প্রবীর রায় : অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক। খুব ছোটবেলা থেকে বুড়ো মামুকে চিনতাম ! আমার বয়স তখন খুব বেশি হলে ১০ / ১২ বছর হবে ! আমার মাসির সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করতেন বুড়ো মামু ! সেই সূত্রে আমাদের বাড়িতে খুব যাতায়াত ছিল ! আমার মাকে খুকুদি আর বাবাকে বাচ্চুদা বলে ডাকতেন ! আমাদের বাড়ির সঙ্গে এতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল যে আমাদের বাড়ির বহু পুরোনো কাজের লোক সুকুমার’দার মৃত্যুর পর ,বুড়ো মামু কাঁধও দিয়েছিলেন ! শেষ দিন পর্য্যন্ত বুড়ো মামুর সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল ! উত্তম মঞ্চে গিয়ে মাঝে মাঝে আড্ডাও মারতাম ! আজ সেই বুড়ো মামুর ৯৩তম জন্মদিন (২৪. ০২. ১৯৩১ – ২৭ .১০.২০০৩ ) !
বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চরিত্রাভিনেতা ছিলেন তরুণকুমার । অভিনয় প্রতিভায় ভাস্বর তরুণ কুমার কিংবদন্তী দাদার ছায়ায় ঢাকা পড়েন নি। ১৯৫৪ তে হ্রদ ছবিতে তাঁর পর্দায় প্রথম আত্মপ্রকাশ। প্রায় ৩৫০ ছবিতে অভিনয় করেছেন।
দাদা উত্তমকুমারের সঙ্গে তিনি কাজ করেন এই ছবিগুলিতে – পৃথিবী আমারে চায়, তাসের ঘর, পুনর্মিলন, জীবন তৃষ্ণা, ডাক্তারবাবু, ইন্দ্রাণী, সোনার হরিণ, অবাক পৃথিবী, মায়ামৃগ, রাজাসাজা, কুহক, হাত বাড়ালেই বন্ধু, সখের চোর, শহরের ইতিকথা, সাথীহারা, ঝিন্দের বন্দী, নেকলেশ, সপ্তপদী, দুই ভাই, শিউলিবাড়ি, শেষ অঙ্ক, ভ্রান্তিবিলাস, সূর্যশিখা, দেয়ানেয়া, বিভাস, নতুন তীর্থ, রাজদ্রোহী, শুধু একটি বছর, শঙ্খবেলা, কাল তুমি আলেয়া, জীবন মৃত্যু, অ্যান্টনী ফিরিঙ্গী, চৌরঙ্গী, গড় নাসিমপুর, সাবরমতী, কমললতা, মন নিয়ে, অপরিচিত, কলঙ্কিত নায়ক, বিলম্বিত লয়, রাজকুমারী, এখানে পিঞ্জর, রাতের রজনীগন্ধা, জয় জয়ন্তী, ধন্যি মেয়ে, জীবন জিজ্ঞাসা, ছদ্মবেশী, বিরাজ বউ, অন্ধ অতীত, হার মানা হার, স্ত্রী, কায়াহীনের কাহিনি, সোনার খাঁচা, রৌদ্রছায়া, রক্ত তিলক, আলোর ঠিকানা, যদি জানতেম, রোদন ভরা বসন্ত, মৌচাক, আমি সে ও সখা, অগ্নিশ্বর, সন্যাসী রাজা, প্রিয় বান্ধবী, বাঘবন্দী খেলা, নিধিরাম সর্দার, বহ্নিশিখা, চাঁদের কাছাকাছি, বন পলাশীর পদাবলী, রাজবংশ, সব্যসাচী, অসাধারণ, দুই পুরুষ, ধনরাজ তামাং, ব্রজবুলি, দেবদাস, সমাধান, পঙ্খীরাজ, দুই পৃথিবী, দর্পচুর্ণ, ইমন কল্যাণ …… ৮০ টি ছবিতে অভিনয় করেন।
১৯৬৬ সালে দাদাঠাকুর ছবির জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার লাভ করেন।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি মঞ্চাভিনেতা হিসেবেও তিনি অত্যন্ত সফল। নহবত নাটকের মুখ্য চরিত্রে ছিলেন তিনি। নাটকটি একাদিক্রমে সাত বছর মঞ্চস্থ হয়। অভিনেতা সত্য বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে “কল্পতরু” গোষ্ঠী গড়ে তোলেন।
চলচ্চিত্র এবং মঞ্চের অভিনয়ের বাইরেও অনেক জায়গায় তাঁর কৃতিত্বের সাক্ষর রয়ে গেছে । শিল্পী সংসদ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন॥ দক্ষিণ কলকাতায় উত্তম মঞ্চ স্থাপনের তিনি ছিলেন প্রধান স্থপতি। তপন থিয়েটারকেও জনপ্রিয় করার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
#তরুণকুমারের জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ_রইলো ….।
Be First to Comment