Press "Enter" to skip to content

ঢাকার মাইয়া মহাশ্বেতা দেবীর সংগ্রামী জীবনকে কেন্দ্র করে অরিন্দম শীলের আগামী ছবি মহানন্দা……..

Spread the love

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা, মহাশ্বেতা দেবী সংগ্রামের আর এক নাম। প্রয়াত এই লেখিকা এবং সমাজকর্মীর জীবনকে অবলম্বন করে একটি কাহিনীচিত্র নির্মাণে ব্রতী হয়েছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। ছবিটি প্রযোজনা করছেন ফিরদৌশল হাসান ও প্রবীর হালদার। কাহিনী নির্মাণের ও চিত্রনাট্যের দায়িত্বে পরিচালক অরিন্দম শীল এবং শুভেন্দু দাসমুন্সী। ছবির নাম মহানন্দা। নামভূমিকায় আছেন গার্গী রায় চৌধুরী। মহানন্দা চরিত্রটির পাশাপাশি মহালয়া আর এক চরিত্রে অভিনয় করবেন ঈশা সাহা। অন্য চরিত্রগুলির মধ্যে আপাতত নির্বাচিত হয়েছেন গৌরব চক্রবর্তী, শুভেন্দু দাস মুন্সী প্রমুখ।

ছবির সংগীত পরিচালক বিক্রম ঘোষ। ছবির ঘোষণা আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিচালক করলেন সাংবাদিকদের ডেকে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রয়াত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর দুই সহোদরা সোমা ও সারি। পরিচালক অনুষ্ঠানের মুখবন্ধে বলে রাখলেন, ছবিটি মহাশ্বেতা দেবীর বাওপিক নয়। তাঁর জীবন এক বহমান সংগ্রামের স্রোতস্বিনী নদীর মত। তাই তাঁর জন্ম মৃত্যু নিয়ে ছবি করছি না। দেশের ভূমিপুত্র আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে তিনি ছিলেন অধিনায়িকা। বঙ্গ ললনা মহাশ্বেতা ছিলেন প্রচার বিমুখ। তাঁর আদিবাসীদের নিয়ে সংগ্রামের কাহিনীতে নেই কোনো অলৌকিক চমক। তাই বাঙালি যখন এক নিশ্বাসে কৃতি কিছু বাঙালিকে নিয়ে গর্ব করেন সেই তালিকায় আশ্চর্যজনকভাবে ব্রাত্য থাকেন মহাশ্বেতা।

আমরা তাই আপাদমস্তক একটি জীবনের ছবি তথা আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক একটি ছবি বানাতে চলেছি। অভিনেত্রী গার্গী মারফত কিছু তথ্য আমার কাছে পাঠান আজকাল দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত। উনি মনে করেছেন আমি এই ছবি নির্মাণে যোগ্য ব্যক্তি। আমি কৃতজ্ঞ অশোকবাবু আমার প্রতি এই আস্থা রাখেন বলে। রেখে ঢেকে কথা বলে লাভ নেই ,আমি একটি রাজনৈতিক ছবি করতে যাচ্ছি। তবে তা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়। স্বাধীনতার আগে থেকে দেশের ভূমিপুত্ররা বঞ্চিত। অবহেলিত মহাশ্বেতা দেবী স্রোতের উল্টোদিকে হেঁটে যে আন্দোলনকে সংগঠিত করে গেছেন সেই বিষয় হবে আমার ছবির বিষয়বস্তু। সাহস করে পরিচালক এমন একটি বিষয় নিয়ে ছবি করছেন তার জন্য অবশ্যই তাঁর সাধুবাদ প্রাপ্য।
কিন্তু বিষয় যেহেতু মহাশ্বেতা দেবীর ওপর আধারিত, তাই কিছু প্রশ্ন থেকে যায়।

