Press "Enter" to skip to content

“কোভিড – ১৯” – এর জেরে এ বছর বন্ধ হয়েছে ক‍্যারাটের গ্রীষ্মকালীন ক‍্যাম্প……..

Spread the love

সংগীতা চৌধুরী: কলকাতা, ১২ জুন, ২০২০। আজ সারা বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে গেছে ‘ কোভিড- ১৯’-এর দৌলতে। কল -কারখানা, অফিস, জরুরী পরিষেবা ব‍্যাতীত অন‍্যান‍্য দোকান, শপিংমল, রেষ্টুরেন্ট, বিভিন্ন ধর্মস্হান, টুরিস্ট স্পট সহ নানা স্হানের দ্বার ধীরে ধীরে উন্মোচন হলেও শিক্ষাজগত এখনও স্তব্ধ। যদিও বেশ কিছু স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস চলছে, তবে পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে শিক্ষা জগৎ কবে খুলবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। শুধু পঠন- পাঠনের ‍‌ক্ষেত্রেই নয়। নৃত্য, গীত, আবৃত্তিসহ অন্যান্য দিকে এই সময় অনেকেই অনলাইন ক্লাস করাচ্ছেন। এই মুহূর্তে বহু অভিভাবক নৃত্য – গীতের পাশাপাশি আরেকটি বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেন, সেটা হল ক‍্যারাটে শিক্ষার দিকে। বর্তমান ত্রস্ত আবহে সেটাও বন্ধ। তবে এক্ষেত্রে ক‍্যারাটের শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হল, এই সময় যে সমস্ত গ্রীষ্মকালীন ক‍্যাম্পগুলো পরিচালিত হয় এই বছর শিক্ষার্থীরা ওই সকল ক্যাম্পের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হল।

ছাত্র-ছাত্রীরা সারা বছরই লেখাপড়া ও অন্যান্য ব‍্যাপারে খুবই ব‍্যস্ত থাকে। ক‍্যারাটের মতো বিষয়ে কঠিন অনুশীলনের জন্য সময় বরাদ্দ সপ্তাহে এক বা দুই দিন। সময়টা মাত্র এক থেকে দেড় ঘন্টা। তাই প্রশিক্ষকরা স্কুলের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে সমুদ্রের বীচে কিংবা পাহাড়ে পাঁচ – ছয় দিনের জন্য ক‍্যাম্পে নিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা এই ক’দিন পুরোপুরি তাদের অধীনেই থাকে। তাই কাকভোর থেকে কঠোর নিয়মানুসারে অনুশীলন শুরু হয়। যারা সমুদ্র সৈকতে যান তারা বালিয়াড়ি ও সমুদ্র তরঙ্গের মধ্যে ছেলে- মেয়েদের নানা কসরৎ শেখান। শুধু প্রাতঃকালেই নয়, ধাপে ধাপে আরও কয়েকবার বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ চলে। আর যারা পাহাড়ে নিয়ে যান তারা সেখানেই ক‍্যারাটের বিভিন্ন কৌশল শিক্ষার্থীদের রপ্ত করানোর চেষ্টা চালান।

বর্তমানে ক‍্যারাটে শিক্ষার চাহিদা বাড়ায় শহর ও শহরতলির আনাচে- কানাচে অসংখ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।আবার কিছু স্কুলেও ছাত্র- ছাত্রীদের ক‍্যারাটে শেখানোটা আবশ্যিক করেছে। শুধু তাই নয়, কলকাতা পুলিশ থেকেও মেয়েদের জন্য বেশ কয়েকবার সেল্ফ ডিফেন্স শেখানোর ক‍্যাম্পের আয়োজন করেছে। জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যেও আজকাল সেল্ফ ডিফেন্স শেখার প্রবনতা দেখা দিয়েছে। পনেরো বছর আগেও ক‍্যারাটে মানুষের মধ্যে এত প্রভাব ফেলেনি, কিন্তু হঠাৎ এই গুরুত্ব পাওয়ায় কারন জানতে হাজির হয়েছিলাম কিওকুশিন আই.এফ.কে বেঙ্গলের প্রশিক্ষক জয়জিৎ চাটুইয়ের কাছে। এই প্রশিক্ষকের মতে,” আগে ক‍্যারাটে একটু উঁচু ক্লাসের ছেলেরাই শুধু শিখতে আসত, তা- ও খুব গোপনে।বাড়ির থেকে অনেকটা দূরে। কিন্তু এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে।তার কারন হিসাবে প্রথমেই বলতে হয়, মহিলারা বাইরে বেরোলে কখনো কখনো নানা রকম পরিস্থিতির শিকার হন। সেই কারনে মহিলারা সেল্ফ ডিফেন্সের জন্য ক‍্যারাটের দিকে ঝুঁকেছেন।

