Press "Enter" to skip to content

অপুষ্টিকর বাজেট পেশ করতে গিয়ে অসুস্থ হলেন দেশের অর্থমন্ত্রী

Spread the love

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়:কলকাতা, ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২০ ভারতের বাজেট পেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামন। প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা। প্রতিশ্রুতির বন্যা বইতে গিয়ে পুরো ভাষণ পড়তে পারলেন না। অসুস্থ হয়ে বসে পড়লেন নিজের আসনে। এই প্রথম বাজেটের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ পাঠ হলো না। মহামতি গোখলের বাণীটি আজ প্রবাদ হয়ে গেছে। প্রবাদের সত্যতা প্রমাণ করলেন বাংলার সাংসদ ড,কাকলী ঘোষ দস্তিদার। অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতা লক্ষ্য করেই তিনি ছুটে যান তাঁর দিকে। কাকলিকে ছুটে যেতে দেখে বিরোধী আক্রমণের আশঙ্কা করেন বি জে পির দুই মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও হরসিমরত কওর বাদল। সংসদে একজন ডাক্তার সাংসদ থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো বি জে পি। তৃণমূল সাংসদ কাকলী বলেন, রক্তচাপ কমে যাওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর যে ভেসোভেগাল অ্যাটাক হয়েছে বুঝতে পারি। আর একটু দেরি হলে উনি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারতেন। এই সময় হাত পা নাড়াতে হয়। দীর্ঘ সময় এক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে শরীরে রক্ত সঞ্চালনের ব্যাঘাত ঘটে ।

ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কম হয়। অক্সিজেনের পরিমাণ মস্তিষ্কে কমে গেলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যান। নিন্দুকেরা অবশ্য সিতারামনের অসুস্থতার জন্য দায়ী করতে পারেন বঙ্গ তনয় অতনু চক্রবর্তীকে। তিনি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অর্থনীতি বিষয়ক সচিব। ভাষণটি তাঁরই লেখা। অর্থমন্ত্রী নাকি বলেছিলেন, ভাষণ এত লম্বা কেন?বিরোধীরা বলছেন, আসলে বাস্তব পরিস্থিতি ধামা চাপা দিতে অনেক কথার মায়াজাল তৈরি করতে বাধ্য হয়েছেন অর্থসচিব। বাজেটের শুরুতে প্রথামত ছিল প্রতিশ্রুতির বন্যা। এর আগে অনেকেই দিয়েছেন। সব পরিকল্পনা, আশ্বাস বাস্তবে রূপ দিতেই হবে এমন মাথার দিব্যি নেই । অতীতে বাজেট ভাষণে এমন অনেক পরিকল্পনার কথা বলা হয়ে ছিল যা কোনদিন বাস্তবায়িত হয় নি। এবারের বাজেটে কি মিলল?এক কথায় হ য ব র ল। সুকুমার রায়ের এক কবিতা ছিল খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না। বাজেটে আয়কর সীমা বাড়লো কিন্তু বাড়লো না। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেলে জি ডি পি বাড়ার আশ্বাস নেহাতই ছেলে ভুলানো ছড়া। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতা কমার পাশাপাশি সঞ্চয়ের দিকে বেশি আগ্রহ কাজ করছে। মনে হতেই পারে মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ আসতেই বুঝি সঞ্চয়ের ঝোঁক বেড়েছে। আসলে উল্টোটাই। দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, নোট বন্দী, নাগরিকত্ব নিয়ে ভীতি, প্রতিবেশী দেশ দুটির সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাবনা, এসব কারণে মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। দেশের মানুষের অস্তিত্ব সংকটের ভীতি যখন গ্রাস করে তার প্রতিক্রিয়া দেশের অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য। প্রথমে দেখা যাক কোন পরিস্থিতিতে এবার বাজেট পেশ হলো।বিভিন্ন দেশ সফরে প্রধানমন্ত্রীর জন্য খরচ হয়েছে বিরাট অঙ্কের টাকা। প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূণ্য। বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ভারতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তাদের দেশে বীণা ভিসাতে ভারতীয়দের ঢোকার ছাড়পত্র দিতে রাজি নয়। এই প্রসঙ্গে বৈদেশিক মন্ত্রক বিষয়ে অভিজ্ঞরা বলছেন, গ্লোবাল কম্পিটিটিভ ইনডেক্স বলছে প্রগতির দৌড়ে ভারত ১৪১ দেশের মধ্যে ১০ ধাপ নেমে হয়েছে ৬৮। ওয়ার্ল্ড ফ্র্যা জিলিটি ইনডেক্স বলছে কোন দেশের সরকারের শাসন ক্ষমতার দুর্বলতার জন্য দেশে অভ্যন্তরীণ বিভাজন কিম্বা গৃহযুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা বাড়ে সেই এলিভেটেড ওয়ার্নিং এর তালিকায় ভারতের স্কোর ৭৪.৪। যেসব বিদেশি কর্মসূত্রে এদেশে বাস করেন তাদের কাছে ভারত কতটা নিরাপদ এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে ভারতের পরিস্থিতি ভয়ংকর। ৬৪ টি দেশের মধ্যেভারত শেষ পাঁচে। শুধু তাই নয়, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি’র সমীক্ষা বলছে নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতের স্থান ১৬৭ টি দেশের মধ্যে ১৩৪ তম। গত বছর রয়টার্স এর সমীক্ষা জানায় ভারত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক দেশ। বিদেশি সংস্থা শুধু নয়, দেশের ইন্ডিয়া করাপশন সার্ভে ২০১৯ বলছে দুর্নীতিতে ভারত ১৮০দেশের মধ্যে ৭৭ টি দেশের পিছনে। এদেশে ৫বছরের কমবয়সি প্রায় এক লক্ষ শিশু প্রতি বছর মারা যায় পরিবেশ দূষণের জন্য। এই স্বচ্ছ দেশের বাজেটে আর কি আশা করবেন।

