Press "Enter" to skip to content

জীবাণুনাশকের ব্যবহার প্রবর্তন করেছিলেন যিনি, সেই ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ-ই দুই সপ্তাহের মাথায় ক্ষতের সংক্রমণে প্রাণ হারান……..

Spread the love

গুগল ডুডল : হাত ধোয়ার গুরুত্ব প্রথম বুঝেছিলেন তিনি

বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সতর্কতামূলক অংশ হিসেবে বারবার হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা হ্যান্ড রাব না পাওয়া গেলে সাবান-জল দিয়েই ধুতে বলা হচ্ছে হাত। গুগল ডুডল, অর্থাৎ বিশেষ উপলক্ষে গুগলের লোগোতে আসা বৈচিত্র্যের অংশ হিসেবে এবার যোগ হলো সেই হাত ধোয়ার বিষয়টি। গুগল সার্চে গেলেই লোগোর পরিবর্তে আসছে একটি অ্যানিমেটেড ভিডিও, যাতে হাত ধোয়ার পদ্ধতিগুলো দেখানো হচ্ছে। সঙ্গে একজন ব্যক্তিকেও দেখা যাচ্ছে সেই ভিডিওতে। কে তিনি?সেটা জানতে হলে যেতে হবে একটু পেছনের দিকে। অবাক করার মতো তথ্য হলো, মাত্র শ’দুয়েক বছর আগেও চিকিৎসকদের মধ্যেই হাত ধোয়ার প্রচলন ছিল না। ফলে হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে প্রসূতিদের মৃত্যুর হার ছিল মারাত্মক মাত্রায় বেশি। ঠিক ওই সময়েই প্রসূতিদের সুরক্ষায় চিকিৎসকদের হাত ধোয়া, তথা জীবাণুমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যিনি, তিনি হাঙ্গেরির ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ।

জীবদ্দশায় না হলেও মৃত্যুর পর ‘প্রসূতিদের ত্রাণকর্তা’ হিসেবে খ্যাত হন তিনি।১৮৪৬ সালে ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ যোগ দেন ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালে। ঊনবিংশ শতাব্দীর ওই সময়ে (১৮৪৭) ওই হাসপাতালের বিশেষ করে প্রসূতি বিভাগে মৃত্যুর হার ছিল অনেক বেশি, হাজারে যার পরিমাণ ছিল ৯৪.৪ শতাংশ। সে তুলনায় নার্সদের পরিচালিত প্রসূতি হাসপাতালগুলোতে এর হার ছিল অনেক কম— হাজারে ৩৬.২ শতাংশ। অবস্থাটা ছিল এমন, হাসপাতাল মানেই যেন আতঙ্ক। তাই সবাই বাড়িতেই চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত।এমন একটি সময়ে ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ বোঝার চেষ্টা করলেন, ঠিক কেন চিকিৎসকদের পরিচালিত হাসপাতালে প্রসূতিদের মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না। একটা পর্যায়ে গিয়ে তিনি বুঝলেন, চিকিৎসকরা মর্গে মরদেহ কাঁটাছেঁড়া করার পর বা অন্য কোনো রোগীর অপারেশনের পর হাত জীবাণুমুক্ত, এমনকি পরিস্কার না করেই প্রসূতিদের সেবা দিচ্ছেন। এতে আগের অপারেশনের কারণে হাতে থেকে যাওয়া জীবাণু মূলত সংক্রমিত করছে প্রসূতিকে। তাতে তারা ‘পিউপেরাল জ্বর’-এ আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।এ পরিস্থিতিতে স্যামেলওয়াইজ সবাইকে হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে তবেই প্রসূতিকে সেবা দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু চিকিৎসকসহ অন্যরা তাকে স্রেফ পাগল বলে অভিহিত করলেন। তার মতামতকে গ্রাহ্যই করলেন না। তবে স্যামেলওয়াইজ তার অবস্থানে অনড় ছিলেন। ময়নাতদন্ত করে যেসব চিকিৎসক প্রসব কক্ষে যেতেন, তাদের জন্য অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে হাত পরিস্কার করা বাধ্যতামূলক করা হলো। ভিয়েনা হাসপাতালে ১৮৪৮ সালের মধ্যে প্রসূতি মৃত্যুর হার নেমে আসে হাজারে ১২.৭ শতাংশে।স্যামেলওয়াইজ অবশ্য তার কাজের স্বীকৃতি পাননি। বরং ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে তারা আর সেই চুক্তি নবায়ন করেনি স্যামেলওয়াইজের সঙ্গে। পরে বুদাপেস্টের একটি হাসপাতালে যোগ দেন তিনি। তবে সেখানেও তাকে পড়তে হয় বিরোধের মুখে। একপর্যায়ে আচরণে অসঙ্গতি দেখা দেয় স্যামেলওয়াইজের। তাকে কৌশলে পাঠানো হয় মানসিক হাসপাতালে। সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে অন্ধকার সেলে আটকে রাখা হয়। ওই মেন্টাল অ্যাসাইলামে তার ডান হাতে একটি ক্ষত থেকে সংক্রমণ হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো— জীবাণুনাশকের ব্যবহার প্রবর্তন করেছিলেন যিনি, সেই স্যামেলওয়াইজ-ই দুই সপ্তাহের মাথায় ওই ক্ষতের সংক্রমণ থেকে প্রাণ হারান। হাত ধোয়া, তথা জীবাণুমুক্ত রাখার গুরুত্ব তুলে ধরায় জীবদ্দশায় উন্মাদ আখ্যা পেতে হয়েছে ইগনাজ স্যামেলওয়াইজকে।

একঘরে করে রাখা হয়েছে তাকে। অথচ পরবর্তী সময়ে এসে বিজ্ঞানের ইতিহাস বলছে, স্যামেলওয়াইজ এগিয়ে ছিলেন তার সময়ের চেয়ে। আজকের এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় যখন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার হাত ধোয়ার গুরুত্ব তুলে ধরছেন, ঠিক তেমন একটি সময়ে ইগনাজ স্যামেলওয়াইজকে আরও একবার বিশ্বের সবাই মিলে শ্রদ্ধা জানানোই যায়। বিজ্ঞানের পাতায় অত্যন্ত কম আলোচিত এই ব্যক্তিকে স্মরণ আর শ্রদ্ধা জানানোর সেই সুযোগটিই যেন করে দিল গুগল।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.