সত্যি বড়ই তিক্ত। ভারতের কথা উহ্য রেখেও যদি শুধু বাংলার কথা ধরি, বাঙালি কিন্তু আদিবাসী ভূমিপুত্রদের কোনো দিনই সুনজরে দেখেনি।একদিকে ব্রিটিশ উপনিবেশের যোগ্য প্রজা হয়ে ওঠা উচ্চবর্ণের বাঙালির ইংরেজি শিক্ষা, অন্যদিকে হিন্দু রক্ষণশীল উচ্চবর্ণের ঘৃণা রাষ্ট্রের হাতে নিষ্পেষিত হওয়ার দুর্ভাগ্য আদিবাসীদের ভবিতব্য হয়ে ওঠে। সেই বন্ধুর পরিবেশে বাঙালিকে ছেড়ে আদিবাসীদের স্নেহডোরে নিজেকে বিলিয়ে দেন বিদ্যাসাগর। মহাশ্বেতা দেবীও বলেছিলেন, নিচুজাত বা দরিদ্রদের ব্যাপারে কেউ নমনীয় নয়। সবাই শোষণ করতে চায়। মহাশ্বেতা দেবী বর্তিকা পত্রিকায় ৩৩তম বর্ষ জানুয়ারি-মার্চ ৮৯’ সংখ্যার সম্পাদকীয় কলমে লিখেছিলেন,_এখন সমগ্র আদিবাসী জীবনকে জানবার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষার সময়।,,,,,,স্বাধীন ভারতবর্ষে সুসভ্য প্রাচীন,মহান আদিম অধিবাসী আদিবাসীরা কোনও স্বীকৃতি পায়নি। স্কুল সিলেবাসের ইতিহাসে লেখা হয় না আদিবাসী কৃষকদের সংগ্রামগুলি। যা ভারতের স্বাধীনতার অঙ্গ। সাঁওতালি , গোন্ডি, কুরুখ, ওরাও,এসকল ভাষায় সিন্ধি বা কাশ্মীরি ভাষার চেয়ে বেশি মানুষ কথা বলেন। তবু সেসব ভাষা স্বীকৃতি পায়না ।,,,,,,অথচ ১৯০৮ সালে অত্যাচারী ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংস ফোর্ডকে হত্যা করার জন্য শহীদ ক্ষুদিরামকে বোমা বাঁধতে শিখিয়েছিলেন ভালুকবিধা গ্রামের আদিবাসী ডমণ হেমব্রম।পুলিসের হতে ধরা পড়ায় তাকে পিটিয়ে মারা হয়।মেদিনীপুর জেলায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে ইংরেজ নাম দেয় চুয়াড় বিদ্রোহ। যার অর্থ ধাঙ্গর বা অসভ্যদের বিদ্রোহ। মাত্র কয়েক লক্ষ নেপালি মানুষ নেপালি ভাষার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন। অথচ ২০/২৫ লক্ষ আদিবাসীদের সাদরি ভাষা আজও স্বীকৃতি পায়নি। শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান তো বটেই, আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার নিয়ে আমৃত্যু লড়ে গেছেন আদিবাসী বিশেষ করে শবর খেরিয়াদের মা মহাশ্বেতা দেবী।১৯৯৬সালে ডিসেম্বরে ঢাকায় এক আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, আমার মৃত্যু ২০২৫ এর আগে হবে না। তার মধ্যেই আমি শবরদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে যাবো। কিন্তু তাঁর সেই শেষ ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। ১৪ জুলাই ২০১৬তে তিনি চলে যান পৃথিবী ছেড়ে। সেই বছরই ওয়ার্ল্ড জার্নাল অফ ফার্মো অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল সাইন্সের সমীক্ষা বলে, শবর সাঁওতালদের গড় পুষ্টি ৩৩.৩ শতাংশ। শবর সম্প্রদায় হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী হলেও বর্ণ হিন্দুরা স্বীকৃতি দেন না। বাঙালির প্রতিবেশী হয়েও আমরা যে আদিবাসীদের সম্পর্কে অজ্ঞ তার বড় প্রমাণ, সাম্প্রতিক কালে রাজ্য সরকারের এক প্রকল্প। যেখানে আদিবাসীদের প্রবীণদের হাজার টাকা পেনশন দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। যা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু প্রকল্পটির নামকরণে থেকে গেছে অজ্ঞতার ছাপ।

প্রকল্পটির নামকরণ হয়েছে জয় জহার। যার কোনো অর্থ নেই। কেননা জহার শব্দের অর্থ নমস্কার। জ=জোড়,হা=হাত, র=রহা=স্থির। অর্থাৎ জ হার শব্দের আগে জয় শব্দের কোনো মানে হয় না। যদিও এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। কিন্তু এটাই প্রমাণ করে আমরা উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত বাঙালি আমাদের মূল ভূমিপুত্রদের সঙ্গে কতটা মানসিক দূরত্বে আছি । মহাশ্বেতা দেবী গড়ে তুলেছেন আদিবাসীদের ৩৮ টি গোষ্ঠীদের নিয়ে আদিম জাতি ঐক্য পরিষদ। তাঁর নকশালপন্থীদের আন্দোলন নিয়ে দ্রৌপদী উপন্যাস হয়ত তাঁর নিজের জীবনের সংগ্রামের ছায়া অবলম্বনে রচিত।নিজের লেখা গল্প অবলম্বনে তৈরি ছবিতে তিনি অভিনয়ও করেন।পরিচালক ছিলেন ঈশ্বর চক্রবর্তী। মহাশ্বেতা দেবীর জীবনে রয়েছে বহু রঙের শেড। তাই এই ছবির চিত্রনাট্য তৈরির গবেষণা এক কঠিন কাজ।

তেমন কঠিন মহানন্দা চরিত্রের অভিনেত্রী গার্গীর
প্রচেষ্টা। শোনা গেলো সাঁওতালি ভাষা শেখার কাজ শুরু করে দিয়েছেন গার্গী। সবশেষে দুটি প্রশ্ন। একটি পরিচালককে। তাঁর দাবি মত, ছবিটি হবে রাজনৈতিক। সেক্ষেত্রে সেন্সর সম্পর্কে কতটা সতর্ক থাকবেন তিনি? যাকে নিয়ে ছবি তিনি কোথাও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। দ্বিতীয় প্রশ্ন সংগীত পরিচালক বিক্রম ঘোষের কাছে।ছবিতে শবর দের লুপ্তপ্রায় রেলো নাচ পাবো তো? অপেক্ষায় রইলাম মহাশ্বেতা ওরফে সুমিতা দেবীর জীবন অবলম্বনে মহানন্দা ছবির জন্য।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.