গোপাল দেবনাথ/সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা,১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২০। ১২০ বছর আগে বিহারের দ্বারভাঙার মহারাজা লক্ষীশ্বর সিংহ সৌরথ গ্রামে প্রথম গণবিবাহের আয়োজন করেছিলেন। স্থানীয় মতে সুরথ সভা প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন মৈথিলী সংস্কৃতির অঙ্গ। প্রতি বছর পঞ্জিকার তিথি মিলিয়ে মৈথিলী ব্রাহ্মণ অসভার আয়োজকরা গণবিবহের দিন স্থির করেন ।এই ট্র্যাডিশন আজও চলছে।
১০/১৫ দিন ধরে চলে এই উৎসব। তবে নববধূ ছাড়া অন্য মহিলাদের এই অনুষ্ঠানের অনুমতি নেই। মধুবনি জেলার অরণ্য ঘেরা গ্রাম সৌরথে জুন জুলাই মাসে এই উৎসব শুরু হয়। কয়েকশো যুবক যুবতী, তাদের অভিভাবক এবং মৈথিলী পণ্ডিতদের নিয়ে প্রায় কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি। মেলার পাশে বসে প্রচুর দোকান। এই সভায় দুই পক্ষের আলাপ আলোচনা, দেনা পাওনা নিয়ে কথাবার্তা হয়।উপহার আর যৌতুক নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতিহাস বলছে খ্রিস্টপূর্ব ৩২৪ সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট বিয়ে করেন পারস্যের রাজা দারিয় উসের বড় মেয়ে বর্সিনকে। রাজার সেনাবাহিনী দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তাও ৮০জন সৈনিক একই দিনে বিয়ে করেন।সেই শুরু কোরিয়া, জাপান, ইরান, চিন, জর্ডন,কুর্দিস্তান,এমনকি আফগানিস্থান,পাকিস্থান ও ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে গণবিবাহে র অনুষ্ঠান হয়।২০১১সালে মুম্বাইতে একসাথে ৩৬০০ জুটির বিয়ে হয়। আমেরিকায় ওয়াশিংটনে আয়োজিত গণবিবাহে র অনুষ্ঠানকে বলে ব্লেজিং সেরিমনি।
পশ্চিমবঙ্গের বহু রাজনৈতিক নেতা এবং সমাজসেবী সংস্থা ও গণ বিবাহের ব্যবস্থা করেন।তবে পার্থক্য যে এই বিয়ের খরচ যোগায় সমাজ।এমনই এক উত্তর কলকাতার সমাজসেবী সংগঠন আলোয় ফেরা। সংগঠনের পক্ষে আয়োজিত অষ্টম বর্ষের গনবিবাহের কথা জানাতে মঙ্গলবার কলতার প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংগঠনের সম্পাদক গৌতম হালদার জানান, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিনটিতে ইন্দিরা মাতৃসদন, পাইকপাড়া তে এই বছর ১৭০ জনের বিবাহের আয়োজন করা হচ্ছে।২০১২তে ৬০জনকে নিয়ে এই মহান সামাজিক কর্তব্যের সূচনা হয়। হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান সাঁওতালি আদিবাসী মানুষদের নিজেদের ধর্মীয় রীতিনীতি তে বিয়ের ব্যবস্থা হয়। সঙ্গে সরকারি নিয়মে রেজিস্ট্রি বিয়েরও ব্যবস্থা করা হয়।
বছরভর রক্তদান শিবির, মেডিক্যাল চেকআপ উৎসবে প্রান্তিক মানুষদের বস্ত্র দান, কম্বল দান করা হয়। প্রান্তিক ছাত্রদের বই খাতা দেওয়ারও রীতি পালিত হয়। রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জন্মদিন, বিবেকানন্দ চেতনা উৎসব ও বিজয়া সম্মিলনীর ও আয়োজন করা হয়।
এই গণ বিবাহে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও প্রতিবেশী রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার বিবাহে ইচ্ছুক তরুণ তরুণীরা আসেন। দীর্ঘ আট বছর ধরে এই মহান কর্মযজ্ঞ পালনের এক নৈতিকতার নজির রেখেছে। এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিরংশু পাল, শুভদীপ চ্যাটার্জী, বাবুলাল সামন্ত, অরুন জয়সওয়াল, বাসুদেব ভট্টাচার্য, ইমাম ওয়াজেদ ভাই, ফাদার শ্রীকান্ত ও স্বামী পরোমাত্মানন্দজী মহারাজ।
Be First to Comment