স্মরণঃ খা লে দ চৌ ধু রী
বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলা নাট্যমঞ্চকে খালেদ চৌধুরী আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং দেশীয় নাটকের ঐতিহ্যিক ভাবনা নিয়ে যে-উচ্চতায় স্থাপন করেছিলেন তা ইতিহাসের অন্তর্গত হয়ে আছে। পরবর্তীকালে তিনি হয়ে ওঠেন মঞ্চস্থাপত্যে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব।
তিনি যেসব মঞ্চনাটক পরিকল্পনা করেন সেগুলো হলো— ‘পুতুলখেলা’, ‘গুড়িয়া ঘর’, ‘শুতুরমুর্গ’, ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’, ‘আধে আধুরে’, ‘ডাকঘর’, ‘কালের যাত্রা’, ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘আকরিক’, ‘তখন বিকেল’, ‘জন্মদিন’, ‘দুই তরঙ্গ’, ‘সুন্দর’, ‘কর্ণাবতী’, ‘অন্তর যাত্রা’, ‘চিলেকোঠার সেপাই’ প্রভৃতি।
তিনি একই সঙ্গে মঞ্চ ও পোশাক পরিকল্পনা করেন ‘অমর ভারত’, ‘দ্বন্দ্বসমাস’, ‘দেবতার গ্রাস’, ‘আন্না থেকে মিনা’ এবং ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন’।
খালেদ চৌধুরী ১৯১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর আসামের করিমগঞ্জের দাসগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা চন্দ্রনাথ দত্ত চৌধুরী এবং তাঁর মা হেমনলিনী। তাঁর ঠাকুমার ভাই, গুরুসদয় দত্ত তাঁর নাম রেখেছিলেন চিরকুমার, কিন্তু তাঁর পিতা পরে নামটি চিররঞ্জন দত্ত চৌধুরীতে পরিবর্তিত করেন।
বাবার সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের পরিণতি হিসাবে, তিনি, ১৯৪৩ সালে, নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন খালেদ চৌধুরী (যদিও তিনি তাঁর ধর্ম পরিবর্তন করেননি)। ১৯৪৫ সালে তিনি কলকাতায় চলে এসেছিলেন।
১৯৪৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ ও ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সক্রিয় সদস্য হিসেবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালে আইপিটিএ’র সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন। এরই মধ্যে চলতে থাকে তাঁর অন্যতম সৃষ্টিশীল কাজ বিভিন্ন গ্রন্থের প্রচ্ছদপট অঙ্কন ও অলংকরণ।
খালেদ চৌধুরী এই কর্মযজ্ঞে শুধু সংশ্লিষ্ট ছিলেন না, সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন কিংবদন্তিতুল্য সংগীতশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস, নির্মলেন্দু চৌধুরী, দেবব্রত বিশ্বাসের সঙ্গে গানের স্কোয়াডে। ’৪৩-এর দুর্ভিক্ষের অব্যবহিত পরে মানুষকে প্রাণিত ও জীবনকে উজ্জীবিত করার জন্য গান গেয়েছেন এই স্কোয়াডে।
জীবিকার প্রয়োজনে এই সময়ে তিনি কিছু বইয়ের প্রচ্ছদ অঙ্কন করেন। গতানুগতিকতামুক্ত বইয়ের প্রচ্ছদে তিনি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি প্রায় পাঁচ হাজার বইয়ের প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছেন।
খালেদ চৌধুরী বাংলা নাটকের মঞ্চস্থাপত্যে ও প্রচ্ছদশিল্পে যে-অবদান রেখে গেছেন তা দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। লোকসংগীত নিয়ে গবেষণায় ব্যাপৃত হয়ে এর বিস্তৃত ও সুবিশাল ভান্ডার সম্পর্কে তিনি অবহিত হন। শুরু করেন লোকসংগীত সংগ্রহ। সেই সংগ্রহ খুবই ব্যাপক ও সমৃদ্ধ। গড়ে তোলেন ফোক মিউজিক অ্যান্ড ফোকলোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
খালেদ চৌধুরী ৩০ এপ্রিল ২০১৪ সালের আজকের দিনে (৩০ এপ্রিল) ৯৪ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment