**মহালয়ার কিছু কথা**
মতিলাল পটুয়া : কলকাতা, ৬ অক্টোবর, ২০২১।মহালয়ার ইতিহাস বহু পৌরাণিক ও বৃহৎ। তাই আমি আজ সংক্ষেপে মহালয়া নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই। কারন বাঙালিদের জীবনে মহালয়ার গুরুত্ব অপরিসীম । আমরা কম বেশি সকলেই দাদু , ঠাকুমা, দিদা ,বাবা ,মার থেকে জেনে আসছি
পিতৃলোককে স্মরণের অনুষ্ঠানই মহালয়া । কিন্তু এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে আরো পরিষ্কার ভাবে বলা যায় ” মহালয় ” এর অর্থ পূজা বা উত্সবের আলয়। আলয় শব্দের অর্থ আশ্রয় । আবার ‘মহালয় ‘ বলতে , ‘পিতৃলোককে ‘ বুঝিয়ে থাকে -যোখানে বিদেহী পিতৃপুরুষ যুগে যুগে অবস্থান করছেন । এভাবে বলতে গেলে পিতৃলোককে স্মরণের অনুষ্ঠানই মহালয়া। পিতৃ পক্ষের শেষ দিন হলো মহালয়া ।
আবার লগ্ন ও পক্ষের ভাষায় পিতৃপক্ষের অবসান লগ্ন অথবা দেবীপক্ষের পূর্ববর্তী অমাবস্যাকে মহালয়া বলা হয় । যুগ যুগ ধরে লক্ষ কোটি মানুষ মহালয়ার পুণ্যপ্রভাতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে তিল জল অঞ্জলি দিয়ে স্মরণ করে আসছেন তাঁদের বিদেহী পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে।
এরই নাম “তর্পণ”।
কথিত আছে দাতা কর্ন মৃত্যুর পর স্বর্গে খাবারের পরিবর্তে সোনা দানা পাচ্ছিলেন। এজন্য যমরাজকে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন যেহেতু কর্ন ষোল দিন যুদ্ধের পর মারা যান ও সেই সময় তর্পণ না করে কেবল মাত্র
সোনা দানা দান করে গেছেন তার বিদেহী পূর্বপুরুষরা খাবার পাননি এজন্য তার মৃত্যুর পর তিনিও খাবার পাবেন না । উপায় হিসাবে কর্নকে মহালয়ার সময় মর্তে এসে ষোল দিন তর্পণ করতে হয় তারপর থেকে খাদ্য লাভ করেন ।
সনাতন মতে, যে ব্যক্তি তর্পণে ইচ্ছুক হন, তাঁকে তাঁর পিতার মৃত্যুর তিথিতে তর্পণ করতে হয়।
এই তর্পণ ভোর রাত্রি থেকে শুরু হয়। হিন্দু ধর্মাম্বলীরা আমাদের দেশ সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে তাদের বিদেহী পূর্ব পুরুষদের উদ্যেশ্যে তর্পণ করে থাকেন। এই বাংলা সহ আমাদের প্রিয় শহর কলকাতায় তর্পনের দিন গঙ্গার ঘাটে ঘাটে ভোর রাত্রি থেকে শুরু হয় সাজো সাজো রব। হৈ চৈ । মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথি । নাম গুলি হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী,
ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী , নবমী ,দশমী ,একাদশী,
দ্বাদশী , ত্রয়োদশী ,চতুর্দশী ও অমাবস্যা ।
মহালয়ার ছয় দিন পর থেকে শুরু হয় মহা সপ্তমী ।
মহালয়ায় ঘটে পিতৃপক্ষের অবসান দেবীপক্ষের সূচনা ।
কে এই দেবী ? কিভাবে তার আবির্ভাব ?
কথিত আছে মহিষাসুর বড় সাধক ছিলেন । শুধু তাই নয় শক্তির লোভ ও ছিল প্রচন্ড । এজন্য কঠোর সাধনা করে সিদ্ধি লাভও করেন । সেই সঙ্গে লাভ করেন অমরত্ব জীবন । তাই অহংকারে মত্ত হয়ে শুরু করেন ধ্বংস লীলা । কাঁপিয়ে তোলেন স্বর্গ মর্ত পাতাল । চারিদিকে ত্রাহি ত্রাহি রব । ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর পর্যন্ত মহা সমস্যার মধ্যে পড়েন । সমস্ত পুরুষ শক্তি মহিষাসুরের কাছে পরাজিত হন । মহিষাসুর হয়ে ওঠেন দুর্গম। দুর্গম অসুর।
শেষ পর্যন্ত ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর দশটি অস্ত্র প্রদান করে সৃষ্টি করেন মহা নারীশক্তি দশভূজা দেবীকে । চার বর্ণের ৮ হাত এবং নারী শক্তির ২ হাত মিলে মোট ১০হাত দিয়ে
দশ অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে দেবী দশভূজা টানা নয় দিন যুদ্ধ করেন। চতুবর্ণ অর্থাত্ সকল বর্ণ ও নারী শক্তির হুঙ্কার ও অস্ত্রের ব্যবহারে দুর্গম অসুরকে বা অশুভ শক্তিকে বধ করেন বলে তার নাম হয় দুর্গা, অর্থাৎ দশভূজা “দেবীদুর্গা “।
মন্ত্র : ওঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা, ওম সর্ব মঙ্গলা মঙ্গলে শিবে সর্বার্থ সাধিকে স্মরণে
অস্ত্র: ত্রিশূল, খড়্গ, চক্র, বাণ, শক্তি, ঢাল, ধনুক, ঘণ্টা, পরশু, নাগপাশ ইত্যাদি।
দুর্গা পূজার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র বিভিন্ন তিথিতে
বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
দুর্গা পূজার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র পাঠ করলে ধরায় নেমে আসে শান্তি , অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটে । একই ভাবে সংসার সুখের হয় , দুরভূত হয় দুর্গতি । দুর্গতি নাশ হয়।
ওম শান্তি , শান্তি শান্তি শান্তি ।
Be First to Comment