কর কাঠামোর ক্ষেত্রে মারপ্যাঁচে লাভ জনতার কিছু হয় নি। মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে প্রায় হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। কমানো হয়েছে একশো দিনের কাজের বরাদ্দ। ভর্তুকি কমানো হয়েছে সারে, খাদ্যে, রেলে। শিশুদের মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। কিন্তু কিছু মদের দাম কমানো হয়েছে। লক্ষ্যনীয়, বিশ্বখ্যাত ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষা বলছে,২০১০-১৭ সালের মধ্যে ভারতীয়দের মধ্যে বার্ষিক মদ্যপানের পরিমাণ গড়ে বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। এই গড় হিসেবে মার্কিন দেশকে পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারত। আগামী ২০২৫ সালে ভারতীয় দের গড় মদ্যপানের পরিমাণ ৯.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১১.৬ শতাংশ। বছরে ২.৭ লক্ষ কোটি টাকার মদ বিক্রি বিশ্বে রেকর্ড সৃষ্টি করছে। এই বাজেটে কৃষকদের জন্য ফসল সরাসরি বাজারে নিয়ে যেতে কিষান রেলের কথা বলা হয়েছে অন্যদিকে বেসরকারি হাতে রেল তুলে দেওয়ার কথা চলছে। বিমানের খেরেও তাই। চাষের ক্ষেত্রে কর্পোরেট গোষ্ঠীকে অনুপ্রবেশ করতে চকটি চাষের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষুদ্র চাষী বেশি। জমির ওপর পারিবারিক দাবি থাকায় একজন প্রান্তিক চাষী কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে একক সিদ্ধান্তে চুক্তি করতে পারবেন না।স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত আধুনিক চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর বাড়ানো হলো।ফলে চিকিৎসা খরচ বাড়বে। ৫০ কোটি মানুষের চিকিৎসা খাতে ৫৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ।জন প্রতি কত পড়লো পাঠকদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া যাক। দেশে চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ব্যবসা হয় ৩৯ হাজার কোটি টাকার। প্রায় ৯০ শতাংশ যন্ত্র আমদানি হয়। সিটি স্ক্যান, এম আর আই, হার্টে পেস মেকার বসাতে বা হাঁটু, কোমরের হাড় প্রতিস্থাপন করতে বিদেশি যন্ত্র ছাড়া উপায় নেই। এসবের ওপর ৫শতাংশ কর বসায় আখেরে পকেট খরচ বাড়বে আম আদমির। শিক্ষা ক্ষেত্রেও বরাদ্দ বেড়েছে। অন্যদিকে বিদেশি কর্পোরেট শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অনুপ্রবেশের ছাড়পত্র দেওয়া হল। ফলে শিক্ষা ব্যবসায়িক পণ্য হয়ে উঠবে।শিক্ষা হবে দামী। মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছাত্র খরচের জন্য পিছিয়ে যাবেন না তার গ্যারান্টি কি?

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে ভারতের নাকি ১০মিনিট সময় লাগবে ।কিন্তু বাজেটে বরাদ্দ বাড়লো সামান্য। আজকের অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রককে সুপারিশ করে জানিয়েছে সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য তৈরি রাখতে এই বরাদ্দ যথেষ্ঠ নয়। অভিজ্ঞমহল মনে করে চিন বা পাকিস্থানের সঙ্গে করতে হলে জি ডি পি হওয়া দরকার ২.৫শতাংশ। কিন্তু এখন জি ডিপি ২.১ শতাংশ।
ব্যাংকে আপনার যদি এক লক্ষ টাকার বেশি জমা থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে এতদিন কোনো কারণে ব্যাংকে লাল বাতি জ্বললে আপনি ফেরত পেতেন এক লক্ষ টাকা। এবার সেই ফিরে পাওয়ার টাকার অঙ্ক বাড়লো ৫ লক্ষ। অর্থাৎ আপনি ৫ লক্ষ টাকা ব্যাংকে রেখে নিরাপদ থাকবেন। তবে এই টাকা ধরুন পাঁচ বছর আগে আপনি ব্যাংকে রেখেছেন সেক্ষেত্রে আসল টুকুই ফিরে পাবেন। সুদ বাবদ আশা করবেন না। এই স্বচ্ছ ভারতের নাগরিক হিসেবে দেশভক্তিতে যদি আপনি গদ গদ না হন তাহলে দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। এমনকি প্রতিবাদী হয়ে উঠতে চাইলে বুকে গুলি খেতে হতে পারে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.