ভাস্কর ভট্টাচার্য: কলকাতা, ২৫ এপ্রিল ২০২০ ব্যাধির চেয়ে বলবান পৃথিবীতে কেউ নয়। অথচ অধিকাংশ ব্যাধির মূলে কোটি কোটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের আক্রমণেই সর্বশক্তিমানও শিশুর চেয়ে দুর্বল হয় পড়ে। তার বড় উদাহরণ আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি করোনা ভাইরাস নিয়ে। আজ করোনার আবহের মধ্য দিয়েই একটি ঐতিহাসিক দিন কেটে যাচ্ছে। যা একটি ক্ষুদ্র মশা কী করতে পারে আমরা কয়েকশো বছর ধরে দেখে চলেছি। কিছুটা রেহাই পেলেও সম্পূর্ণ পেয়েছি এ কথা বলা যাবে না। আজ বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। সেই সঙ্গে জিন বা ডি এন এ দিবসও বটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিগত ২০১৮-১৯ বছরে সারা বিশ্বে ২২৮ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। তার মধ্যে ৬৭ শতাংশ শিশু। বিশ্বের গরিব দেশগুলি এখনও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মারা যায় বেশি। ২০০৭ সালে ২৫ এপ্রিল দিনটিকে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস হিসেবে নির্দিষ্ট করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০০২ সালে ইউ এন কংগ্রেস এই দিনটিকে ডিএনএ দিবস ঘোষণা করে।
ম্যালেরিয়া বলতেই যে মানুষটির কথা আগে মন আসে তিনি স্যর রোনাল্ড রস। ভারতে জন্ম। আলমোড়ায়। কিছুকাল এখানে কাটিয়ে চলে যান ইংলন্ডে সেখানেই পড়াশোনা। ডাক্তারি। দেশে দেশে ঘোরা শেষে এই কলকাতাতেই শেষ স্বপ্নভূমি বেছে নিয়েছিলেন। এখানেই করেছিলেন তাঁর যুগান্তকারী ম্যালেরিয়ার আবিষ্কার। তাঁর নামে কলকাতায় রাস্তা আছে, আছে মূর্তি এবং হাসপাতালের একটি ওয়ার্ড তাঁর নামাঙ্কিত। আরো অনেক বিষয় রয়েছে। তিনি প্রথম জীবনে ডাক্তর হতে চাননি। চেয়েছিলেন কবি ও শিল্পী হতে। সেই অভ্যেস ডাক্তারি জীবনেও ছিল। সুযোগ পেলেই কবিতা লিখতেন, ছবি আঁকতেন এমনকী আস্ত একটা উপন্যাসও আছে তাঁর। কীট পতঙ্গ, মৌমাছি, মথ এ সব নিরীক্ষণ করা ছিল তার নেশা। তাঁর কাকা ছিলেন ডাক্তার। একদিন এই কিশোরের হাতে তুলে দিলেন একটা জ্যান্ত বহুরূপী বা গিরগিটি। যে রং বদলায়। সেটা ছিল সময় কাটানোর বন্ধু। নিজেই পোকামাকড় ধরে ওই গিরগিটির মুখে ছুড়ে দিত। কিন্তু একদিন গিরগিটিটা মারা যায়। মন খারাপ। ছবি আঁকায় মন দিলেন। বাবার নির্দেশে ডাক্তারি পড়তে চলে যাওয়া। ডাক্তার হয়ে ফিরে আসেন ভারতে। এখনকার চেন্নাই, মুম্বই সহ দেশের নানা জায়গায় যেখানেই যান দেখেন ম্যালেরিয়ায় অসহায় মৃত্যু। তারপর গবেষণা আর গবেষণা।
তার ফল কি হয়েছিল আগেই বলেছি। যেটা বলা হয়নি, এক ম্যালেরিয়া রোগীকে নিয়ে এমন গবেষণা শুরু করেন সেই রোগী ভয়ে রাতের বেলা হাসপাতাল ছেড়ে সবার অলক্ষ্যে পালিয়ে যান। আর খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁকে। এই রকম এমন অনেক গল্প। এক রোগীকে ঠিক করেন মশার প্রতি কামড় ছয় পয়সা দেবার অঙ্গীকারে। সামরিক হাসপাতালে একটা মশারীর ভেতরে মশা ছুড়ে দিচ্ছেন আর মশা গিয়ে ওই রোগীকে কামড়াচ্ছে আর রোনাল্ড রস সেগুলিকে ধরে পরীক্ষার জন্য জারে ভরছেন। রোগী তার প্রাপ্য বুঝে পেয়েছিল। সেটি ছিল ১৮৯৭ সালের অগস্ট মাস। রোগীর নাম ছিল হুসেন খাঁ।
পরবর্তী আগস্ট মাসেই তিনি সফল হন। ১৯১১ সালে নাইট উপাধি, ও পরিচিত হলেন স্যর রোনাল্ড রস নামে।
পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার।
তাঁর বৈজ্ঞানিক সাধনা বিশ্বে স্বীকৃত হল।
১৯৩২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দেহত্যাগ করেন।
Be First to Comment