——-লকডাউনের সুফল আদৌ মিলবে কি?——
মধুমিতা শাস্ত্রী: ৪মে ২০২০ তৃতীয় দফায় ফের লকডাউন বাড়ানো হল। চলবে আগামী ১৭ মে পর্যন্ত। অর্থাৎ মোট ৫৪ দিন। তারপর? ফের বাড়বে লকডাউন না ধীরে ধীরে জনজীবনকে স্বাভাবিক করার পথে হাঁটবে সরকার? উত্তর এখনও কেউ জানে না। সাধারণ মানুষ শুধু দেখছে, প্রায় দেড় মাসের কাছাকাছি লকডাউন চলা সত্ত্বেও করোনার আগ্রাসনে কোনও রকম দাঁড়ি টানা যায়নি। এদিকে টানা লকডাউন চলার ফলে দেশের এবং দশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। শুধু দিন আনা দিন খাওয়া মানুষরাই নন।
ছোট ব্যবসায়ীরা বিরাট ক্ষতির মুখোমুখি হতে চলছেন। পরিবহন ব্যবসায়ী, ছোট কারখানার মালিক হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মালিকরা এবং এইসব ব্যবসায় জড়িত বিরাট সংখ্যক কর্মচারীরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বহু প্রাইভেট সংস্থা ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কর্মচারীদের ইতিমধ্যে মাসিক বেতন কমানোর কথা ঘোষণা করেছে। আগামীদিনে চাকরি থাকবে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। আশঙ্কায় কর্মচারীরা। আমাদের সামনে এখন অর্থনৈতিক মন্দার ঘন কালো মেঘ আর পিছনে করোনার আতঙ্ক। ডাক্তারবাবুরা বারবার বলছেন শুধু মাত্র লকডাউন নয়, সঙ্গে প্রচুর সংখ্যক টেস্টও করতে হবে।
কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য আমাদের এখানে টেস্ট হচ্ছে কম। তাছাড়া লকডাউনও একশ্রেণীর মানুষ একেবারেই মানছে না। তাদের লকডাউন মানানোর মতো প্রশাসনিক পরিকাঠামো অর্থাৎ প্রচুর সংখ্যক পুলিশও নেই। তাছাড়া আমাদের দেশে বহু গরিব মানুষ একচিলতে ঘরে চার পাঁচ জন গাদাগাদি করে বাস করে। তাদের পক্ষে একনাগাড়ে সারাদিন বাড়িতে থাকাও সম্ভব নয়। গরিব মানুষেরা দুটো খাবারের খোঁজে প্রতিদিন বাড়ির বাইরে পা রাখতে বাধ্য হচ্ছে।
কখনো রেশন দোকানে লম্বা লাইন, কখনো কেন্দ্রের দেওয়া মাসে ৫০০ টাকা বা রাজ্যের দেওয়া আর্থিক সাহায্য তোলার জন্য ব্যাঙ্কে লম্বা লাইন আবার কখনো বিনা পয়সার উজালা যোজনার গ্যাস নেওয়ার জন্য মানুষকে লাইন দিতেই হচ্ছে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও। কাজেই দেখা যাচ্ছে, আমাদের আর্থ সামাজিক পরিকাঠামোই লকডাউন সফল করার পথে প্রধান অন্তরায়।
এর দায় কে নেবে? কেন লকডাউনের আগেই পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা সরকারের মাথায় এল না? কেন সরকারি নিষেধ সত্ত্বেও বিভিন্ন জায়গায় সভা, সমাবেশ ও বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে? কীভাবেই বা হচ্ছে? এর জবাব সরকার দেবে কি? রেশন বিলি, ত্রাণ বিলি নিয়ে প্রতিনিয়ত মারামারি চলছে। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী পুলিশের উপরও আক্রমণ হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে লকডাউন আদৌ সফল হবে? হবে কি না ভবিষ্যতই তার উত্তর দেবে। আপাতত আমাদের সামনে দুটো রাস্তা খোলা— হয় করোনায় মরো, নয়তো নয়তো অনাহারে মরো।
Be First to Comment