* রাজা রামমোহন রায়ের নিজের উদ্যোগে তৈরী অসমাপ্ত বাড়ি।*
শুভদ্যুতি দত্ত: কলকাতা, ২৪ মে, ২০২০।করোনা-র প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে এক অঘোষিত বন্ধের চেহারা। এ ছবি জনতা কার্ফুর সময়কাল থেকেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা সামাল দিতে গিয়ে লকডাউনে। এর ফলে, তালাবন্দী অবস্থা। না যযৌ না তথৌ অবস্থা। প্রায় দুই মাস অতিক্রান্ত। ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ – এই প্রবাদ সত্যি। এর ফাঁকে উড়ে এসে জুড়ে বসল আমপান ওরফে উম-পুনের আবহ। এবং নাকাল রাজ্যবাসীও।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে কেন্দ্র – রাজ্য তরজা। বিরোধীদের চাপ। সরকারের ও নতি স্বীকার। এর ফলশ্রুতিতে, খানাকূল ব্লকেও করোনা মহামারীর বাড় বাড়ন্ত। চলতি মাসের নিদান – ওষুধের দোকান একমাত্র ব্যতিক্রম। বাকি সবই লকডাউনের এর আওতায়। প্রশাসনের তরফে কড়া ফরমান। কলকাতা – রাধানগর সরাসরি বাস (সরকারি পরিষেবা)ও বন্ধ রয়েছে। রাজা রামমোহনের রাধানগরেই যে রাজাধিরাজ আজ ও উপেক্ষিত!
*রাজা রামমোহন রায়ের নামাঙ্কিত স্মৃতিফলক আজও সত্যি স্মৃতি মাত্র।*
রাজা রামমোহন রায়ের জন্মস্থান হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে। আরামবাগ মহকুমার বর্ধিষ্ণু অঞ্চল খানাকূল। নদীতেই ঘেরা ঐ এলাকা। রাধানগরের স্মৃতি মন্দিরের সাথে তাঁর স্মৃতি জাগরুক। রয়েছে এক পাঠাগার। অদূরেই কৃষ্ণনগর গ্রাম। সেখানেও জড়িয়ে পড়েই রয়েছে অজানা ইতিহাস। অনুরাগীদের বহুদিনের নানা দাবি পূরণ হয়নি। অমলিন রয়েছে তা আজও।কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাছে তাঁর নামাঙ্কিত পল্লী সমিতির তরফে বহু আবেদন – নিবেদন সত্ত্বেও সেই অর্থে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হুগলি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কৃষ্ণনগর গ্রামে লাঙ্গুলপাড়ায় যে অব্যবহৃত বিশাল জমি পড়ে রয়েছে সেখানে পার্ক গড়ে তোলা হয়। ফি- সহ শীতকালীন পিকনিকের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আসেন বহু পর্যটকেরা। যদিও এখানে তাদের কোনও থাকার ব্যবস্থা নেই। ফি – বছর জন্মদিনের অনুষ্ঠানেই সকালে প্রভাত ফেরিতে পড়ুয়াদের যোগদান । তিরোধান দিবসে স্মরণ। রামমোহন মেলা চালু হলেও তার আয়োজন নিয়ে এখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বাম আমলে ঐ মেলার প্রচলন। এ রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতার পালাবদলের পর তা আরও প্রকট। রাধানগর পল্লী সমিতি এ সবের উর্ধ্বে এক অরাজনৈতিক সংগঠন। রাষ্ট্রপতির কাছে রামমোহন নিয়ে দরবারে ও পিছপা নয়। সব নথি রয়েছে। তাঁর স্মৃতিতে হস্তক্ষেপ করতে চেয়েই চিঠিপত্রের ও বহু আদানপ্রদান হয়। তবুও অধরা। এই মুহূর্তে মারণ ভাইরাস করোনা-র প্রকোপ ও তার সচেতনতায় প্রচারের লক্ষ্যেই রাধানগর পল্লী সমিতিও টোটো নিয়ে পথে নামে। লিফলেট ও বিলি করে। এবং তা মাস দুয়েক আগের কথা। হতাশার ছবি তবুও। বাংলার নবজাগরণের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায়ের ২৪৮ তম জন্মদিন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উম-পুনের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শনে এসে সমাজ সংস্কারক রামমোহনকে স্মরণ করিয়ে দিতেও ভুললেন না।
*রাধানগর গ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত নকশা অনুযায়ী অর্ধ সম্পূর্ণ এই মন্দির- মসজিদ ও চার্চের আদলে তৈরী এই স্মৃতি মন্দিরটি। অভিযোগ রাধানগর পল্লী সমিতির।*
ঘটনাস্থল – বসিরহাট কলেজ। বিষয় – পর্যালোচনা বৈঠক। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিত। চলছে বিস্তারিত আলোচনা। এ নিয়েই সর্বস্তরে ছিল টানটান উত্তেজনা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অগ্রিম বাবদ ১০০০ কোটি টাকা অনুদান ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রী মোদী রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি নত মস্তকে স্মরণ করে জানিয়েছেন, বাংলার এই পবিত্র মাটিতে আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্বয়ং মোদী।
*রাজা রামমোহন রায়ের নামাঙ্কিত উদ্যান।*
ঘটনাচক্রে রাজাধিরাজের কথাও তুলে ধরেন প্রারম্ভিক বক্তব্যেই। ঘটনাস্থল – বসিরহাট কলেজ। জন্মদিনেই রাজ্য সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনাচক্রে পবিত্র রাজাধিরাজের জন্মবার্ষিকী হল। উম-পুনের তান্ডবের পাশাপাশি করোনা-র আবহের সাক্ষীও। সেই হিসেবে একেবারেই সাদামাটা। বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাঁর জন্মভিটেয় মাল্যদান করা হয়। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও নিয়ম রক্ষায়।
*রাজাধিরাজ রামমোহন রায়*
আগামী ২০২২ এর ২২ মে রাজা রামমোহন রায়ের জন্মের ২৫০ বছর পূর্তি। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে রাধানগর পল্লী সমিতি। এই ঐতিহ্যকে মান্যতা দিয়ে হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার রক্ষার আর্জি সমিতির। এর জন্য অনুরোধ রয়েছে সর্বস্তরে।
Be First to Comment