স্মরণঃ সু ভা ষ দ ত্ত
বাবলু ভট্টাচার্য : “এমন মজা হয় না/গায়ে সোনার গয়না/বুবুমণির বিয়ে হবে বাজবে কত বাজনা।” গানটি শুনলেই মনে পড়ে যায় ষাটের দশকের আলোচিত ও দর্শকপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র ‘সুতরাং’ -এর কথা। ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন সুভাষ দত্ত।
সুভাষ দত্ত। দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পরিচালক। তিনি একজন দক্ষ অভিনেতা এবং আঁকিয়েও বটে।
১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে মামা বাড়িতে সুভাষ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। বাবার বাড়ি ছিল বগুড়ার জেলার সারিয়াকান্দিতে।
শৈশবে নাটকে অভিনয় এবং নাট্যনির্দেশনা দিলেও তার পেশাগত জীবন শুরু হয় একজন কমার্শিয়াল শিল্পী হিসেবে। ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ ছবিটি দেখে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হন। চলতে থাকে প্রস্তুতি। এর মধ্যে এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছবিটিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। সেটা কমেডিয়ান চরিত্রে।
শচীন ভৌমিকের একটি গল্পের চিত্রায়ন করলেন ‘সুতরাং’ নামে। নায়িকা নির্বাচিত হলেন চট্টগ্রামের কবরী। ১৯৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল ‘সুতরাং’ ছবিটি মুক্তি পেলো। ছবি সুপারহিট। হিট এই ছবির নায়িকা কবরীও।
সুভাষ দত্ত অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলোঃ ‘রাজধানীর বুকে’, ‘সূর্যস্নান’, ‘চান্দা’, ‘তালাশ’, ‘নতুন সুর’, ‘রূপবান’, ‘মিলন’, ‘নদী ও নারী’, ‘ভাইয়া’, ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’, ‘ক্যায়সে কাহু’, ‘আখেরি স্টেশন’, ‘সোনার কাজল’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘সমাধান’ প্রভৃতি।
তার নির্দেশিত ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ ‘সুতরাং’, ‘কাগজের নৌকা’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আবির্ভাব’, ‘বলাকা মন’, ‘সবুজ সাথী’, ‘বসুন্ধরা’, ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘নাজমা’, ‘স্বামী-স্ত্রী’, ‘আবদার’, ‘আগমন’, ‘শর্ত’, ‘সহধর্মিণী’, ‘সোহাগ মিলন’, ‘পালাবদল’, ‘আলিঙ্গন’, ‘বিনিময়’, ‘আকাংখা’, ‘ও আমার ছেলে’ ইত্যাদি।
শিল্পী গড়ার এক মহান কারিগর ছিলেন তিনি। তার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে কবরী, সুচন্দা, উজ্জল, শর্মিলী আহমেদ, ইলিয়াস কাঞ্চন, আহমেদ শরীফ ও মন্দিরার।
১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ ছবিটির জন্য পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সুভাষ দত্ত। এরপর ১৯৯৯ সালে একুশে পদকও অর্জন করেন তিনি।
সুভাষ দত্ত ২০১২ সালের আজকের দিনে (১৬ নভেম্বর) ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment