#শরীরের সাথে মস্তিষ্কের সংযোগ স্থাপনে বাধা ব্রেন টিউমার।#
মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ৮ জুন, ২০২০। মানব শরীরের নিয়ন্ত্রক হল মস্তিষ্ক। আমাদের মস্তিষ্কে আছে ৪০বিলিয়ন কোষ। স্নায়ু কোষ গুলি শরীরের সঙ্গে মিশে মস্তিষ্কে যোগাযোগ স্থাপন করে বিভিন্ন নির্দেশের আদানপ্রদান করে। শরীরের যে কোনো কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা লাম্প তৈরি হলে তাকে টিউমার বলে। তেমন ভাবে মস্তিষ্কের যে কোন অংশে মস্তিষ্ক কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়, এবং তা কেন্দ্রীয় স্নায়ু সিস্টেম এর কর্মক্ষমতা কে আঘাত করে তখন তাকে ব্রেন টিউমার বলে। ভারতে প্রতি বছর চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার মানুষ ব্রেন টিউমার এ আক্রান্ত হন। এই আক্রান্তের মধ্যে কুড়ি শতাংশ ছোট শিশুরা আক্রান্ত হয়। ব্রেন টিউমার এর প্রবল গতি কিভাবে প্রতিরোধ করা যাবে সচেতনতা শিবির এর মাধ্যমে তারই লক্ষ্যে জার্মানি তে প্রথম জার্মান ব্রেন টিউমার আ্যসোসিয়েশন তৈরি করা হয় ২০০০সালে ৮ জুন।
সেই থেকে আজকের দিন কে বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বর্তমানে, পৃথিবীর ১৪টি দেশ এই আ্যসোসিয়েশন এর সাথে যুক্ত। তবে প্রাথমিক স্তরে নির্ণয় করতে পারলে ব্রেন টিউমারের বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব। সচেতনতা শিবিরের উদ্দেশ্যে এটাই থাকে।
মস্তিষ্কের বাঁদিকে ও ডানদিকের অর্ধগোলাকৃত অংশ দুটি হল সেরিব্রাম ও পেছনের অংশ কে বলে সেরিবেলাম। এই অংশই মানসিক পরিস্থিতি ও স্মৃতি শক্তি র উৎস। অন্যদিকে, সেরিব্রাম এর ডান গোলার্ধ শরীরের বাম অংশ, বাম গোলার্ধ শরীরের ডান অংশ নিয়ন্ত্রন করে। প্রতিটি গোলার্ধ যে চারটি ভাগে বিভক্ত তাকে বলে লোব। চারটি লোব হলো ফ্রন্টাল লোব, প্যারাইটাল লোব, টেম্পোরাল লোব, অক্সিপিটাল লোব। মস্তিষ্কের পেছনের অংশ শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। ব্রেন স্টেম জীবন দায়ী কাজে সহায়তা করে। ব্রেন টিউমার বা মস্তিষ্ক টিউমার মূলত মস্তিষ্কের কোষ থেকেই তৈরি হয়। এই টিউমার বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট দুপ্রকার হয়। বিনাইন টিউমার সাধারণত যে অংশে বেড়ে ওঠে সেখানেই থাকে, সংলগ্ন স্নায়ু কোষে ছড়িয়ে যায় না, ক্ষতি ও করে না।
এই রকম টিউমার অস্ত্রোপচার করে বার করে আনা হয়। অবশ্য, টিউমারটির অবস্থান যদি এমন হয়, সেই অংশের সাথে অপরিহার্য স্নায়ু কোষ সংযোজিত, সেক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন। অন্যদিকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার এ জটিলতা বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসায় সাড়া দেয় না। ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের অন্য সুস্থ কোষে ছড়িয়ে গিয়ে জটিল সমস্যা তৈরি করে। ফ্রন্টাল লোব টিউমার হল মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবে বেড়ে ওঠে। এই টিউমার টির জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়। চিন্তা ভাবনার স্বাভাবিকতায় ব্যাঘাত ঘটে। চলতে কষ্ট হয়, ভারসাম্য থাকে না, শরীরের কোনো এক দিকে দুর্বলতা অনুভব করে। ক্রমে, ঘ্রাণ শক্তি লোপ পায়, রোগীর কথা বলতে, বা শুনতেও অসুবিধা হয়। এসবই ফ্রন্টাল লোব টিউমার হওয়ার প্রাথমিক উপসর্গ। একই ভাবে প্যারাইটাল লোব টিউমার এও এধরনের উপসর্গ আসতে পারে। মস্তিষ্কের ওপরের অংশে প্যারাইটাল লোব এ যে লাম্প বেড়ে ওঠে, তাকে প্যারাইটাল লোব টিউমার বলে। টেম্পোরাল লোবে যে টিউমার হয় তাকে টেম্পোরাল লোব টিউমার বলে। এই অবস্থায় ব্যাক্তির আচার আচরণের পরিবর্তন হতে থাকে, অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হয়, মাথা যন্ত্রনার সাথে শরীর কাঁপতে থাকে। স্মৃতি শক্তি লোপ পায়। মস্তিষ্কের অক্সিপিটাল লোবে যে টিউমার বেড়ে ওঠে তাকে অক্সিপিটাল লোব টিউমার বলে। এই আক্রমণে ব্যাক্তি র দৃষ্টি নষ্ট হয়। প্রথম থেকেই রোগী প্রচন্ড কষ্ট পেতে থাকে। এছাড়াও, মস্তিষ্কের নীচের অংশে যে টিউমার হয় তাকে, সেরিব্রাল টিউমার বলে। এ অবস্থায়, রোগীর চলাচল এ সমস্যা হতে থাকে, শারীরিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। ব্রেন স্টেম টিউমার এও এমন সমস্যা হতে থাকে। মস্তিষ্কের যে কোনো সমস্যায়, শরীরের কোনো অস্বাভাবিক সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবসে কিছু সচেতনতার বার্তা পৌঁছে যাক, কিভাবে নিজেকে এধরনের মারনরোগ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবো।
বিশেষত, অত্যধিক ধূমপান এর অভ্যাস ছেড়ে দেওয়া, যারা পেশাগত কারনে নানা রসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করেন, তাদের প্রয়োজনীয় সাবধানতা নিতে হবে দীর্ঘ সময়ের জন্য, যারা রেডিয়াম, রেডিয়েশন মেশিনে কাজ করেন তাদের অবশ্যই সাবধানতা নেওয়া, কীটনাশক নিয়ে যাদের কাজ তাদের ও সাবধানতা নেওয়া, এই অভ্যাস গুলি নিজেকেই আয়ত্ত করতে হবে।পরিবারে ক্যান্সারে আক্রান্তের ইতিহাস থাকলে, তার উত্তরসুরিদের সচেতন থাকতে হবে নিজেদের মস্তিষ্ক জনিত যেকোন ও সমস্যায়। যে কোনো রোগের ভয়াল থাবা আমাদের যেকোনো সময় সংকটময় পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারে। তাই যতটা সম্ভব আমরা নিজেরা সচেতন থাকলে ক্ষতি নেই। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যবহার নিশ্চয়ই আমাদের সুস্থ রাখবে।
Be First to Comment