—–শুভ জন্মদিন মল্লিকা সেনগুপ্ত—-
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, আশির দশকের একজন কবি হিসেবে তিনি যথেষ্ট স্বীকৃত। উপন্যাস লিখেও খ্যাতি পেয়েছিলেন। ‘স্ত্রীলিঙ্গ নির্মাণ’ নামে তাঁর একটি অসাধারণ গ্রন্থ রয়েছে। মহারানী কাশিশ্বরী কলেজের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক। নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তাঁর। সকল পরিচয় ছাড়িয়ে তিনি কবি। মাত্র একান্ন বছর বেঁচে ছিলেন কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত। ১৯৮৩ সালে মল্লিকা সেনগুপ্তের ‘চল্লিশ চাঁদের আয়ু’ শীর্ষক প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়।
এই প্রথম বইটিতেই তাঁর কবিতাগুলোর ভাবনা ছিল সামাজিক পটভূমিকায় নরনারীর সম্পর্ক। এরপর ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রতিভাস প্রকাশনার ‘আমি সিন্ধুর মেয়ে’। এছাড়াও ‘হা-ঘরে ও দেবদাসী’, ‘অর্ধেক পৃথিবী’, ‘মেয়েদের অ-আ-ক-খ’, ‘কথামানবী’, ‘দেওয়ালীর রাত’, ‘আমরা লাস্য আমরা লড়াই’, ‘পুরুষকে লেখা চিঠি’, ‘পুরুষের জন্য একশো কবিতা’, ‘বৃষ্টিমিছিল বারুদ মিছিল’ প্রভৃতি নানা স্বাদের কবিতার বই তিনি লিখে গেছেন। ২০০১ সালে কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত তাঁর শেষ উপন্যাস ছিল ‘কবির বৌঠান’। ২০০৬ সালে বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন সুকান্ত পুরস্কার। দিল্লির সাহিত্য আকাদেমির বাংলা বিভাগের সদস্য ছিলেন কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত।
সাহিত্য পত্রিকা ‘ভাষানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদিকা ছিলেন তিনি। ৯০-এর দশকে সানন্দা পত্রিকাতেও কবিতা সম্পাদনার কাজ করেছেন। মল্লিকা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিদ্যা নিয়ে এমএ এবং পিএইচডি করেছেন। ২০০৫ সালে তাঁর প্রথম ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসা করে প্রায় সাড়ে ৪বছর সুস্থতার সঙ্গেই কাজ করে গেছেন। মল্লিকা সেনগুপ্ত খুবই সহজ ভাষায় তুমুল প্রতিবাদী কবিতা লিখতে পারতেন। দৈনন্দিন জীবনের যে সকল অসঙ্গতি তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন কিংবা যে সকল অসামাজিক কর্মকান্ড সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, তার সূত্র ধরে তিনি প্রচন্ড ক্ষোভের কবিতা লিখেছেন। ২০০১ সালে বালিকাকে যৌনহয়রানির দায়ে বাসের ড্রাইভার হেলপারের গ্রেফতার হওয়া নিয়ে তিনি লিখেছেন মর্মস্পর্শী কবিতা।
এভাবেই মল্লিকা সেনগুপ্ত হয়ে ওঠেন সমাজসচেতন এক কবির নাম। নারীর জড়তা ঝেড়ে তিনি হয়ে ওঠেন কেবলই কবি। ব্যক্তিগত পরিচয় না থাকলেও তিনি হয়ে ওঠেন সকল পাঠকের প্রিয় কবি।
মল্লিকা সেনগুপ্ত ১৯৬০ সালের আজকের দিনে (২৭ মার্চ) নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment