Press "Enter" to skip to content

করোনা মোকাবিলায় দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে বরানগর উদ্বাস্তু কলোনীতে অভিনব বাজার পরিষেবা……..

Spread the love

পিন্টু মাইতি: কলকাতা, ৪মে ২০২০। বরানগরের ১নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের গা ঘেঁষে অবস্থান করছে দুটি উদ্বাস্তু কলোনী। ভিটেমাটি হারিয়ে সন্তান-সন্ততি নিয়ে যখন বহু পরিবার হন্যে হয়ে মাথার উপর ছাদ খুঁজছিলেন, সে সময় তাঁদেরই কয়েকজন যুবকের সাহসী নেতৃত্বে ১৯৬৮ সালে এই অঞ্চলটিকে দখল করে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের সরকারের কাছে পুনর্বাসনের দাবী জানানো হয় । পাশের বাগজোলা খাল প্লাবিত হয়ে বন্যার প্রকোপে বহু মানুষ শরণার্থী হয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তৎকালীন সরকারী সাহায্যে স্হাপিত হয় ভারতপল্লী ও সর্বহারা উদ্বাস্তু কলোনী। মূলত নিম্নবিত্ত মানুষের বসবাসকৃত এই কলোনীর রূপায়ণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বিশিষ্ট উদ্বাস্তু নেতা গণপতি মজুমদার, স্বপন চক্রবর্তী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। তবুও সরকারী আনুকূল্য তেমন ভাবে না মেলায় পরিবর্তিত সরকারে মমতা ব্যানার্জী আসার পরে কলোনীর কিছু সংস্কার ও উন্নতি সাধন হয়েছে। এখনও দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলো গণপতি মজুমদারের সুযোগ্য নেতৃত্বের উপর ভরসা রেখে চলেছেন। মাঝখান থেকে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন তাঁদের কতিপয় আন্দোলনের গতিপথকে অবরুদ্ধ করলে একদিকে যেমন বেঁচে থাকার দাবি নিয়ে প্রস্তাব পেশ ধাক্কা খেয়েছে, অন্যদিকে পেট চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। কিন্তু তাঁদের সমস্যা ও সঙ্কটকে যাঁরা বোঝেন, তাঁদের মধ্যে সক্রিয় হয়ে হাল ধরেছেন ভারতপল্লীর সম্পাদক নবীন চক্রবর্তী ও সর্বহারা কলোনীর সম্পাদক রাজু পাল। সকলের কথা মাথায় রেখে অভিনব পদ্ধতিতে ৩রা মে তাঁরা আয়োজন করেছিলেন প্রায় চারশো বাসিন্দার “বিনামূল্যে বাজার পরিষেবা“ নামক খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচী। চাল-ডাল থেকে শুরু করে আলু-পেঁয়াজ, ডিম, সোয়াবিন, পাউরুটি, বিস্কুট, দুধ, মুড়ি, তেল এমনকি ডাবের জল পর্যন্ত রাখা ছিল নির্দিষ্ট টেবিলে। কুপন দেখিয়ে প্রতিটি কাউন্টার থেকে খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে প্রাপকদের গেটের অপর প্রান্ত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষ ভাবে আকর্ষিত ছিল রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজানো- অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ নামাঙ্কিত কিছু হাট-বাজারে যেভাবে বিকিকিনি চলত, তাঁরই ক্ষুদ্র সংস্করণ ছিল উক্ত পরিষেবা বাজার, তবে সবটাই ছিল বিনামূল্যে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সকলের হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে স্বাস্থ্য বিধি পালনে সদর্থক ভূমিকা পালন করেছে কলোনীর তরুণ-তরুণীরা।

গণপতি মজুমদার, দুই কলোনী-কমিটির সম্পাদক সহ রাকেশ কৌশল, বাবুনবাবু, সোমনাথবাবু ও অন্যান্য মহিলা সদস্যরা সংবেদনশীলতার সাথে কর্মসূচী পালন করেন। নবীন চক্রবর্তী বলেন, রবীন্দ্রনাথের প্রভাবে মানুষ কতটা শক্তিশালী হতে পারেন, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তাঁরাই। মানুষের স্বার্থে, মানুষের পাশে থাকার মনোবল বৃদ্ধির পেছনে কবিগুরুর নিরন্তর প্রেরণা রয়েছে। তাই এই দুর্দিনেও এলাকার সমস্ত সহৃদয় ব্যক্তি তাঁদের য্ৎসামান্য খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। গণপতি মজুমদার কিছুটা নস্ট্যালজিক হয়ে তাঁর আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি করে এ প্রজন্মের সহমর্মিতা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আজ এই খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিকে তাঁরা দান কিম্বা ত্রাণ হিসেবে দেখছেন না। মানুষের বিবেক বোধ ও ভালবাসাকে সম্মান জানিয়ে বাজার নামক সুসংহত পরিকল্পনার মাধ্যমে মাথা তুলে বাঁচার লড়াইকে প্রতিষ্ঠা করছেন মাত্র। পাশাপাশি কলোনীর উন্নয়ন ও প্রকল্পে সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সর্বহারা উদ্বাস্তু কলোনীর সম্পাদক রাজু পাল জানান, কলোনীর অবৈজ্ঞানিক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের উন্নতিকল্পে এবং পরিবারপিছু এক কাঠা করে জমি পুনর্বাসন হিসেবে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বাসিন্দাদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ছবি: সুবল সাহা

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.