সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা, ১০ এপ্রিল ২০২০ এই বছর গুড ফ্রাইডে ১০ এপ্রিল। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান। যার ব্যাপ্তি আমাদের দুর্গাপুজো বা বাসন্তী পুজোর মতো চারদিন। গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে, ইস্টার সানডে এবং ইস্টার মানডে। নিউ টেস্টামেন্ট অনুযায়ী গুড ফ্রাইডের দিনে যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। তাই এই দিনটির আর এক নাম হোলি ফ্রাইডে। গ্রেট ফ্রাইডে। অনেকে বলেন, ব্ল্যাক ফ্রাইডে। যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়া থেকে মৃত্যু ও
কবর থেকে পুনরুজ্জীবনের স্মরণে পৃথিবীর সব খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা এই সংস্কার পালন করেন।
আইজ্যাক নিউটন বাইবেলের ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ও তিথি নক্ষত্র গণনা করে সিদ্ধান্তে আসেন যিশুর মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ খ্রিস্টাব্দে। দিনটি ছিল ২৭মার্চ। আবার যিশুর শিষ্য পিটারের মতে দিনটি ছিল ৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ এপ্রিল।
ঐতিহাসিক গবেষকদের অনেকে বলেন, যিশুর ক্রুশ বিদ্ধ হওয়ার ফলে মৃত্যু হয় নি।
শুধু তাই নয়,গবেষকদের অনেকের দাবি, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ করণের যে ছবিটা জেনে এসেছি মাটির সমান্তরাল দুই হাত দুদিকে কাঠের পাটাতনে পেরেক বিদ্ধ করা। সম্ভবত এভাবে যিশুকে মারা হয়নি। এই দাবি, লিভারপুলের জন মূর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাত্তেও বোরিনির। তাঁর আবিষ্কারের সূত্র নাকি শ্রাউড অফ তুরিন। যা আসলে একটি ১৪.৩ ফুট দীর্ঘ ও ৩.৭ফুট চওড়া একটি কাপড়ের টুকরো। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস ক্রুশবিদ্ধ করার পর এই কাপড় দিয়েই মুড়ে দেওয়া হয়েছিল যিশুর দেহ। বো রিনির দাবি, কার্বন ডেটিং প্রযুক্তিতে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ দেহভঙ্গিমা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ইংরেজি অক্ষর টি নয়, বরং ইংরেজি অক্ষর ওয়া ই আকারের মত। তবেই দুহাতের রক্তের ধারা এখন যে ভাবে দেখানো হচ্ছে সেটা সম্ভব। তবে কি রাজা হেরোদের সৈনিকরা ক্রুশে চাপিয়ে সন্ধেবেলা ফিরে যায় নগরে? তখন কি যিশুর শিষ্যরা ক্রুশ থেকে নামিয়ে অ্যালোভেরা দিয়ে চিকিৎসা করে তাকে কিছুটা সুস্থ করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন? তবে যীশু কি কাশ্মীরে চলে আসেন?
১৯৮০ পর্যন্ত যিশুর সমাধি ক্ষেত্র নিয়ে একটা বিতর্ক ছিল। ১৯৮০তে জেরুজালেমের পূর্ব দিকের তালপিয়ট অঞ্চলে মেলে পাথরের সমাধি। যেখানে ১০জনের সমাধি পাওয়া যায়। পঁচিশ বছর পর ২০০৫ সালে ইজরায়েলের ভূতাত্ত্বিক আর ইয়েহ শিমরন এক বিস্ফোরক দাবি করে বলেন, এই সমাধিক্ষেত্র যিশুর পারিবারিক। ২০০৭ সালে এই সমাধিক্ষেত্র নিয়ে চিত্র পরিচালক জেমস ক্যামেরন গবেষণা শেষ হওয়ার আগেই তথ্যচিত্র বানিয়ে ফেলেন। তাই বলেন, ১০টি শবাধারের দুটির একটিতে জোসেফের সন্তান যিশু , একটিতে মেরি লেখা মিলেছে। ২০১০ এ গবেষণা শেষ হলে জানা যায়, এখানে যিশুর ভাই, যিশুর পুত্র ও যিশুর প্রেমিকা মেরি ম্যাগ ডালেনেরও সমাধি আছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া
এক সাক্ষাৎকারে শিমরন বলেন, এই ১০টি সমাধিক্ষেত্র প্রমাণ করছে যিশুর বেঁচে ওঠার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি। যিশুর এই ইস্টার পর্বের সঙ্গে ডিমের একটা সম্পর্ক আছে। কাজুবাদামের মন্ড দিয়ে রঙিন ডিম বানিয়ে খাওয়ার রীতি। ইতিহাসবিদরা বলেন, ডিম সৃষ্টি ও পুনরায় জন্মের প্রতীক। পাঁচ হাজার বছর আগে সুমেরিয়ান ও ইজিপশিয়ান রাজার মৃত্যু হলে কবরে অস্ট্রিচ পাখির ডিম দেওয়া হতো। বুলগেরিয়া গ্রিস বা সাইপ্রাসের মানুষ ইস্টার সানডে কাঁচা ডিম পরিবারের সদস্যের গায়ে ছোঁড়ে। ডিম না ভাঙলে সৌভাগ্যের প্রতীক।
(শেষাংশ আগামীকাল)
Be First to Comment