—ঋত্বিক ঘটকের ছবি “অযান্ত্রিক” মুক্তি দিবস—-
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ১৯৫৮ সালে ঋত্বিক ঘটকের প্রথম সিনেমা ‘অযান্ত্রিক’ মুক্তি পায়। এর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছিলেন ঋত্বিক। কেবল ছয় থেকে সাতবার স্ক্রিপ্টই বদলেছেন। তাঁর এত এত পরিশ্রম বৃথা যায়নি। বাংলা সিনেমার জগতে এটি এখনো এক অনবদ্য সিনেমা। ‘অযান্ত্রিক’ এক অন্যরকম গল্পের নাম। মানুষ এবং যন্ত্রের ভালোবাসার গল্প এটি। বিমল এবং তার ট্যাক্সি ‘জগদ্দল’ সিনেমার নায়ক-নায়িকা। বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তিনি বললেন এক পরাবাস্তব গল্প। ঋত্বিক বাঙালিকে এক নতুন ঘরানার সিনেমা উপহার দিলেন। নাগরিকের ব্যর্থতার পর মুষড়ে যাওয়া ঋত্বিককে খ্যাতি এনে দিল অযান্ত্রিক। অযান্ত্রিকের বিষয়বস্তু নির্ধারণে তিনি দেখিয়েছেন অতুলনীয় সাহস। জগদ্দলকে অনুভূতিপ্রবণ এক সত্তা হিসেবে কল্পনা করে, তার মধ্যে মানুষিক প্রতিক্রিয়া আরোপ করে সে যুগের দর্শকের কাছে উপস্থাপনের সাহস দেখিয়েছেন ঋত্বিক। ‘অযান্ত্রিক’ ১৯৫৯ সালের ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয়। সেখানে ছবিটি দেখার অভিজ্ঞতা বিখ্যাত সমালোচক জর্জেস সাডৌল বর্ণনা করেন এভাবে– ‘অযান্ত্রিক কথাটার অর্থ কি? আমার জানা নেই এবং আমার বিশ্বাস ভেনিস ফেস্টিভালের কারোরই এটা জানা ছিল না। আমি পুরো গল্পটাও বলতে পারব না, কারণ সেখানে কোন সাবটাইটেল ছিল না। কিন্তু এতদসত্বেও আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি দেখেছিলাম’। বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও জার্মান বিশেষজ্ঞ অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মতে– ‘বিবর্ণ প্রকৃতি ও যান্ত্রিক সভ্যতার নির্দয় বিরোধটি ট্যাক্সি ড্রাইভার বিমল ও তাঁর করুণ যানটির মধ্যে প্রেমের মধ্যে দিয়ে যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তাকে… আধুনিকতার… একটি ব্যতিক্রমী উপহার মনে হয়।”
সুবোধ ঘোষ রচিত একই নামের একটি বাংলা ছোটোগল্প অবলম্বনে এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে।
১৯৫৮ সালের আজকের দিনে (২৩ মে) অযান্ত্রিক ছবিটি মুক্তি পায়।
পরিচালকঃ ঋত্বিক ঘটক। গল্পঃ সুবোধ ঘোষ। অভিনয়েঃ কালী বন্দ্যোপাধ্যায়/ শ্রীমান দীপক/ কাজল গুপ্ত/ কেষ্ট মুখোপাধ্যায়। মিউজিকঃ আলী আকবর খান। চিত্রগ্রাহকঃ দীনেন গুপ্ত। সম্পাদনাঃ রমেশ যোশি। প্রযোজনাঃ এল. বি. ফিল্মস ইন্টারন্যাশানালঃ মুক্তিঃ ২৩ মে, ১৯৫৮। দৈর্ঘঃ ১০৪ মিনিট। দেশঃ ভারত। ভাষাঃ বাংলা।
Be First to Comment