মোল্লা জসিমউদ্দিন: মঙ্গলকোট, ২৪মে,২০২০। দুমাস পূর্বে এই রাজ্যে প্রথম দিকে কলকাতা সহ হাওড়া শহর এলাকায় যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চিত্র দেখা গিয়েছিল। তা সময়ের ব্যবধানে বাংলার প্রায় জেলায় অনুরূপ করোনা পরিস্থিতিতে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। একমাস আগে পূর্ব বর্ধমান জেলার সর্বপ্রথম করোনা পজিটিভ আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল খন্ডঘোষের বাদুলিয়ায়। একই পরিবারের কাকা-ভাইঝির। এরপর সদর বর্ধমান শহরের সুভাষপল্লির এক নার্সের। মেমারির দুজন, কেতুগ্রামের একজন, পূর্বস্থলীর দুজন, আউশগ্রাম – ভাতারের পাশাপাশি মঙ্গলকোটে একজন করে করোনা পজিটিভ মিলতে থাকে। আটের অধিক ব্লক এলাকায় যে হারে করোনা পজিটিভ মিলছে তা পূর্ব বর্ধমান জেলা রেডজোন হতে বেশি সময় লাগবেনা বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রথম দিকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় সকলেরই কলকাতা যোগ পাওয়া গেছে। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে যেসব করোনা পজিটিভদের সন্ধান মিলছে তারা প্রত্যেকেই ভিনরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক। মঙ্গলকোট – ভাতার – কালনা এলাকার করোনা রোগীদের যোগ সেই ভিনরাজ্য। ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি দেখার জন্য প্রশাসনিক ভাবে প্রতিটি ব্লকে গড়া হয়েছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। যেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখা হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের বৃহত্তর ব্লক মঙ্গলকোটে কয়েক হাজার রয়েছে ভিনরাজ্যে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিক। চেন্নাই – কেরালা – ব্যাঙ্গালোর – পাঞ্চাব – গুজরাট – তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যে কেউ ইমারতিতে, কেউ ব্যাগ ফ্যাক্টরিতে আবার কেউ কেউ কাপড়ের কাজ করে থাকে। গত একমাস আগে বিক্ষিপ্তভাবে বেসরকারি গাড়ি ( বাস, টাটা সুমো, মারুতি) ভাড়া করে শয়ে শয়ে মঙ্গলকোটে ফিরেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের দল। নামমাত্র হোম কোয়ারেন্টাইন এর নোটিশ সাঁটানো ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি বলে দাবি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা সেভাবে হয়নি এদের। এইসব পরিযায়ী শ্রমিকরা কয়েক মাস বাইরের ভিনরাজ্যে কাটানোর পর মঙ্গলকোটে বিভিন্ন এলাকায় সাইকেল – মোটরসাইকেলে দিব্যি ঘুরেছে বলে স্থানীয় সুত্রে প্রকাশ। গত দুসপ্তাহ ধরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারেরর প্রয়াসে ট্রেনে – বাসে করে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকরা ঢুকেছে এবং ঢুকছে এই বাংলায়। আর তাতেই একলাফে বেড়েছে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা। লালারস সংগ্রহ করে বেশিরভাগ জন কে হোম কোয়ারেন্টাইন এর থাকার মৌখিক নির্দেশ দিচ্ছে প্রশাসন বলে দাবি। যদিও প্রশাসনের তরফে করোনা রোধে সমস্তরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে প্রকাশ। গত ১৬ মে মঙ্গলকোটের নুতনহাটে চেন্নাই থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করা একজনের করোনা পজিটিভ মেলে। তাকে রিপোর্ট প্রকাশের আগেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়। অথচ তাকে প্রশাসনের করা সেই এলাকার ব্লক প্রশাসনের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকার কথা। মঙ্গলকোটের নুতনহাটে ওই আক্রান্ত ব্যক্তি নিজ বাড়ি যেতে ইচ্ছুক না হলেও তাকে একপ্রকার বাধ্য করানো হয় নিজের বাড়িতে থাকতে। ফলস্বরূপ যখন তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তখন তার বাড়ি সহ আশেপাশের ১৮ জন কেও নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান শহরে করোনা হাসপাতালে। এর পাশাপাশি ওই ব্যক্তির সাক্ষাতে যেসব ব্যক্তিরা এসেছে তাদেরও ‘গাঁ ছমছম কি হয় কি হয়’ অবস্থা? এর দায়ভার কার? মঙ্গলকোটের নুতনহাটে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অভিযোগ – ” ওই আক্রান্তের বাড়িতে আসা ব্লক হাসপাতালের আশা কর্মী কে (সে আবার মুখে মাস্ক বিহীন অবস্থায় বাড়ি বাড়ি নজরদারি চালান) বারবার আক্রান্তের পরিবার থেকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নিয়ে যেতে বললে কোন কর্ণপাত করেনি সে “। এই হাসপাতালের এক আধিকারিক আবার মুখে মাস্ক না দিয়ে করোনা সংবাদ নিয়ে নিয়মিত ইন্টারভিউ দেন! যদিও ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’ এর মতন বৃহস্পতিবার মঙ্গলকোটের নুতনহাট হাইস্কুল কে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখা শুরু হয়েছে। তবে যেসব কোয়ারেন্টাইন সেন্টার গুলি আগে থেকে খাতাকলমে চালু দেখানো হয়েছে। সেখানে কেউ সেভাবে নেই বলে অভিযোগ। মঙ্গলকোটের বড়বাজার, কাছাড়িডাঙ্গা, কামালপুর, জহরপুর, দেওলিয়া, কল্যানপুর প্রভৃতি গ্রামে গত সপ্তাহে গ্রাম পিছু দশের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক এসেছে। তাদের কে হোম কোয়ারেন্টাইন এর উপদেশ দিয়ে দায় সেরেছে প্রশাসন। হাজারের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক মঙ্গলকোটে গত দু’সপ্তাহে এসেছে। তাদের অনেকেরই লালারসের রিপোর্ট আসেনি বলে অভিযোগ। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে মঙ্গলকোটের বাজারঘাট – দোকানপাট – রাজনৈতিক দলের অফিস গুলি জমজমাট। ত্রাণ বিলির পাশাপাশি রমজানের ইফতার পার্টি গুলিতেও দেখা যাচ্ছেনা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিধিনিষেধ গুলি। এমতাবস্থায় ব্লক প্রশাসনের দায়সারা ভুমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছে মঙ্গলকোটবাসী৷ এব্যাপারে মঙ্গলকোট বিডিও কে ফোন করা হলে কোন সাড়া মেলেনি। তবে জেলা প্রশাসনের তরফে সমস্ত অভিযোগ গুলি খতিয়ে দেখার আশ্বাস মিলেছে।
করোনা নিয়ে প্রশাসনিক গাফিলতি, ফুঁসছে মঙ্গলকোট……
More from GeneralMore posts in General »
- আদিবাসী শিশু কল্যাণ বিদ্যাপীঠের ছাত্র-ছাত্রীদের সংগে এবার গোবরডাঙ্গা নকসা।
- কলকাতায় আইআইটি – জেইই এবং নিট কোচিংয়ে রাইস বানসাল এর নতুন উদ্যোগ…।
- নিউ দিল্লিতে কর্তব্য পথের নেতাজি মূর্তিতে লেফটেন্যান্ট পিল্লাইয়ের শ্রদ্ধা ও ভারতীয় সেনার সম্মান প্রদর্শন…..।
- এন্টোড কলকাতায় শিশু কিশোরদের শ্রবণ হ্রাস সমস্যার বৃদ্ধি মোকাবিলায় জাতীয় শ্রবণ সপ্তাহের আয়োজন করলো…।
- Healthy Kidneys, Healthier Lives: Manipal Hospitals Kolkata’s Expert Take on Prevention….
- প্রেস ক্লাব কলকাতায় বসন্ত উৎসব…।
Be First to Comment