Press "Enter" to skip to content

আজ লাভপুরের মামলায় চার্জশিটে মুকুলের নাম বাতিলের শুনানি?

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন,

আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে লাভপুরের খুনের মামলায় সাপ্লিমেন্ট চার্জশিটে মুকুল রায়ের নাম বাতিলের পিটিশনে শুনানি হতে পারে। গত রবিবার লাভপুরের তিন ভাই খুনে বীরভূম জেলা পুলিশের সাপ্লিমেন্ট চার্জশিট দাখিলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের নাম উঠে আসে। খুনের প্ররোচনায় ধারায় চার্জশিটটি পেশ হয়েছে। ৩০২ এর মত খুনের ধারায় চার্জশিট দাখিল বিষয়টি গুরত্ব অনুভব করেই তড়িঘড়ি অর্থাৎ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীর মাধ্যমে চার্জশিটে নাম বাতিলের পিটিশন টি করেন মুকুল রায়। মুকুল শিবিরের দাবি – “২০১০ সালে বীরভূমের লাভপুরের খুনের সময় মূল অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম তখন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক ছিলেন। তখন মুকুল রায় তৃণমূলের দু নাম্বার ব্যক্তি। রাজ্যসরকারে শাসক দল হিসাবে ছিল বামেরা। তৃনমূল তখন মূল প্রতিপক্ষ। তাই তৎকালীন বাম বিধায়ক কে তৃনমূল নেতা মুকুল রায়ের প্ররোচিত করার কোন ভূমিকা থাকতে পারে”? লাভপুরের খুনের মামলায় একদা তৃনমূল বিধায়ক তথা অধুনা গেরুয়া নেতা মনিরুল ইসলামের নাম চার্জশিটে আসাটা স্বাভাবিক হলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের নাম আসবে তা রাজনৈতিক মহলে অপ্রত্যাশিত ছিল। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তুমুল হইচই। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে বীরভূমের লাভপুরে এলাকার খুনের এক মামলার পুনরায় তদন্তের নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। ৯ বছর পূর্বে এই মামলার যিনি তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ছিলেন। তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মামলার পুনরায় তদন্তের। তবে বীরভূমের পুলিশসুপারের নজরদারিতে তিনমাসের মধ্যেই তদন্তের কাজ শেষ করে ফেলতে হবে বলে আদেশনামায় উল্লেখ ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের এহেন নির্দেশে ভীষন চাপে পড়ে যান লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। কেননা এই মামলায় তিনি মূল অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছেন। মামলার তদন্তে প্রথমভাগে এই স্থানীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ২২ জন অভিযুক্তদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। সেসময় লাভপুর বিধায়ক শাসকদলের প্রভাবশালী বিধায়ক হিসাবে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ‘ঘরপোড়া গরু’র মত রাজনৈতিক ময়দানে বিচরণ করছেন। দিল্লি গিয়ে দলবদল করলেও বিজেপিতে অচ্ছুৎ অবস্থায় আছেন। তাই রাজ্য পুলিশের তদন্তে দলত্যাগী তৃনমূল বিধায়ক কে নিয়ে নানান জল্পনা জেলা রাজনীতিমহলে। আদালত সুত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে লাভপুরে একই পরিবারে ৩ ভাই খুন হয়েছিলেন।নিহতেরা হল ধানু সেখ, কাটুন সেখ এবং তুরুক সেখ। এই খুনে অভিযোগকারী এলাকার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।