Press "Enter" to skip to content

গ্রেগরি পেকের প্রথম ছবি ‘ডেইজ অব গ্লোরি’ মুক্তি পায় ১৯৪৪ সালে। প্রথম ছবিতেই নিজের জাত চিনিয়ে দেন এই অভিনেতা….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ গ্রে গ রি পে ক

বাবলু ভট্টাচার্য : রাজকীয় জীবনের একঘেয়েমিতে হাঁপিয়ে ওঠা এক রাজকন্যাকে মুক্তির আলোয় নিয়ে যান এক তরুণ সাংবাদিক। বিদায় বেলায় রাজকুমারী বলেন, ‘আমি জানিনা কিভাবে বিদায় বলতে বলবো’। তরুণটি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘চেষ্টা করো না’।

‘রোমান হলিডে’র সেই তরুণ সাংবাদিক সিনেমাপ্রেমীদের হার্টথ্রব নায়ক গ্রেগরি পেক।

‘টু কিল এ মকিং বার্ড’, ‘স্পেল বাউন্ড’, ‘ডুয়েল ইন দ্য সান’, ‘মবি ডিক’, ‘দ্য গানস অফ নাভারন’, ‘দ্য ইয়ারলিং’ -এর মতো অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় বিশ্ব চলচ্চিত্রের সম্পদ।

পুরো নাম এলড্রেড গ্রেগরি পেক। বাবা গ্রেগরি পার্ল পেক ছিলেন কেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট। মায়ের নাম ছিল বার্নিস মেরি। রোমান ক্যাথলিক হলেও পরিবারে ধর্মীয় গোঁড়ামি তেমন ছিল না। পেকের বয়স যখন ছ’বছর তখন তাঁর বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। দিদিমার কাছে কাটে তাঁর শৈশব।

সেন্ট জনস মিলিটারি একাডেমি নামে একটি ক্যাথলিক মিলিটারি স্কুলে দশ বছর বয়সে ভর্তি হন তিনি। সে সময় দিদিমার মৃত্যু হলে বাবা তাঁর দেখাশোনার ভার নেন। সান ডিয়াগো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কিছুদিন লেখাপড়া করেন এবং পরে বার্কলে ইউনিভার্সিটিতে পড়েন।

এই সময়ই তাঁর অভিনয়ের হাতেখড়ি। থিয়েটার কোর্স করেন তিনি সেসময়। এরপর একটি তেল কোম্পানিতে ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেন। বার্কলেতে পড়ার পাশাপাশি কাজ করতে হতো তাঁকে। টিউশন ফি এবং নিজের জীবন-যাত্রার খরচ চালানোর জন্য বেশ পরিশ্রম করতেন।

বার্কলের অভিনয় প্রশিক্ষকের নজরে পড়েন তিনি। তাঁর মধ্যে প্রতিভার পরিচয় পেয়ে প্রশিক্ষক তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যদলে নেন।

স্নাতক হওয়ার পর তিনি পাড়ি জমান নিউইয়র্কে। সেদিনগুলোতে তরুণ পেক’কে অর্থকষ্ট ভোগ করতে হয়েছে ভীষণ। নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে রাতে ঘুমিয়েছেন অনেক দিন।

গ্রেগরি পেকের প্রথম ছবি ‘ডেইজ অব গ্লোরি’ মুক্তি পায় ১৯৪৪ সালে। প্রথম ছবিতেই নিজের জাত চিনিয়ে দেন এই অভিনেতা। পর পর মুক্তি পায় ‘দ্য কিজ অব দ্য কিংডম’, ‘দ্য ইয়ারলিং’, ‘জেনটেলম্যান’স এ্যাগ্রিমেন্ট’ এবং ‘টুয়েলভ’ও ক্লক হাই’। চারটি ছবির জন্যই অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পান তিনি।

পুলিৎজার জয়ী লেখক মারজোরি কিনান রলিংসের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘দ্য ইয়ারলিং’ ছবিতে কৃষক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার পান পেক।

১৯৪৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আলফ্রেড হিচককের ‘স্পেলবাউন্ড’ ছবিতে একজন স্মৃতিভ্রষ্ট ব্যক্তির চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন তিনি। এই ছবিতে গ্রেগরি পেকের বিপরীতে ছিলেন ইনগ্রিড বার্গম্যান, হলিউডের আরেক কিংবদন্তি শিল্পী। এই ছবিতে অভিনয়ের সময় পরস্পরের প্রেমে পড়েছিলেন তাঁরা।

‘স্পেল বাউন্ড’ তাঁকে প্রভূত খ্যাতি এনে দেয়। ‘ডুয়েল ইন দ্য সান’ (১৯৪৬) ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেন পেক। এই ছবিতে একজন আবেগপ্রবণ, নিষ্ঠুর কাউবয়ের চরিত্রে তাঁর শক্তিশালী অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়।

১৯৫৩ সালে মুক্তি পায় ‘রোমান হলিডে’ সর্বকালের অন্যতম সেরা রোমান্টিক ছবি। এ ছবিতে অভিনয় করে অড্রে হেপবার্ন অস্কার পেয়েছিলেন। এই ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে পেক এবং হেপবার্নের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে যা সারা জীবন স্থায়ী হয়েছিল।

‘দ্য গানফাইটার’, ‘দ্য বিগ কান্ট্রি’, ‘মবি ডিক’, ‘দ্য গানস অব নাভারন’ সহ অনেকগুলো ছবিই তাঁকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়।

পৌরুষদীপ্ত অবয়ব, গভীর কণ্ঠস্বর এবং শক্তিশালী অভিনয় তাঁকে হলিউডের সর্বকালের সেরা নায়কদের অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাঁর শারিরীক শক্তিও ছিল প্রচণ্ড। অ্যাকশন দৃশ্যে তিনি কোনো স্টান্ট ব্যবহার করতেন না।

শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। পেয়েছেন অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার। ১৯৬৮ সালে তিনি অ্যাকাডেমির ‘জিন হারশল্ট হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ পান। ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডেন জনসন তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ সম্মাননায় ভূষিত করেন।

১৯৯৬ সালে তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ক্রিস্টাল গ্লোব পুরস্কার পান। টিভি সিরিজ ‘দ্য স্কারলেট এন্ড দ্য ব্ল্যাক’ এ ভ্যাটিকানের এক ধর্মযাজকের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পান গোল্ডেন গ্লোব।

২০০৩ সালের ১২ জুন ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

গ্রেগরি পেক ১৯১৬ সালের আজকের দিনে (৫ এপ্রিল) ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোতে জন্মগ্রহণ করেন।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.