গোপাল দেবনাথ: ১৮মে ২০২০। বাংলাদেশের বিস্ময়কর প্রতিভার বিচ্ছুরণ এখন বয়স মাত্র ১৮ র গন্ডিতে পৌছালো। কিন্তু তিনি একাধারে ট্রেইনি পাইলট, সাংবাদিক, নির্মাতা, উপস্থাপিকা, লেখক, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, বিএনসিসি ক্যাডেট অ্যাম্বাসেডর, ইউনিসেফ বাংলাদেশের তরুণ প্রতিনিধি এবং বিতার্কিক। বলছি বহুমুখী প্রতিভার নানজীবা খান এর কথা। তিনি “অ্যারিরাং ফ্লাইং স্কুল”এ “ট্রেইনি পাইলট” হিসেবে অধ্যয়ন করছেন। স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। ইতিমধ্যে ৫ ঘন্টা ১৫ মিনিট ‘সেসনা ১৫২’ বিমান নিয়ে উড়েছেন আকাশে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম (হ্যালো) র সাংবাদিক, বিটিভির নিয়মিত উপস্থাপক, ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন। প্রামান্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে পেয়েছেন ইউনিসেফের মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড। বর্তমানে তার রচনা ও পরিচালনায় প্রথম ডকুফিল্ম “দ্যা আনওয়ান্টেড টুইন” এর কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এতে অভিনয় করেছেন আফসানা মিমি, দিলারা জামান, শিরিন আলম, হুমায়রা হিমু, অ্যানি খান, রাজু আলীম সহ আরও বিশিষ্ট অভিনেতা ও অভিনেত্রী গণ। শিশুকাল থেকেই অর্জনের ঝুলি ভরা শুরু হয়েছে।
ছবি আঁকায় আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু হয়। একের পর এক সম্মাননা পেয়েছেন নিজের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। কিছুদিন আগে অথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর হাত থেকে পেয়েছেন “ইউথ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড”। সম্প্রতি মা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ও নারী উদ্যোক্তা শারমিন সেলিম তুলির হাত থেকে অর্জন করেছেন “আলোকিত নারী সম্মাননা স্মারক”। প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘সাদা কালো’ পরিচালনার জন্য ‘ইউনিসেফের মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে বিতার্কিক হিসেবে অর্জন করেছেন বেশ কিছু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার। পেয়েছেন উপস্থিত ইংরেজি বক্তৃতায় বিএনসিসি ও ভারত্বেশ্বরী হোমসের প্রথম পুরস্কার। বিদেশের মাটিটে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন দু বার।
এবছর ইউনিসেফ থেকে বাংলাদেশের একমাত্র তরুন প্রতিনিধি হিসেবে ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন “বিএনসিসি ক্যাডেট অ্যাম্বাসেডর” হিসেবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জীর সাথে সাক্ষাৎ এবং কেন্দ্রীয় রক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন । রাশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, কাজাকিস্তান, কিরকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ সহ দেশ সহ মোট ১১ টি দেশের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন এই নানজীবা। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর “রাইফেলে ফায়ারিং”, “অ্যাসোল্ড কোর্স”, “বেয়ানোট ফাইটিং” ও “সশস্ত্র সালাম”।দুই বছরের গবেষনা শেষে চলতি বই মেলায় অন্বেষা প্রকাশন থেকে তাঁর লেখা প্রথম বই “অটিস্টিক শিশুরা কেমন হয়” সাফল্যের সাথে বিক্রি হয়েছে বইমেলার প্রথম দিন থেকেই।পাঠকদের যথেষ্ট মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। বইটির প্রচ্ছদও করেছেন নানজীবা নিজেই।
২০০৭ সালে জীবনের প্রথম প্রতিযোগিতা জয়নুল কামরুল ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন পেন্টিং কম্পিটিশনে অংশগ্রহন এবং পুরস্কার অর্জন করেন। জীবনের প্রথম অর্জনই ছিল আন্তর্জাতিক। শুরুটা করেছিলেন রঙ তুলি দিয়ে।হাতে কলম ধরার আগেই পাঁচ বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে গিয়েছিল কিশলয় কচিকাঁচার মেলায় ছবি আঁকা ও আবৃত্তি শিখতে।
দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘কাগজ কেটে ছবি আঁকি” অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মিডিয়ার জীবন শুরু করেন তিনি। বর্তমানে বিটিভি তে “আমরা রঙ্গিন প্রজাপতি”, “আমাদের কথা”, “আনন্দ ভুবন”, ও “শুভ সকাল” এবং চ্যানেল আই’ তে “কথাবার্তা” অনুষ্ঠান উপস্থপনা করছেন। ১৩ বছর বয়সে জীবনের প্রথম স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচিত্র “কেয়ারলেস” পরিচালনা করেন । জীবনের প্রথম প্রামাণ্য চিত্র “সাদা কালো” পরিচালনার জন্য “ইউনিসেফের মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করেন । আর এটি তৈরি করতে যা টাকা খরচ হয়েছে তার সবই ছিল তার নিজের টিফিনের জমানো টাকা। এরপরে “গ্রো আপ”, “ দি আনস্টিচ পেইন” সহ আরও কিছু প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করেছেন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন ঢাকার সাড়ে তিন হাজার প্রতিযোগীকে টপকিয়ে শিশু সাংবাদিক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। জীবনের প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানের । পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী,সমাজকল্যান মন্ত্রী, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, গণপুর্তমন্ত্রী, তথ্য-প্রযুক্তিপ্রতিমন্ত্রী, স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, মেয়র সাঈদ খোকন সহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট মানুষ যেমন- সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সেলিনা হোসেন, এমদাদুল হক মিলন, হাবিবুল বাশার, আবেদা সুলতানা, সাদেকা হালিম, নিশাত মজুমদার, ফরিদুর রেজা সাগর, জুয়েল আইচ, র্যাবের প্রধান বেনজির আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফেরদৌস, ওয়ার্ল্ড ডিবেট সোসাইটির পরিচালক অ্যালফ্রেড স্নাইডার ও ভারতের রক্ষামন্ত্রী সহ এ পর্যন্ত ৮০ জন বিশিষ্ট জনদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন দ্বায়িত্ব পালন করেছেন ক্যামরিয়ান ডিবেটিং সোসাইটির “ভাইস প্রেসিডেন্ট” হিসেবে। স্কুল ও কলেজ জীবনে বিতার্কিক হিসেবে অর্জন করেছেন বেশ কিছু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার। পেয়েছেন উপস্থিত ইংরেজি বক্তৃতায় বিএনসিসি ও ভারত্বেশ্বরী হোমসের প্রথম পুরস্কার। নানজীবা বলেন, “কাজ শেখার চেষ্টা করছি। আর সবার আশীর্বাদ থাকলে আশা করি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। আমি কখনই শুধু আমার নিজের দেশ নিয়ে ভাবিনা। আমার লক্ষ্য সবসময় আন্তর্জাতিক। আমি চাই বড় হৃদয়ের মানুষ নানজীবাকে দিয়ে গোটা বাংলাদেশ চিনবে। স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার”। সব শেষে জানালেন আমার সব কিছুর প্রেরণা আমার ছোট ভাই ও আমার মা। ভারতের ‘নিউজ স্টারডম’ আগামীদিনে নানজীবা র সাফল্য কামনা করছে।
Be First to Comment