মামলার প্রথম পয্যায়ে পুলিশি তদন্তে চার্জশিট পেশে দেখা যায়, বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ২২ জন কে তাদের বিরুদ্ধে উঠা খুনের অভিযোগ থেকে নিস্কৃতি দেওয়া হয়েছে। এহেন পুলিশি তদন্ত রিপোর্টে অসন্তুষ্ট হয়ে ২০১৫ সালে ডিসেম্বর মাসে সিউড়ি জেলা আদালতে মামলাকারী পুনরায় তদন্তের জন্য পিটিশন দাখিল করেন। সেই পিটিশন গ্রহণ না হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় নিহতের পরিবার। এরপর, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি মধুমতী মিত্রের বেঞ্চ জানিয়ে দেয় – ২০১০ সালের এই খুনের মামলায় পুনরায় তদন্ত করবেন আগেকার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। পুলিশসুপারের নজরদারিতে এই তদন্ত চলবে। এবং তা শেষ করতে হবে তিনমাসের মধ্যেই। সেইসাথে ২০১৮ সালের সাক্ষী সুরক্ষা প্রকল্প আইনে মামলাকারী এবং নিহতের পরিবার কে পুলিশি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশে ফের লাভপুর হত্যা মামলার চার্জশিট জমা পড়ল। আর সেই চার্জশিটে স্বাভাবিক ভাবেই নাম উঠে এল বিজেপি নেতা মণিরুল ইসলামের নাম। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম উঠে এল দ্বিতীয় পয্যায়ের চার্জশিটে । প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায় এর নাম উঠে এল । প্ররোচনার দায়ে তাঁর নাম জড়িয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। চলতি ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে ২০১০ সালের ঘটনার পুনর্তদন্ত করে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। রবিবার চার্জশিট গৃহীত হয় আদাালতের তরফে ।জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং সাংবাদিকদের জানিয়েছেন – “হাইকোর্টের নির্দেশে ফের তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সেই চার্জশিট গৃহীত হয়েছে ।” বালিরঘাটের দখলদারির দ্বন্দ্ব মেটাতে ২০১০ সালের ৪ জুন লাভপুরের নবগ্রামে নিজের বাড়ির উঠানে সালিশি সভা ডেকেছিলে সেসময়কার দাপুটে নেতা মণিরুল ইসলাম । তখন তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ছিলেন । সেই সালিশি সভায় বচসার জেরে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে কটুন শেখ, ধানু শেখ ও তরুক শেখকে । মণিরুল ইসলাম সহ ৫২ জনের নামে লাভপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় । ঘটনার পরে পরে আইনের হাত থেকে রক্ষা পেতে তৃণমূলে যোগ দান করেন তিনি বলে অভিযোগ । পরে লাভপুর বিধানসভা থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ীও হন । ২০১১ সালে সাঁইথিয়ার একটি জনসভা থেকে “তিনজনকে পা দিয়ে পিষে মেরে দিয়েছি” বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মণিরুল ইসলাম। ২০১৫ সালে এই মামলায় পুলিশ বোলপুর আদালতে ৩০ জনের নামে চার্জশিট জমা দেয় । সেই চার্জশিটে নাম বাদ যায় এই মণিরুলের। তখন অবশ্য শাসক দলের বিধায়ক ছিলেন তিনি।

নিহতের পরিবার তদন্ত চেয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন । এই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । ইতিমধ্যে তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন মণিরুল। দিল্লিতে গিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের মাধ্যমে বিজেপিতে যোগ দান করেন মণিরুল।সেখানেও তাঁকে নিয়ে দলের অস্বস্তি বাড়ে। তাই তাঁকে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ফের তদন্ত শুরু করে বীরভূম পুলিশ ।গত ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ । জানা গিয়েছে, এই চার্জশিটে নাম রয়েছে মণিরুল ইসলামের । ২০১০ সালে ঘটনার সময় তৃণমূলের অন্যতম নেতা ছিলেন মুকুল রায় । প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে চার্জশিটে স্থান পেয়েছে মুকুল রায়ের নাম।তবে মুকুল বাবু সংবাদমাধ্যম কে জানিয়েছেন – বিগত বাম আমলে শেষের দিকে সিপিএম যেমন পুলিশ নির্ভর ছিল, এখন তৃনমূল সেই ভূমিকাটা নিয়েছে। এহেন মিথ্যা মামলার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আদালতেই সুবিচার পাব।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.