ভাস্কর ভট্টাচার্য: কলকাতা,২৫ এপ্রিল ২০২০ বিশ্ব বই দিবস সারা বছরে একদিন পালিত হলেও বই কিন্তু সারা জীবনের সঙ্গী। দিতি এই লক ডাউনের এক মাসের জীবনে ১২টা বই পড়েছে বলল। শুনে আঁতকে উঠলাম। যদিও জানি ও খুব ফাস্ট রিডার। তার ওপর গোয়েন্দা বই যদি হয়, তাকে পায় কে। কানে হেডফোন গুঁজে ও নাকি অনায়াসে বই পড়ে যেতে পারে। এই মুহূর্তে সে জেফ্রি আর্চারের ওমান পড়ছে। খোলা পাতা, তারই মধ্যে টিভির টিভির করে বয় ফ্রেন্ড বা বন্ধুদের সাথেও মজা করে নিচ্ছে। ও এই সময়ের মেয়ে। একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ দ্রুত করতে পারে। আমায় ফোন করল। মনে করাল আজ বই দিবসের কথা। আমি বললাম জানি। হঠাৎ মনে পড়ল পৃথিবীতে বই নিয়ে নানান কাণ্ড কাটানোর কথা। গুটেনবার্গ এর কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গৈলা আলেকজান্দ্রিয়া মিউজিয়াম বা লাইব্রেরির কথা। শত্রুরা গোটা লাইব্রেরী জ্বালিয়ে দিয়েছিল। নালন্দার সংগৃহীত পুঁথি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যে আগুন নিভতে নাকি অনেকদিন লেগে ছিল। হিউয়েন সাংয়ের ভারত ভ্রমণ এর কাহিনি না রচিত না হলে পুরনো ভারতকে অনেকটাই অচেনা থেকে যেত। মর্মান্তিক ঘটনা চৈতন্যের জীবনেও ঘটেছিল। জলপথে অনেক মূল্যবান বই নিয়ে যেতে গিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সে অনেক কথা। নানা সময়ে বই রাজরোষে পড়েছে। খোদ বাইবেল অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছিল। বিশ্বের বহু বই রাজ রোষে নিষিদ্ধ হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে অনেক লেখকে কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছিল। অরবিন্দ ঘোষ, বারীন দত্ত প্রভৃতি। আর কারাগারে বসে লেখা কত বই যে বিশ্ববন্দিত হয়েছে তার অনেক উদাহরণ আছে। নেহরুর ‘ফর্ম ফাদার টু ডটার’। ফিওদর দস্তয় ভস্কির বইও সাড়া ফেলেছিল। যুগে যুগে বই নিয়ে কত কাণ্ড। সাড়া জাগানো আনা ফ্রাঙ্ক এর ডায়ের কেমন ভাবে লেখা হয়েছিল, তা আজ আর কারও অজানা নয়।
আর যাঁরা বিভূতিভূষণের আরণ্যক বা পথের পাঁচালী লেখার কাহিনি জানেন না, পাঠক হিসেবে তাঁদের দুর্ভাগ্য। বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার কাহিনি। এক দিকে নিজে হাতে আধখানা ঘরে একের পর এক কালজয়ী উপন্যাস গল্প লিখেছেন। ভারাক্রান্ত করব না। ইউনেস্কো ১৯৯৫ সালে ২৩ এপ্রিল দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস ঘোষণা করেছে। যদিও আয়ারল্যান্ড ও ইউকে মার্চ মাসে তা পালন করে। সব মানুষকে বই সচেতন করতেই এই দিবস। সঙ্গে লয়ালটি আইন লঙ্ঘন না করার বিষয়েও সচেতন করা। কিন্তু খোয়া যাওয়া পড়তে নিয়ে গিয়ে ফেরত না দেওয়ার মতো ঘটনা বা বই চুরির মতো রোমহর্ষক ঘটনা নেহাত কম নেই।
মার্ক টোয়েনের কথা নতুন করে না বলাই ভাল।
কিন্তু বুক পাইরেসির কথা বলতেই হবে। উনিশ শতকে অবিভক্ত বাংলায় লন্ডন থেকে প্রকাশিত হিরোজ অব ইউরোপিয়ান হিস্ট্রি এবং হিরোজ অব ইন্ডিয়া না হিস্ট্রি র দুটি বইয়ের অংশ পাইরেসির দায়ে ঢাকার পটুয়াটুলির জনৈক প্রাণ কুমার গুহ কলকাতায় বিচারকের কাছে স্বত্ব চুরির জন্য ক্ষমা ও ক্ষতি পূরণ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই মামলা লন্ডন অবধি গড়িয়ে ছিল।
আর কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ? বঙ্কিমের স্ত্রী রাজলক্ষ্মী দেবীর কাছে আদালতে নাকানিচোবানি খেয়ে মার্জনা চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেদিন সাড়া পড়ে গিয়ে ছিল।
এখন সে সবের বালাই কেউ ধার ধারে না। অনলাইন শয়ে শয়ে পিডিএফ। রয়ালটিহীন।
এখন ই লার্নিং। ভার্চুয়াল লাইব্রেরি। হাতের মুঠোয়।
বাংলাদেশের এক শিক্ষয়িত্রীকে জিজ্ঞাসা করতেই হেসে বললেন, আমি ফেসবুক পড়ছি লক ডাউনে।
আমায় জিনিস করলেন, কী পড়ছেন? আমি বললাম, আমার পড়াটা অনেকটা নেমন্তন্ন বাড়ির বাফে। হাতের সামনে রয়েছে কবির সংসার, ঋকবেদের কাব্যনাটক, তারাপদ রায়ের মাতালনামা সহ বেশ কয়েকটি। যা ইচ্ছে তাই।
Be First to Comment