শুভদ্যুতি দত্ত: কলকাতা, ২১ মে,২০২০। উম-পুন এর আতঙ্ক এখনও রাজ্য বাসীর পিছু ছাড়ছে না। শিউরে উঠছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ঘটনাবহুল এখন এই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবলীলা। সাক্ষী তিলোত্তমা এই মহানগরী কলকাতাও। চলে গেছে উম-পুন। রেখে গেল সাক্ষী। গত ২৪ ঘন্টায় এ রাজ্যের ৭২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। আশঙ্কা এই মৃত্যুর ঘটনা আরো বাড়তে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ রাজ্য সচিবালয় নবান্নে উম-পুন পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেন। মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন আজকের বৈঠকে।
উল্লেখ্য, রাতভর রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। তিনি জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও রাত জেগে নিরন্তর আলাপ আলোচনা করেন। আজ বৈঠক হয়েছে। কলকাতায় এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তবে, সর্বাধিক মৃত্যু দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় – ১৮ জন। এরপরেই মৃত্যুর তালিকায় সংযোজন – উত্তর ২৪ পরগনার – ১৭ জন মৃত। তিন নম্বরে রয়েছে কলকাতার নাম। এরপর হাওড়া জেলা, ৭ জন সেখানে মৃত। পূর্ব মেদিনীপুরে – ৬ জন । ২ জন মারা গিয়েছেন হুগলি জেলায়। মৃত্যুর তালিকায় এপর্যন্ত ৭২ জনের তথ্য সংগ্রহ করা গেলেও জেলাওয়াড়ি হিসেবে ৬৫ জনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। পুরোদমে চলছে ঐ কাজ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলা থেকে একের পর এক মারাত্মক খবর আসছে। তৎপরতার সঙ্গে তা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ও বিচ্ছিন্ন। গাছ পড়ে প্রাণহানি বহু মানুষের । রাস্তা অবরুদ্ধ একাধিক জায়গায়। চেষ্টা চলছে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতেই। জেলা থেকে সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
কলকাতা শহরের অবস্থাও বেশ জটিল। জলমগ্ন রাস্তা। বেহাল অবস্থা নিকাশির। কোথাও হাঁটু সমান জল। আবার কোথাও গোড়ালির ওপর। কলকাতায় পুরসভার তরফে কাজে নেমেছেন পুরকর্মীরা। তবে, তাঁরা পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পাচ্ছে। সমস্ত রাস্তার উপর আছড়ে পড়া গাছ কেটে সাফাই অভিযান শুরু। শেষ হতে বেশ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
জল নিকাশি ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম। এর মাঝে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল-
প্রধানমন্ত্রী রাজ্য সফরে আসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে এর জন্য অনুরোধ করেন। এই উম-পুন এর রাজ্য জুড়ে তান্ডব খতিয়ে দেখার জন্য দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও যোগাযোগ করা হয়। প্রসঙ্গতঃ রাজ্য সরকারের তরফে প্রাথমিকভাবে রিপোর্ট ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
ফলে, আগামীকাল সকালে রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা সরাসরি আসছেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার সকাল দশটা নাগাদ দমদমে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি পৌঁছে যাবেন বলে সরকারি সূত্রের খবর। বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। এরপর তিনি আকাশপথে পরিদর্শন করবেন উম-পুন এর ভয়ঙ্কর তান্ডবলীলা। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর তিনি যাবেন ওড়িশা রাজ্য পরিদর্শনে।
Be First to Comment