হিমাদ্রীকিশোর দাশগুপ্ত : সাহিত্যিক, ৬ জানুয়ারি, ২০২৪। কলকাতা যখন শীতের নানান উৎসবে মাতোয়ারা তখন সব কিছু ছেড়ে গত কুড়ি দিন ধরে শীতের মধ্যে একলা বাস করছিলাম এক বৌদ্ধ মঠের কুঠুরিতে একদিন তাঁর আহ্বানের প্রতীক্ষায়। তেমনই ইঙ্গিত ছিলো। তিন মাস ধরে আমাকে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হয়েছে তাঁর কার্যালয় ও নিরাপত্তা বিভাগের সাথে। তবে আমাকে জানানো হয়েছিলো , কৰে তিনি ডাকবেন তা নিরাপত্তার কারণে চব্বিশ ঘন্টার আগে ছাড়া আমি জানতে পারবোনা।
রোজই দেখতাম হুটার বাজিয়ে কনভয়ের ঝড় তুলে তাঁর আশীর্বাদ নিতে আসছেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে অন্যদেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। নিরাপত্তার কারণে তাঁর অস্থায়ী বাসস্থান দুর্ভেদ্য দুর্গ।এমনকী বাইরে থেকে সেই তিব্বতি মঠের ছবিও তোলা নিষেধ। সে সব দেখতাম আর ভাবতাম সত্যি কি তিনি আমাকে ডাকবেন? আমার সম্বল বলতে তো শুধু একটা বই। কথা বলার লোকও ছিলোনা। কারণ আমার চারপাশের লামারা তাঁদের নিজেদের তিব্বতি ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা বোঝেনা। যখনই হতাশা জেগেছে ,ফিরে আসব ভেবেছি তখনই বন্ধুরা ভরসা দিয়েছেন,পরামর্শ দিয়েছেন ধৈর্য্য বজায় রাখার জন্য।তাই রয়ে গেছি আমি।
অবশেষে এই ভোরে তাঁর ডাক এলো। বাক্য বিনিময়ের পর তাঁর হাতে তুলে দিলাম আমার লেখা ও পত্রভারতী থেকে প্রকাশিত, বুদ্ধ ধম্ম আশ্রিত উপন্যাস-শেষ চিহ্ন। নোবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত বুদ্ধ ধম্মর শীর্ষ ধম্মগুরু , হিজ হোলিনেস দলাই লামা আমাকে স্পর্শ করে আশীর্বাদ করলেন, উপহার স্বরূপ দিলেন বুদ্ধর ছবি ও মালা। ধন্য হলো বাঙালি লেখকের ক্ষুদ্র মানব জীবন। ভবিষ্যতে একদিন জীবনের এ অভিজ্ঞতা বিস্তারিত ভাবে লিখব বইতে। এখন শুধু এটুকু কথা আর সেই দুর্লভ মুহূর্তের কটি ছবি উপহার দিলাম বন্ধুদের।
Be First to Comment