Press "Enter" to skip to content

করোনা সংকট মিটবেই, এই বিশ্বে জল সংকট ভয়াবহ আকার হয়ে উঠতে চলেছে!

Spread the love

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা, নিঃসন্দেহে করোনা ভাইরাসে বিশ্ব কাঁপছে। একদিন ঝড় থেমে থেমে যাবে। পৃথিবী আবার শান্ত হবে। জীবনের ছন্দে মানুষ ফিরে আসবে স্বাভাবিক জীবনে। কিন্তু এই পৃথিবীতে আসছে তীব্র জল সংকট। ভূ বিজ্ঞানীরা কবে থেকেই সাবধান করে চলেছেন।কিন্তু হেলদোল নেই মানুষের। হেলদোল নেই প্রশাসনের।

নিয়ম রক্ষার প্রচার চালানো ছাড়া বিশেষ কিছু হচ্ছে না। আমাদের রাজ্যের কথাই ধরা যাক। কথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম মানুষ বোঝে না। আমাদের রাজ্যেও মানুষ জলের অভাব বলতে কি বোঝায় তার সম্যক ধারণা নেই।প্রকৃতির আশীর্বাদে আমাদের রাজ্যে জল অপর্যাপ্ত। অবশ্য দার্জিলিং এর পার্বত্য অঞ্চল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার প্রতন্ত গ্রামের প্রান্তিক মানুষরা জানেন জলকষ্ট কাকে বলে। অথচ রাজ্যের সমতলভূমি অঞ্চলের মানুষজন বিশেষ করে কলকাতার অধিকাংশ নাগরিক যে পরিমান জল অপচয় করেন তা সামাজিক অপরাধ। প্রশাসনিক স্তরে ঢিলেঢালা মনোভাবে যে জল পরিষেবার ব্যবস্থা আছে সেখানেও অপচয় লজ্জাজনক।উত্তর কলকাতায় যারা থাকেন, জানেন টালা জলাধারের জলের অপচয় কি পরিমাণে হয়।একটু এগিয়ে আসুন দমদম রেল স্টেশনে। সেখানে রেলওয়ে জলাধার থেকে প্রতিদিন গ্যালন গ্যালন জল অপচয় হচ্ছে। এমন জলের অপচয় কলকাতায় যত্রতত্র। প্রবাদ বলে, আপনি আচরি ধর্ম, অপরে শেখাও। প্রশাসন, সরকারি স্তরে রোজ প্রচুর জল স্রেফ অবহেলায় নষ্ট হয়। সেখানে নাগরিক সচেতনতা বাড়বে তা কি করে আশা করা যায়? ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ সাধারণসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা করে ২২মার্চ বিশ্ব জল উৎসব। উদ্দেশ্য, বিশ্বের কাছে জলের গুরুত্ব তুলে ধরা।

এক বছর আগে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনে বিশ্ব জলদিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। কারণ, বিশ্ব জুড়ে জল সংকট বাড়ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে জল সংকট প্রবল হবে দক্ষিণ কেপটাউনে। জলসংকট প্রবল হতে চলেছে সাওপাওলো, বেজিং, জাকার্তা ও কায়রোসহ ১২টি শহরে। আমাদের দেশে বিপদসীমার মুখে আছে বেঙ্গালুরু, জামশেদপুর, কানপুর,আসানসোল, মিরাট, ফরিদাবাদ বিশাখাপত্তনাম। সমীক্ষা বলছে, ২০৫০সালের মধ্যে কলকাতায় জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটবে।২.৫ মিলিয়ন মানুষের পদার্পণ ঘটবে শহরে। ফলে এখনই বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংস্থান ও বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা গেলে শহরের পরিকাঠামোই ভেঙে পড়বে। অভিজ্ঞজনেদের বক্তব্য, একটি মোটরগাড়ি তৈরি করতে জল লাগে একটি সুইমিং পুলের সমান।
শহর কলকাতায় মাথাপিছু জল সরবরাহের ঊর্ধ্বসীমা নেই। তবে পুরসভার প্রকল্পগুলিতে প্রতিদিন ২৫০-৩০০মিলিয়ন গ্যালন জল সরবরাহ হয়। যার জন্য খরচ হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা।গঙ্গার জলস্তর কমছে। বৃষ্টির পরিমাণও কমছে।শহরের ৮৫ শতাংশ জল ই ভূগর্ভস্থ জল।রাষ্ট্রসংঘের সমীক্ষা, তৃতীয় বিশ্বে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসে। ফলে বাড়ে কলোনি ও বসতি। ভোটের কথা মাথায় রেখে সেখানে জল দেওয়া হয় নিখরচায়।গ্রামাঞ্চলে কিম্বা মফস্বলে বহুজাতিক জল ব্যবসায়ীরা তাদের ঠান্ডা পানীয় উৎপাদনের মূল উপাদান জল মাটি থেকে তুলে নিচ্ছে ইচ্ছেমত।বিশ্ব ব্যাংকের সমীক্ষা, ভারতের ২১ শতাংশ ছোঁয়াচে রোগের কারণ বিশুদ্ধ পানিও জলের অভাব। এদেশে প্রতি বছর প্রায় সাত লক্ষ শিশুর মৃত্যু হয় জলবাহিত রোগের জন্য।

ইতিমধ্যেই ভারতের শিল্পপতিদের সমন্বয় সমিতি জল সরবরাহ ও বৃষ্টির জল সংরক্ষণের সবক্ষেত্রেই পাবলিক প্রাইভেট অংশীদারিত্বের কথা বলেছেন।এই সমিতির মুখপাত্র শ্রী মুকুন্দ বাসুদেবন দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদেরও জল কেনার প্রস্তাব রেখেছেন। রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বলেছে, রাজ্যের ৩৮শতাংশ ব্লকের জল আর্সেনিক ও ফ্লুরাইডে দূষিত। আমরা করোনা নিয়ে চিন্তিত, অথচ এই দূষিত জল সরাসরি ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারের ফলে আমাদের শরীরে যে সব ব্যাধি বাসা বাঁধছে সেটা কতটা বিপদজনক তা বলার নয়। বিখ্যাত ব্র্যান্ডের জল মূলত শহরাঞ্চলে মেলে।বাকি ক্ষেত্রে ছোট ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ গভীর নলকূপ এর জল যদি দিত তাহলেও কথা ছিল।তারা বোতল বন্দী করছে সেই আর্সেনিক ফ্লুরাইডযুক্ত জল। সেই জলের স্বাদ খাঁটি করতে এবং আয়রন ও গন্ধ কাটাতে ব্যবহার করা হয় বেরিয়াস হাইড্র। ডাক্তাররা বলেন, এই জল নিয়মিত খেলে বিষ আলসার হয়। যা পরিণত হতে পারে ক্যান্সারে।

সমীক্ষা বলছে সারা বিশ্বে প্রতি একশো জনে একজন প্রতি লিটার পানীয় জলের সঙ্গে ০.০৫মিলিগ্রাম আর্সেনিক পান করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা থেকে মুক্তি পেলেও পানীয় জলের সংকট আগামীদিনে বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনহানির কারণ হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ মহল।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.