Press "Enter" to skip to content

কারাগারের তিক্ত ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৮৩ সালে গু‘নে নির্মাণ করেন ‘দেয়াল’ (Duvar)। এটিই ছিল তাঁর নির্মিত সর্বশেষ ছবি…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ ই ল মা জ গু’ নে

বাবলু ভট্টাচার্য : যখন কিংবদন্তি এই মানুষটির জন্ম তখন তুরস্কে রাজনৈতিক পালা বদল চলছিল। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও তেমন মজবুত ছিল না। এমনই পরিস্থিতির মধ্যে বেড়ে উঠতে থাকা গু‘নে। দেখতে থাকেন সমাজের চলমান অরাজকতা, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, ক্ষমতাসীন দলের দমন-পীড়ন।

গু‘নে ভর্তি হন আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশুনা করেন আইন ও অর্থনীতি বিষয়ে। মনের ভিতর যার চলচ্চিত্র তিনি কীভাবে অন্য বিষয়ে স্থির হবেন! তাঁর বয়স যখন ২১, তখন তিনি প্রবেশ করেন চলচ্চিত্র জগতে। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তুরস্কের আধুনিক চলচ্চিত্রধারার শক্তিশালী অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৬০ এর দশকে তুরস্কের রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছলে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার জন্য সরকার বিরোধীদলের উপর হামলা, নির্যাতন শুরু করে। ভয়ংকর এই পরিস্থিতির অভিজ্ঞতাই গু‘নে-কে পরবর্তীতে রাজনৈতিকভাবে সচেতন একজন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।

সাধারণ শোষিত মানুষের চরম দুর্দশা, তাদের মৌলিক অধিকার ইত্যাদি সবকিছু যখন ভুলুণ্ঠিত ঠিক তখনই গু‘নে ‘ইক্যুয়েশনস উইথ থ্রি স্ট্রেনজারস’ নামে এক উপন্যাস লিখে ফেলেন। এ উপন্যাসে উঠে আসে রাষ্ট্রযন্ত্রের কূট-কৌশলীদের আসল রূপ। ফলে গ্রেফতার হন গু‘নে।

এ ঘটনা জীবনে প্রথমবারের মতো জেলে যাওয়া ইলমাজ গুনে’র মনোবল আরও বাড়িয়ে দেয়। সাহিত্য নয় এবার তিনি পরিকল্পনা করেন সেলুলয়েডে রাষ্ট্রের কূট-কৌশলীদের মুখোশ খুলে ফেলার।

জেল থেকে মুক্তি পেয়েই ১৯৬৫ সালের দিকে নিজেই খুলে বসেন একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। আর তা থেকেই ১৯৭০ সালে নিজে নির্মাণ করেন UMUT চলচ্চিত্রটি। প্রথম চলচ্চিত্র দিয়েই শাসক শ্রেণীর চরম শত্রুতে পরিণত হন গু‘নে।

এ সময়টাতে তুরস্কের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। চারদিকে বেড়ে যায় গুপ্তহত্যা, রাহাজানি, গুম, গ্রেপ্তার। এ পরিস্থিতিতে আবারও ক্ষেপে গেলেন গু‘নে। ১৯৭১ সালে নির্মাণ করলেন ‘অপর’ (Umutsuzlar)।

১৯৭২ সালে এক বিদ্রোহী ছাত্রকে আশ্রয় দেওয়ার অজুহাতে সরকারি বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আবার জেলখানা। আবার চলচ্চিত্র নিয়ে জোর পড়াশুনা, স্ক্রিপ্ট লেখা। মজার ব্যাপার হলো গু‘নে কারাগারকে লাইব্রেরির মতোই ব্যবহার করেছিলেন।

এবারের জেলযাত্রায় গু‘নের যেন একটু বেশি সমস্যা হল, কারণ তাঁর ‘উদ্বেগ’ (Endsize), বন্ধু (Arkadas), ‘হতভাগ্য’ (Zavallilar) নামের চলচ্চিত্রগুলোর কাজ তিনি পুরোপুরি শেষ করতে পারেন নি। কিন্তু এ সমস্যাও কাটিয়ে ওঠেন ইলমাজ। বিশ্বস্ত সহযোগী সেরিফ গোরেন তাঁর চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়নে যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭৮ সালে নির্মিত হলো তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘পাল’ (Suru)। ৭০’র দশকের সামন্ত সমাজ, অসম ব্যবস্থাপনা, রাজনীতি, দুর্নীতিবাজ প্রশাসন, দারিদ্রতা, অসহায় মানুষের সংগ্রাম ও পরাজয় উপজীব্য ছিল এই চলচ্চিত্রে।

তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে ১৯৮০ সালে। এ সময় দেশের পরিস্থিতি ভয়ানকভাবে খারাপ হতে থাকে। স্বাধীন মত প্রকাশের সব রকম ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয় সামরিক শাসকের হাতে। এরকম পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালে জেল থেকে পালিয়ে ফ্রান্সে পরবাসী হন গু‘নে।

এখানে এসেই শুরু করলেন তাঁর সহযোগীদের চিত্রায়িত ‘Yol’ চলচ্চিত্রটির কাজ। সম্পাদনার জন্য চলে গেলেন সুইজারল্যান্ডে। ‘yol’ (যাত্রা) মুক্তি পেল ১৯৮২ তে। এই চলচ্চিত্রে উঠে এল এক কয়েদির জীবন, তুলে ধরলেন তার প্রতি রাষ্ট্রের নির্দয় আচরণ।

এই চলচ্চিত্রটির কারণে বিদেশের মাটিতেও জীবন সংশয় হয়ে উঠল গু‘নে-র। এবার তুরস্ক সরকার তাঁকে হত্যা করার জন্য গুপ্তচর নিয়োগ করল। হয়ত চলচ্চিত্রের জন্য জীবনের এমন সংশয় পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কম লোককেই মোকাবিলা করতে হয়েছিল।

গুপ্তঘাতক যখন এভাবে তাড়া করছে, তখন বিপ্লবী এই মানুষটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে yol এর প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। ফ্রান্স সরকার তখন বাধ্য হয়েই তাঁকে দেহরক্ষী দিয়ে চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির করেছিল। এমনকি ইন্টারপোলের হুলিয়া উপেক্ষা করে পুরস্কার গ্রহণের পর তিনি উৎসবস্থল থেকে উধাও হয়ে যান।

এ রকম পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের তৎকালীন সরকার তাঁকে নানাভাবে সহযোগিতা করে। তাদের সহযোগিতায় কারাগারের সেই তিক্ত ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৮৩ সালে গু‘নে নির্মাণ করেন ‘দেয়াল’ (Duvar)। এটিই ছিল তাঁর নির্মিত সর্বশেষ ছবি।

সামরিক সরকার যতদিন তুরস্কে ছিল ইলমাজ গু‘নে-র নামই উচ্চারিত হতে দেয়নি সেই দেশে। সরকার তাঁর পরিচালিত ও অভিনীত ১১টি চলচ্চিত্র ধ্বংস করে ফেলে। বাতিল করে তাঁর নাগরিকত্ব।

 

ফ্রান্সের প্যারিসে ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৪ দেশত্যাগী ও নিঃস্ব অবস্থায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন গু’নে।

ইলমাজ গু‘নে ১৯৩৭ সালের আজকের দিনে (১ এপ্রিল) তুরস্কের আদানায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.