শুভ জন্মদিন এডওয়ার্ড মাইকেল বেয়ার গ্রিলস
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠানের অসাধারণ উপস্থাপক ও সাহসী অভিযাত্রী হিসেবে এডওয়ার্ড মাইকেল বিয়ার গ্রিলস বিশ্বখ্যাত। চিফ স্কাউট, অভিযাত্রী, লেখক, প্রেরণাদায়ক বক্তা, টেলিভিশন উপস্থাপক- কী নন তিনি? কনজারভেটিভ পার্টির প্রয়াত রাজনীতিবিদ স্যার মাইকেল গ্রিলস ছিলেন বিয়ারের বাবা। মা লেডি গ্রিলস, যার মা প্যাট্রিসিয়া ফোর্ড ছিলেন পেশায় একজন রাজনীতিবিদ এবং সংসদ সদস্য। বিয়ার গ্রিলসের বড় বোন লারা ফসেট একজন টেনিস কোচ। লারাই বিয়ার গ্রিলসের ‘বিয়ার’ নামটি দেন যখন তার বয়স মাত্র এক সপ্তাহ।গ্রিলস ইটন হাউস, লুডগ্রুভ স্কুল, ইটন কলেজে শিক্ষা লাভ করেছেন। ইটন কলেজের ছাত্রাবস্থায় তিনি সেখানকার প্রথম পর্বতারোহণ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। খুব অল্প বয়সেই গ্রিলস তার বাবার কাছ থেকে পর্বতারোহণ এবং নৌচালনা শিখেছেন। তার বাবা নৌচালনায় দক্ষ ছিলেন। কৈশোরেই গ্রিলস স্কাইডাইভিং এবং কারাটে শেখেন। তিনি যোগ ও নিনজৎসু চর্চা করেন। আট বছর বয়সে তিনি কাব স্কাউট হন। গ্রিলস ইংরেজি, স্প্যানিশ এবং ফরাসি ভাষা জানেন।
স্কুলজীবন শেষ হওয়ার পর বিয়ার গ্রিলস ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার উৎসাহ প্রকাশ করেন। এসময় তিনি সিকিম অঞ্চলে হিমালয়ে হাইকিং করেন। পরে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ইউনাইটেড কিংডম স্পেশাল ফোর্স রিজার্ভে কাজ করেন। স্পেশাল এয়ার সার্ভিসে তিনি ১৯৯৬ পর্যন্ত তিন বছর কাজ করেন। ১৯৯৬ সালে জাম্বিয়ায় একটি প্যারাশুট দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। এসময় বলা যায় চিরতরে হাঁটার ক্ষমতা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পরবর্তী বারো মাস গ্রিলস সামরিক বাহিনীর সব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকেন। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং শৈশবের লালিত স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের নেশায় উদ্বেলিত হন। মানবসেবায় অবদান রাখার জন্য ২০০৪ সালে গ্রিলসকে সম্মানসূচক পদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডারে পদোন্নতি দেয়া হয়। ১৯৯৮-এর ১৬ মে বিয়ার গ্রিলস তার শৈশবের লালিত স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। আট বছর বয়সে যখন তার বাবা তাকে এভারেস্টের একটি ছবি উপহার দেন তখনই গ্রিলসের মনে এভারেস্ট জয় করার ইচ্ছা জাগে। এভারেস্ট জয়ের মাধ্যমে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সর্বকনিষ্ঠ ব্রিটিশ হিসেবে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়েন। যদিও তার ওই রেকর্ড চার বার ভাঙা হয়। তার প্যারাশুট দুর্ঘটনার আঠারো মাস পরই তিনি এভারেস্টে আরোহণ করেন। বিয়ার গ্রিলস টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করেন একটি ডিওডোরেন্টের বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ইংল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নির্মিত সেনাবাহিনীর মাদকবিরোধী টিভি ক্যাম্পেইনেও তিনি উপস্থিত হন। এছাড়া বিশ্বখ্যাত হ্যারডস দোকানের বিজ্ঞাপনেও গ্রিলস অংশগ্রহণ করেন। তিনি বেশ কিছু টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফ্রাইডে নাইট উইথ জোনাথন রোজ, অপরাহ উইনফ্রে শো, দ্য টুনাইট শো উইথ জে লেনো, দ্য লেট শো ডেভিড লেটারম্যান ইত্যাদি।
যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোরে “বর্ন সারভাইভর : বিয়ার গ্রিলস” নামে একটি অনুষ্ঠান করেন তিনি। এটি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে “ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড” নামে প্রচারিত হয়। এছাড়া ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক দেশে এটি আল্টিমেট সারভাইভাল নামে প্রচারিত হয়। এ অনুষ্ঠানে দেখানো হয়, বিয়ার গ্রিলসকে কোনো প্রতিকূল পরিবেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই পরিবেশে প্রতিকূলতার মধ্যে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয় তা দেখান গ্রিলস। ২০০৬ সালে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড শুরু হয় এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। বিশ্বজুড়ে শতকোটি মানুষ এ অনুষ্ঠান উপভোগ করে থাকেন। এই অনুষ্ঠানে দেখা যায় বিয়ার গ্রিলস সুউচ্চ পর্বত-শৃঙ্গে আরোহণ করছেন, হেলিকপ্টার থেকে প্যারাশুট নিয়ে নামছেন, প্যারাগ্লাইডিং করছেন, বরফ-আবৃত পাহাড়ে উঠছেন, গভীর অরণ্যে আগুনের মধ্য দিয়ে দৌড়াচ্ছেন, সাপ-পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ খাচ্ছেন, কুমিরের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন ইত্যাদি। একটি অনুষ্ঠানে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও তার এসব ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের সঙ্গী করেছিলেন।
* বিয়ার কারাটে খেলায় ব্ল্যাক বেল্টপ্রাপ্ত।
* বিয়ার মোট ১১টি বই লিখেছেন। এর মধ্যে বাচ্চাদের জন্য ৪টি কল্পকাহিনীর বই রয়েছে।
* তার প্রথম টিভি শো ছিল চ্যানেল ফোরে ‘এসকেপ টু দ্য লিজিয়ন’।
* ছোটবেলায় তার প্রিয় টিভি শো ছিল ম্যাকগাইভার।
* ২০০৯ সালে ৩৫ বছর বয়সে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ চিফ স্কাউট হিসেবে তিনি স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনে নিযুক্ত হন।
* ১৯৯৭ সালে তিনি সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে হিমালয়ের আমা দাবলাম শৃঙ্গে চড়েন। উল্লেখ্য, এই শৃঙ্গকে এডমুন্ড হিলারি ‘আনক্লাইম্বেবল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।
* মাউন্ট এভারেস্ট জয় করতে তার সময় লেগেছিল মাত্র ৯০ দিন।
* গণমাধ্যমে পরিচিত হওয়ার পর ওয়ার্নার ব্রাদার্স গ্রিলসকে তাদের ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটানস চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ার গ্রিলস সেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি।
* বিয়ার গ্রিলসের একটি আত্মজীবনীও প্রকাশিত হয়েছে ২০১১ সালে।
বিয়ার গ্রিলস ১৯৭৪ সালের আজকের দিনে (৭ জুন) নর্দান আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment