#এই পাঁচটি শিল্প নতুন ভাবে চেনাবে করোনা পরবর্তী পৃথিবীকে।#
রণবীর ভট্টাচার্য: কলকাতা, ১০ জুন, ২০২০। সারা পৃথিবী এখন করোনার সংক্রমণ নিয়ে জর্জরিত। টিকা কবে পাওয়া যাবে সেই নিয়ে গবেষণা চলছে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে। তবে আশার কথা যে নিউজিল্যান্ডের মত দেশ কিন্তু ইতিমধ্যেই অনেকটা এগিয়ে যেতে পেরেছে এই করোনা মহামারী সামলানোর ক্ষেত্রে। কিন্তু প্রতিটি উন্নতিশীল দেশের কাছেই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কিভাবে অর্থনীতির চাকা পুনরায় আগের মত গতিশীল করা যেতে পারে। তবে একটা দিক স্পষ্ট যে তথাকথিত বেশ কিছু শিল্পের পরিবর্তন হতে চলেছে করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে। বিশেষ পাঁচটি শিল্পের কথা আমরা আলোচনা করব, যেখানে নতুন দিশা ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে।
১। কর্মক্ষেত্র নির্ভর শিল্প : সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস যাওয়ার প্রস্তুতি, এই অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটেছে লকডাউন এর সময়ে অনেকেরই। নিজের ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ অথবা স্মার্ট ফোন নিয়ে কাজ করার নতুন জগতে সড়গড় হয়ে গিয়েছেন অনেকেই। করোনা বিদায় নিলেও কিন্তু এই অভ্যাসের পরিবর্তন রাতারাতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। বিভিন্ন কোম্পানিকে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুতের বিল বাবদ যে খরচ করতে হয়, তা অনেকটা হ্রাস পাবে। ব্যয় সংকোচের দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বলাই বাহুল্য, বিশেষ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এই ট্রেন্ড।
২। শিক্ষা : অনলাইন শিক্ষা কি এবং তার পরিধি সম্পর্কে অনেকেই অবহিত হয়েছেন এই সময়ে। শুধুমাত্র স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি নয়, বিভিন্ন পেশাদারী শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বলতে দ্বিধা নেই যে অনলাইন শিক্ষার অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে। বিশেষ করে শিশুর মানসিক প্রসারের দিকটি ভাবলে, অনলাইন শিক্ষা সেইরকম কার্যকরী নিশ্চয়ই নয়। তবে দিনের আলোর মত স্পষ্ট যে সামনের দিনে এই ক্ষেত্রে অনেক উদ্ভাবন আসতে চলেছে যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে তাদের কোর্স চালু তো করবেই, তার সাথে সাথে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। গৃহ শিক্ষক বা হোম টিউটর, টিউটোরিয়াল বা কোচিং সেন্টারগুলো কিন্তু সামনের দিনে সমস্যায় পড়তে চলেছে। সামগ্রিক ভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রে পট পরিবর্তন হতে চলেছেন সামনের দিনে।
৩। বিনোদন : লকডাউনের মধ্যে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ইউটিউবে ওয়েব সিরিজ, সিনেমা দেখেছেন এরকম মানুষের সংখ্যা কিন্তু কম নয় সারা পৃথিবীতে। নেটফ্লিকস,অ্যামাজন প্রাইম,ডিজনি হটস্টারের মত নাম এখন অনেকের কাছেই সুপরিচিত। সামনের দিনে কি সিনেমা হলে মানুষ আর সিনেমা দেখতে যাবে না স্মার্টফোনেই দেখে নেবে? দর্শকদের ইচ্ছের কথা মাথায় রেখে প্রযোজক এবং পরিচালকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যদি করতেই হয়, সেই ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী রাজস্বের দিকটি নিয়েও ভাবনা চিন্তার অবকাশ রয়েছে। লকডাউনের মধ্যে টিভির টিআরপি যেই হারে বাড়ছে তাতে টিভির ভবিষ্যত নিয়ে আশায় বুক বাঁধা যায়। করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে অনেক নতুন জিনিস নিয়ে এগোতে শিখবে বিনোদনের দুনিয়া। ৪। হোটেল ব্যবসা : এই একটি শিল্প যা নিয়ে শেষ কয়েক মাসে নেতিবাচক আলোচনা হয়েছে বেশি, পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশেও অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি সঙ্গীন।
তবে এই ক্ষেত্রেও নামীদামী ব্র্যান্ডের সুবিধা অনেকটাই। সামাজিক দূরত্ব মেনে যদি কেউ পরিষেবা দিতে পারে, তাহলে সুযোগ থাকবে। তবে সামনের দিনে রাতারাতি পরিবর্তনের আশা করা উচিত নয়। এয়ারলাইনসের ক্ষেত্রেও আশাবাদী হওয়ার উপায় নেই।
৫। পার্সোনাল কেয়ার বা নিজের খেয়াল রাখা : রোজকার হুড়োহুড়ি বা তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকার থেকে লম্বা বিরতি দিয়েছে করোনা। দীর্ঘ সময় বাড়িতে থাকতে থাকতে নৈরাশ্য কিংবা বিষণ্ণতা ঘিরে ধরেছে অনেককেই। যারা বাইরে কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন কিংবা কাজ হারিয়ে কর্মহীন, সবার ক্ষেত্রেই কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের পর্যাপ্ত খেয়াল রাখা আবশ্যিক হয়ে পড়েছে।
করোনা পরবর্তী সময়েও কিন্তু নিজেকে মানসিক ভাবে ভালো জায়গায় রাখা একান্তই দরকার। এতদিন স্রেফ আলোচনার পর্যায়ে থাকলেও এখন কিন্তু আর হেলা ফেলার জায়গায় নেই মানসিক স্বাস্থ্য। উন্নতশীল দেশের মানুষদের ক্ষেত্রে এটা যেন বিধিসম্মত সতর্কীকরনের মত দরকারী হয়ে পড়েছে।
করোনা পরবর্তী পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলা খুব সহজ না হলেও, খুব কঠিন হবে না। প্রযুক্তি যে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে তা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। তবে নতুন দক্ষতা অর্জন করার সাথে সাথে মানিয়ে নেওয়াও চাই।
আর যাই হোক, বাজার অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী কোন সংকটের পর বাজারে চাহিদা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তাই নিজেকে প্রস্তুত করে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে সবাইকেই।
Be First to Comment