——–জন্মদিনের শ্রদ্ধাঃ জোহরা সেহগল———-
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ধবধবে সাদা চুল, চামড়ার ভাঁজে একশো ছোঁয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। তবু চোখের কোণে ‘জিয়া জ্বলে’ হাসিতে একুশের তরুণী। তিনি বলিউডের ‘গ্র্যান্ড ইয়ং নানি’ জোহরা সেহগল। কখনও অমিতাভ বচ্চনের মায়ের চরিত্রে, কখনও বা ঐশ্বর্যার ঠাকুমা। কখনও আবার গোবিন্দার মারকাটারি দিদিমা। হাসি -কান্না-ছেলেমানুষি সবেতেই অনবদ্য। জোহরার বাস্তব জীবনটা কোনও ফিল্মের থেকে কম নয়। ছয় ভাইবোনের সংসার যথেষ্ট রক্ষণশীল ছিল। স্বাধীনতারও বছর কুড়ি আগে, জন্মের পরেই যখন মেয়েদের শিখিয়ে দেওয়া হয় সংসার-সন্তানের নিয়মকানুন, সে সময় লাহোরে কুইন মেরি কলেজে পড়াশুনো শেষ করে জোহরা ঠিক করলেন ইউরোপে যাবেন। তা-ও আবার অভিনয় শিখতে। কিন্তু জার্মানিতে গিয়ে দেখা হল উদয়শঙ্করের সঙ্গে। ইচ্ছেটা অভিনয় থেকে বদলে গেল নাচে। উদয়শঙ্করের নাচের দলেই নাম লেখালেন জোহরা। সেখানে জন্মসূত্রে জোহরা বেগম মুমতাজ খানের সঙ্গে আলাপ হল কমলেশ্বর সেহগলের। দেখা মাত্রই নৃত্যশিল্পী-বিজ্ঞানী-শিল্প নির্দেশক কমলেশ্বর বছর আটেকের বড় জোহরার প্রেমে পড়ে গেলেন। হিন্দু প্রেমিককে সে দিন ফিরিয়ে দিতে পারেননি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা মেয়েটি। বয়স আর ধর্মের বেড়া টপকে বিয়ে করে ফেলেন দু’জনে।
ইতিমধ্যে, পৃথ্বীরাজ কপূরের সান্নিধ্যে আসেন জোহরা। অভিনয়ের ইচ্ছেও ফিরে আসে মনে। পৃথ্বীরাজ কপূরের কাছে কাজ শিখতে শুরু করে দিলেন। তাঁর নাটকে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগও পেয়ে যান। সঙ্গেই ‘সিআইডি’, ‘বাজি’, ‘ন দো এগারা’-র মতো হিট ছবিতে কোরিওগ্রাফি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জোহরার জীবন যখন দুরন্ত গতিতে ছুটছে তখনই হঠাৎ থেমে গেল কমলেশ্বরের জীবন। আত্মহত্যা করলেন কমলেশ্বর। হোঁচট খেয়েছিলেন। কিন্তু থমকে যাননি জোহরা। স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান গেলেন ব্রিটেনে। একা হাতেই বড় করতে লাগলেন ছেলেমেয়েকে। কিছু দিনের মধ্যেই ব্রিটিশ টেলিভিশনে তাঁর ‘এ জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন’, তন্দুরি নাইটস আর গুরিন্দ চাড্ডার ‘ভাজি অন দ্য বিচ’ নজর কেড়ে নিল সবার।
২৫ বছর ব্রিটেনে থাকার পর হিন্দি ছবিতে ‘নানি’র ভূমিকায় ফেরেন জোহরা। দেশে ফিরেই একের পর এক হিট ছবি ‘দিল সে’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘বেন্ড ইট লাইক বেকহ্যাম’, ‘বীর-জারা’, ‘চিনি কম’ এবং সর্বশেষ ‘সাওয়ারিয়া’। ছোট্ট ভূমিকা আর নজরকাড়া অভিনয়।
প্রখ্যাত এই গুণী অভিনেত্রী ইতিমধ্যে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় পুরস্কার ‘পদ্মবিভূষণ’ পেয়েছেন। এছাড়া তিনি ১৯৬৩ সালে সঙ্গীত-নাটক একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে ‘পদ্মশ্রী’, ২০০১ সালে কালিদাস সম্মানে ভূষিত হন।
শতবর্ষী এই নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
জোহরা সেগাল ১৯১২ সালের আজকের দিনে (২৭ এপ্রিল) ভারতের উত্তর প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment