স্মরণ : চে গ য়ে ভা রা
“চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়
আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে, বুকের ভেতরটা ফাঁকা
আত্মায় অবিশ্রান্ত বৃষ্টিপতনের শব্দশৈশব থেকে বিষণ্ন দীর্ঘশ্বাস।”
[ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ]
বাবলু ভট্টাচার্য ; চে’ একটি নাম। একটি বিপ্লব। যে নামের সঙ্গে বিপ্লব শব্দটির অদ্ভুদ সম্পর্ক। যে নাম থেকে বিপ্লব শব্দটিকে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। চে’ নামটি শুনলেই শরীরের কোষগুলো বিদ্রোহ করে উঠে। মুহূর্তের মধ্যে চেতনার তন্দ্রা-কারফিউ ভেঙে যায়। এ এক অদ্ভুদ অনুভূতি!
এই ক্ষণজন্মা বিপ্লবীর জন্ম আর্জেন্টিনার গোমারিও শহরে। বাবা গুয়েভারা লিঞ্চ। মা মেরিলা মেনা। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর বুয়েন্স আয়ার্সের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুল এবং কলেজ। পড়াশুনা শেষে রক্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হন। কিন্তু এই ডাক্তারের রক্তে এবং চেতনায় ঢুকে যায় মার্ক্সবাদের মন্ত্র— যার ফলে চেতনায় ঘুরপাক খেতে থাকে শোষিত মানুষের প্রতিচ্ছবি। সারাক্ষণ অস্থির। কিছু একটা করতে হবে এদের জন্য।
তাই ছুটে যান নিরন্ন-অনাহারী মানুষের কাছে। দিনের পর দিন। মাসের পর মাস। এভাবে পার হয়ে যায় বছর। শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য বিপ্লবের নেশায় পাগল হয়ে ওঠেন তিনি। বন্ধু চিচিনার দেয়া ১৫ ডলার ও বন্ধু আলবার্তোকে সঙ্গে নিয়ে জরাজীর্ণ মোটর সাইকেলে চড়ে আর্জেন্টিনার ক্ষুদ্র গণ্ডি পেরিয়ে ঘুরে বেড়ান ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। উদ্দেশ্য একটাই— বিপ্লব। প্রত্যক্ষ করেন সেখানকার বাস্তবতা।
ঘুরে বেড়ান পেরু, ভেনিজুয়েলা, পানামা, ইকুয়েডর, উগান্ডা, মেক্সিকো, কঙ্গো, কেনিয়া, তানজানিয়া ও কিউবাসহ আরো অনেক দেশে। এসব দেশে তিনি বিপ্লবী তৈরি ও বিপ্লব সংগঠিত করার জন্য বিপ্লবী কর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেন।
১৯৫৩ সালে তিনি গুয়েতেমালার সরকার প্রধান জ্যাকোবা আরচেঞ্জের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সে দেশে যান। জ্যাকোবা আরচেঞ্জ ছিলেন আরেক বিপ্লবী। এ সময় বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুবিধার জন্য ছদ্মনাম নেন— ‘চে’। এই নামেই তিনি আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন। দেশে দেশে বিপ্লবের নেশায় এক পর্যায় চে মেক্সিকোতে চলে যান।
১৯৫৫ সালে মেক্সিকোতে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে চে’র সাক্ষাত হয়। দুই বিপ্লবী বেশ কিছুদিন যাবৎ সমাজ বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে মনস্থির করলেন বিপ্লবের কোনো বিকল্প নেই। বিপ্লবের জন্য প্রথম নিশানা ঠিক হলো কিউবা। চে-ফিদেল বাহিনী কিউবায় অবস্থান নিল। গেরিলা যুদ্ধ শুরু হলো। যুদ্ধ পরিচালনার নৈপুন্য— পারদর্শিতার কারণে চে’-কে সবাই সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক বানিয়েছিল।
হে বন্ধু আমার, কমরেডগণ ও কিউবার সকল মানুষ— বিদায়! পার্টির জাতীয় নেতৃত্ব ও আমার রাষ্ট্রীয় সকল পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিচ্ছি। ত্যাগ করছি আমার মন্ত্রীত্ব, মেজর পদ ও কিউবার নাগরিকত্ব। তুমি (ফিদেল) আমার স্ত্রী-কন্যাদের দেখো। বিপ্লবী অভিনন্দনসহ— চে’।
চলে যান লুলুম্বার দেশ কঙ্গোতে। প্রতিকুল পরিবেশ দেখে সেখান থেকে চলে যান বলিভিয়ায়। ১৯৬৫ সালে বলিভিয়ায় শুরু করেন বিপ্লবী কর্মকাণ্ড। ধীরে ধীরে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে বলিভিয়ার স্বৈরাচার সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দেন।
আর এই বিপ্লব সংগঠিত করতে গিয়ে ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর মার্কিন সমর্থনপুষ্ট বলিভীয় সেনাবাহিনীর হাতে আহত অবস্থায় বন্দি হন চে গয়েভারা। পরদিন ৯ অক্টোবর তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
Be First to Comment