Press "Enter" to skip to content

আজকের দিনে সত্যজিৎ রায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল….।

Spread the love

আজ সত্যজিৎ রায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল

“এ পরবাসে রবে কে হায়!
কে রবে এ সংশয়ে সন্তাপে শোকে…”

বাবলু ভট্টাচার্য : হিমালয়ের চূড়ায় বসে ‘লাবণ্য’ খুঁজে পায় জীবনের চাওয়া-পাওয়ার হিসেব চাপা পড়ে আছে দুঃখ-ভয়-সংকটে! যেন জগতে আপন কেউ নাই! সে আর মুখ বুজে সব সহ্য করে যাবে না। প্রয়োজনে দাম্ভিক-রক্ষণশীল স্বামীর বিরুদ্ধে লড়বে। রক্ষণশীল চিন্তার বেড়াজালে পিষ্ট নিজের জীবনের পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না। নিজের মেয়ের ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য সে লড়বে। মানব সম্পর্কের এমনতর জটিলতা নিয়েই সত্যজিৎ রায়ের প্রথম মৌলিক চিত্রনাট্যের পর্দারূপ ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’।

হিমালয়কে পশ্চাৎপটে রেখে সত্যজিৎ সম্পর্কের জটিলতার উত্তর খুঁজেছেন। মানব মনের ব্যাখ্যায় কখনো আশ্রয় নিয়েছেন চিত্রে, কখনো প্রতীকী অর্থে বা কখনো রূপকে।

আবহ তৈরিতে চরিত্র বলয়ে দিয়েছেন বিচ্ছিন্নতা, রিক্ত শব্দহীনতা আর অপ্রস্তুত পরিস্থিতি। তার সাথে করে প্রকৃতি এগোয় নিজস্ব পথে– অত্যুজ্জ্বল রৌদ্র থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ তারপর ক্রমবর্ধমান কুয়াশা, কুয়াশায় অস্পষ্ট হয় চারদিক। যেন দার্জিলিংয়ের বিষণ্ণ আবহে বন্দী চরিত্রদের অতৃপ্ত অনুভূতি।

দেয়ালের কান থাকতে পারে, পাহাড়ের তো নেই! আর তাইতো পরিবারের সমস্ত সদস্যরা কাঞ্চনজঙ্ঘায় বেড়াতে এসে নিজেদের সমস্যাগুলো নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে তা নিরসনের চেষ্টা চালায় সত্যজিৎ রায়ের মৌলিক চিত্রনাট্যের প্রথম ছবি ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’য়।

ছবিটি কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতের কাছে অবস্থিত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র দার্জিলিংয়ে সপরিবারে ছুটি কাটাতে যাওয়া একট উচ্চবিত্ত বাঙালি পরিবারের গল্প।

মৌলিক চিত্রনাট্যের পাশাপাশি এটি সত্যজিৎ রায়ের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্রও বটে।

শিল্পপতি ইন্দ্রনাথ রায় পুরো বাড়ি শাসন করেন। তার কথার একচুল নাড়ানোর জো নেই। তাইতো দার্জিলিং বেড়াতে এসেও তার দ্বিতীয় কন্যা মনীষাকে নিজ পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিতে তাদের এক করে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বাবার পছন্দের প্রতিষ্ঠিত পাত্রকে পছন্দ না-করে মনীষার কলকাতার চালচুলোহীন এক যুবক অশোককে ভালো লেগে যায়।

ওদিকে ইন্দ্রনাথ রায়ের অসুখী প্রথম কন্যা অনিমা ও তার স্বামী বহু বছরের সাংসারিক দ্বন্দ্ব মিটে যায় এই সফরকে ভিত্তি করেই। ছবির কাহিনিতে হিমালয়ের বিশালতাকে পশ্চাৎপটে রেখে পরিচালক মানব সম্পর্কের জটিলতার সব উত্তরগুলো খুঁজেছেন।

দার্জিলিংয়ে বেড়াতে আসা ইন্দ্রনাথ-পরিবারের ছুটির শেষ একদিনকে কাজে লাগিয়ে একদিনে তিনি বর্ননা করেছেন পুরো গল্প। ওদিকে ব্রিটিশপ্রেমী ইন্দ্রনাথ রায়ের মুখের ওপর চাকরির আশায় থাকা যুবক অশোকের চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখান তৎকালীন যুবকসমাজে দেশপ্রেমের মাত্রাকে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলে।

চিত্রায়নের দিক দিয়ে এটিই সম্ভবত বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের প্রথম হাইপারলিংক ছবি যার একটি যোগসূত্র থাকে যা ধীরে ধীরে দর্শকের কাছে প্রকাশ পায়। পাহাড়ের বিশালতায় মনের অজান্তে ‘এ পরবাসে রবে কে’ নামের যে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে ফেলেন ইন্দ্রনাথ রায়ের স্ত্রী লাবণ্য সেটি অমিয়া ঠাকুরের গাওয়া, যিনি রবীঠাকুর পরিবারের একজন সদস্য।

কাঞ্চনজঙ্ঘা চলচ্চিত্রটিতে আরেকটি ভালোলাগার বিষয় ইন্দ্রনাথ রায় চরিত্রে ছবি বিশ্বাসের অভিনয়। শুরুর মতো ছবির শেষটাও হয় শিশু কণ্ঠে লেপচা ভাষার গানের সুরে সুরে পাহাড়ের দৃশ্য দেখানোর মাধ্যমে।

ছবি তথ্য :

মুক্তি : ১১ মে ১৯৬২

অভিনয়ে : ছবি বিশ্বাস, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়, অলকনন্দা রায়, অরুণ মুখার্জী, অনুভা গুপ্ত, সুব্রত সেন, পাহাড়ি সান্যাল, এন বিশ্বনাথন।

কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালক : সত্যজিত্‍ রায়।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.