————–শুভ জন্মদিন জ্যাকি চ্যান————
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ১৯৭৩ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ব্রুসলীর মৃত্যু হয়। সবাই হায় হায় করে উঠে কুংফুর অপমৃত্যু হলো ভেবে। কারণ ব্রুসলীর জায়গা দখল করবার মতো ব্যক্তিত্ব গোটা এশিয়াতে ছিল না। অনেক দিন কুংফু রাজার সিংহাসন ছিল খালি। শূন্যস্থান পূরণ করবার জন্যই যেন আবির্ভাব ঘটল জ্যাকি চ্যানের— এশিয়ার নতুন সূর্য। কুংফুর সঙ্গে কমেডি মিশিয়ে জ্যাকি চ্যান সৃষ্টি করলেন ভিন্ন ধারার একটি আঙ্গিক। ব্রুসলীর মতো তিনিও কুংফুকে দৃষ্টিনন্দন করে তুললেন অসাধারণ দক্ষতা দিয়ে। জ্যাকির ছবি অ্যাকশনে ভরপুর, ভায়োলেন্স তিনি এড়িয়ে যান ইচ্ছে করেই। কারণ জ্যাকির বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি ভক্তদের বেশিরভাগই শিশু-কিশোর।
জ্যাকির পুরো নাম জ্যাকি চ্যান কোং সাং। এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই তারকাটির আজ সব আছে, যা চেয়েছেন তা-ই পেয়েছেন। কিন্তু তার জন্ম সোনার চামচ মুখে নিয়ে নয়। এতোই গরীব ছিলেন বাবা-মা যে জ্যাকির জন্মের পর তারা ছেলের ভরণপোষণ যদি করতে না পারেন সেজন্য ডেলিভারির ডাক্তার জ্যাকির বাবা-মাকে দু’শ ডলার দিয়ে সদ্যোজাত সন্তানটিকে কিনে নিতে চেয়েছিলেন। জ্যাকির বাবা রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের এক পারিবারিক বন্ধু এসে বললেন— ‘তোমাদের দু’জনেরই বয়স এখন চল্লিশের ওপরে, হয়তো এটাই তোমাদের একমাত্র সন্তান। আর সন্তান না-ও হতে পারে। কাজেই ওকে বেচে না দেয়াই ভাল।’ পরে ওই বন্ধুই হাসপাতালে বিল মিটিয়ে দেন। জ্যাকির বয়স যখন সাত, অস্ট্রেলিয়া হাউজকীপিং-এর চাকরি পান তার বাবা-মা। তারা ছেলেকে হংকং-এর বেইজিং অপেরার স্কুলের এক মার্শাল আর্টের ওস্তাদের কাছে রেখে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। ওই অপেরা স্কুলে জ্যাকি প্রথম কুংফু শেখেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক য়্যু শানউয়ান তার সেরা সাত ছাত্রকে নিয়ে ‘সেভেন লিলি ফরচুনস’ নামে একটি দল গঠন করেন। এই সাত ছাত্রের মধ্যে পরবর্তীতে সবচেয়ে নাম করেন জ্যাকি চ্যান।আট বছর বয়সে জ্যাকি প্রথম ছবিতে অভিনয় করেন। পরবর্তী আট বছরে ডজন খানেক ছবিতে অভিনয় করেছেন জ্যাকি। কিন্তু ওসব ছবিতে অভিনয় করে তেমন আনন্দ পাননি। তার তখন লক্ষ্য ছিল অভিনেতা নয়, স্ট্যান্টম্যান হবেন।
১৯৭০ সালের গোড়ার দিকে হংকং-এর চলচ্চিত্র ভুবনে দুঃসাহসী স্ট্যান্টম্যান হিসাবে নাম ছড়িয়ে পড়ে জ্যাকির। তবে অভিনেতা হিসাবে প্রথম বড় ধরনের সুযোগ পান ১৯৭৬ সালে ‘নিউ ফিস্ট অব ফিউরি’ নামে একটি কুংফু ছবিতে। ছবিতে জ্যাকির মার্শাল আর্ট দেখে সবাই তাকে দ্বিতীয় ব্রুস লী বলে ডাকতে শুরু করে। হলিউডকে ঘিরে তার টার্গেট সফল হয়েছে ‘রাশ আওয়ার’ সুপারহিট হবার সুবাদে। যদিও আশির দশকের শুরুতে জ্যাকি কয়েকটি হলিউডি ছবিতে অভিনয় করেছেন। কিন্তু ওগুলো তেমন সাড়া জাগাতে না পারলেও হাল ছেড়ে দেননি জ্যাকি। বলেছেন, ‘শুধু ভক্তদের অগণিত চিঠিই আমাকে খারাপ সময়গুলোতেও মাটির উপরে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করেছে।’ জ্যাকি শুধু অভিনেতাই নন, তিনি একজন সফল চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও বটে। তবে পরিচালক হিসাবেও তিনি বড্ড খুঁতখুঁতে। আর এ জন্য হংকং-এ অন্যান্য পরিচালকদের যেখানে একটি ছবি শেষ করতে লাগে মাত্র তিন মাস, সেখানে জ্যাকি ছবি বানাতে বছর পার করে দেন। ১৯৯১ সালে তার ‘আর্মার অব গড-২ অপারেশন কনভয়’ মুক্তি পায়। ১৩ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত ওই সময় হংকং-এর সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ ছবিটি শেষ করতে জ্যাকির প্রায় দু’বছর লেগেছে। জ্যাকি এখন টাকার বিছানায় ঘুমান। অথচ একসময় দাঁত মাজার ব্রাশ কেনার পয়সাও তার ছিল না। সে দিনগুলোকে আজও ভোলেননি তিনি। তাই তিনি তার বেশিরভাগ সম্পদ বিলিয়ে দিচ্ছেন গরীব দুঃখীদের মাঝে। ইদানীং সমাজ সেবামূলক কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় জ্যাকিকে।এর কারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, গরীব ঘরে জন্ম আমার। দশ বছর একটি অপেরা মার্শাল আর্টস স্কুলে ছিলাম। প্রতি মাসে রেড ক্রসের লোকেরা আসত কাপড়, জুতো কিংবা দুধ নিয়ে। একবার এক প্রিস্ট আমাকে কিছু দুধ দিলে আমি বললাম, ‘ধন্যবাদ’। তিনি বললেন, ‘আমাকে ধন্যবাদ দিয়ো না। তুমি যখন বড় হবে, তখন অন্যদেরকে সাহায্য করবে,’ আমি ওই মানুষটির মুখ আজও ভুলিনি। পরে আমি ‘জ্যাকি চ্যান ফাউন্ডেশন’ গড়ে তুলি।
জ্যাকি চ্যান হংকং-এর পো লিউং কাক চ্যারিটি থেকে দশটি অনাথ বাচ্চাকে দত্তক নিয়েছেন। অনেক ক্যান্সার রোগী শিশুদের ব্যয়বহুল অপারেশনের খরচ যুগিয়ে তাদের জীবন রক্ষা করছেন। তাকে ইউনাইটেড নেশনস গুডউইল অ্যামবাসাডর করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের অ্যান্টি স্মোকিং অ্যামবাসাডরও জ্যাকি। এজন্য তিনি ধূমপানও ছেড়েছেন।
জ্যাকি চ্যান ১৯৫৪ সালের আজকের দিনে (৮ এপ্রিল) হংকং-এ জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment