: জেমস্ ক্যান্টর বলেছেন, পিডোফেলিয়া একটি যৌন প্রবণতা।বিজ্ঞানী ড: পল ফেড্রফ বলেছেন, অ্যান্টি এন্ড্রোজেন ড্রাগ ব্যবহারে এই বিকৃত কামনা রোধ সম্ভব । কিন্তু আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে অপরাধীকে সংশোধন করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার চেয়ে ফাঁসির দাবি উপযুক্ত বলে মনে করে জনগন।আর ভোটের রাজনীতিতে ভোটারদের সন্তুষ্টির জন্য কঠোর শাস্তি অনেক সহজ উপায় বলে মনে করে রাষ্ট্র। ফলে বাস্তবের ঘটনা সিনেমার পর্দায় তুলে ধরে ছবিকে যুগোপযোগী বলে তকমা দেওয়ার এক চেষ্টা কাজ করে প্রযোজক ও পরিচালকের।কিন্তু আমরা তো ভুলতে পারি না, এই বিষয়ে তপন সিংহের আদালত ও একটি মেয়ে ছবিটির কথা ।সৌমিত্রবাবু এই প্রতিবেদককে একটি সাক্ষাৎকারে একবার ঠিকই বলেছিলেন, কোয়ানটিটি বাড়লেই কোয়ালিটি থাকবে এমন কোনও মাথার দিব্যি নেই।ছবির প্রসঙ্গে ফিরে যাই।ছবির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আবহ এবং সংগীত।
সংগীত পরিচালক দেবজিত রায় সামান্য সুযোগে চেষ্টা করেছেন তার প্রয়োগ রীতি প্রদর্শনের।ক্যামেরা এবং সম্পাদনায় কোনো খামতি নেই।ছবির দুএকটি মুহূর্ত বেশ ভালো।যেখানে অঞ্জনা বসু তার কন্যাকে গল্পের ছলে ব্যাড টাচ আর গুড টাচ বোঝালেন। কোর্টরুমের দৃশ্যগুলোতে আখ মাড়াই মেশিন আর ঝালমুড়ি ওয়ালার পেঁয়াজ কাটার কাট শর্ট ব্যবহার ছবির ভাষাকে স্থাপিত করেছে।ছবির শেষ মুহূর্তে দর্শক প্রতিক্রিয়ায় দেখলাম তাঁরা কি যেন খুঁজে পেলেন না। সেদিক দিয়ে ছবির নামকরণ হতেই পারতো দর্শকদের আর্তনাদ।
Be First to Comment