গোপাল দেবনাথ: কলকাতা, ১১মে ২০২০। আজ সারা বিশ্বজুড়ে কেবলমাত্র একটাই আলোচনা, হবে নাই বা কেন চীনের উহান প্রদেশে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ এর আক্রমণে বিশ্বজুড়ে মহামারী শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আমাদের দেশ তথা এই রাজ্যও একই সমস্যায় ভুগছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলছে সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। সারা বিশ্বে কোথাও কোনো সেই অর্থে উৎসব, পার্বন, অনুষ্ঠান হচ্ছে না।
মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে রোজগার ও বন্ধ। যে সকল মানুষ দিন আনা দিন খাওয়া তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। আমাদের রাজ্যেও এই মুহূর্তে পূজা অর্চনা বহু জন সমাগমে পালন করা সম্ভবপর হচ্ছে না। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে বহু পুজো পার্বন হয়ে থাকে আমাদের রাজ্যে, কিন্তু লক ডাউনের কারণে কুমোরটুলির বহু দেবদেবীর মূর্তি আজও পড়ে আছে ক্রেতার দেখা পাওয়া যায়নি।
এই বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই কুমোরটুলি তে মন্দা চলছে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোর অগ্রিম দেওয়া শুরু হয় কুমোরটুলির শিল্পীদের, এই বছর হতাশা ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। কুমোরটুলির শিল্পীরা অনেকেই অর্থের অভাবে অর্ধাহারে বা অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন এই সকল মৃৎ শিল্পীদের কথা ভেবে আজ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পক্ষ থেকে কুমোরটুলি তে মৃৎশিল্পী মিন্টু পালের স্টুডিও থেকে এলাকার দুঃস্থ মৃৎ শিল্পীদের হাতে পুজো কমিটির পক্ষ থেকে কয়েকশ মানুষের হাতে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট তুলে দিলেন সংস্থার সম্পাদক সজল ঘোষ সহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
এই বছর সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির ৮৫তম বর্ষ। আজই এই পুজো কমিটির পক্ষে সজল ঘোষ মৃৎশিল্পী মিন্টু পালের হাতে ঠাকুরের বায়নার অগ্রিম চেক তুলে দিলেন। এই এলাকার মূর্তি তৈরির সাথে যুক্ত শিল্পী ও সহযোগীরা এই উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
পুজো কমিটির সম্পাদক জানালেন, আমাদের আবেদন আপনারাও থাকুন, পুজো ছোট হবে, কি বড় হবে সেটা আমরা জানি না, কিন্তু পুজো তো একটা করতেই হবে (সে নমঃ নমঃ করেও যদি হয় তা হলেও)। বাঙালির শ্রেষ্ঠ এই শারদ উৎসব হবেই। পূজাকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে ৫০ হাজার কোটি টাকার একটা বাজার তৈরি হয়, পুজো না হলে বাজার টা পুরো ধ্বংস হবে, তাতে মারা পড়বেন বিশেষ করে প্রান্তিক গরিব হাজার হাজার মানুষ। আবার যদি অসুখটা থেকে যায় তাহলে পুজো দেখতে আসাটাও বিড়ম্বনা, সেক্ষেত্রেও বড় পূজো কোনো ভাবেই সম্ভবপর নয়।
মনে হয় না আগামী কয়েক মাসের মধ্যে করোনা আমাদের জীবন থেকে মুছে যাবে, কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে যদি বাঁচতে হয় তাহলে করোনার সঙ্গে লড়াই করেই বাঁচতে হবে, তাই আমাদের আজ থেকেই যাত্রা শুরু হলো। অবশ্যই আমরা ভবিষ্যতে সমস্ত সরকারি বিধি নিয়ম যা যা থাকবে সমস্ত কিছুকেই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো, রোগ ছড়িয়ে পড়ার মতন বিন্দুমাত্র ভুল কাজ আমরা করব না এই প্রতিশ্রুতি এখনই দিতে পারি।
দুর্গোৎসব প্রতি বছর ই হবে। সাধারণ মানুষের জীবন আমাদের কাছে অনেক বেশি মূল্যবান।
Be First to Comment