তাছাড়া বাচ্চারা ও আজ নিরাপদ নয়, কিডন্যাপিং,ধর্ষণ সহ নানা ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।তাদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে একদম ছোট বয়স থেকে বাবা-মায়েরা প্রশিক্ষন কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন।তবে এ সব ছাড়াও মহিলা- পুরুষ নির্বিশেষে আজকাল বডি ফিটনেসের জন‍্য ও অনেকে ক‍্যারাটের ক্লাসে ভর্তি হচ্ছেন।” ক‍্যারাটের ইতিহাস হাতড়াতে গিয়ে জানা গেল ‘ ক‍্যারাটে’ – উদ্ভব হয়েছে ‘মার্শাল আর্ট ‘থেকে। আর ‘মার্শাল আর্ট’-এর আঁতুরঘর হল আমাদের ভারতবর্ষ। কারন প্রাচীন যুগে তুর্কী আক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য কিছু বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ‘মার্শাল আর্ট ‘শুরু করেন। এখান থেকেই বোধিধর্মা নামে একজন ভারতীয় কবিরাজ চীনে গিয়ে প্রথম ‘মার্শাল আর্ট’ শুরু করেন। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ‘মার্শাল আর্ট ‘হল ‘ কলারি পাইতু’। সেটা ভারতের কেরালায় এখনও আছে।’ মার্শাল আর্ট’-এর মধ্যেই আছে ক‍্যারাটে, জুডো, বক্সিং, রেস্ট- লিং , ফেন্- সিং ,কুম্- ফু , উ – সু। তবে জাপান ক‍্যারাটেকে কিছুটা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রয়োগ করেছে। জাপানের ওকিনাওয়া ক‍্যারাটের পীঠস্থান।

ক‍্যারাটেতে কোন ছেলে বা মেয়ে ব্ল‍্যাক বেল্ট পেলে ভবিষ্যতে কি বিশেষ সুবিধা পাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে জয়জিৎ চাটুই জানান যে, ” আমি মিথ্যে আশ্বাস দেব না, ভারতে একজন ব্ল‍্যাক বেল্ট হোল্ডার তেমন কোন সুবিধা পায় না। ব্ল‍্যাক বেল্ট হল একটা বিশেষ সন্মান। ব্ল‍্যাক বেল্টের ও আবার অনেক গুলো ধাপ আছে। তাই ব্ল‍্যাক বেল্ট ফাস্ট ড‍্যান হওয়া মানে কলেজে ঢোকা। আর এখান থেকেই আসল শিক্ষার শুরু। তবে ব্ল‍্যাক বেল্ট পেলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবিধা পাওয়া যায়। তাছাড়া একজন ফুল কনট‍্যাক্ট ব্ল‍্যাক বেল্ট পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা হার না মানা মনোভাব তৈরি হয়। আত্মবিশ্বাস ও অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। যেটা জীবনের প্রতি পদক্ষেপের জন্য প্রয়োজন।

শেষে এটাই বলব, ক‍্যারাটের মাধ্যমে আমরা একজন বাচ্চার মধ্যে যদি একটা ফাইটিং স্পিরিট ঢুকিয়ে দিতে পারি, সেখানেই আমাদের বড় সাকসেস।।

“গত বছর দীঘার গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে আই. এফ. কে বেঙ্গলের কিছু মুহূর্ত।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.