জন্মদিনে স্মরণঃ ক ম রে ড মাও সেতুং ।
বাবলু ভট্টাচার্য : কৃষকের বন্ধু কমরেড মাও সেতুং। মার্কসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের বদলে কৃষককে চিহ্নিত করেছেন বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে। গড়ে তুলেছেন সশস্ত্র রেড আর্মি, প্রচলন করেছেন আরণ্যক গেরিলা যুদ্ধের। আজও তার দেখানো পথে হাঁটছে তরুণেরা। বারবার ইতিহাসের চাকা বদলে দিয়েছেন চৈনিক এ মানুষটি।
পরিবারও ছিল স্বচ্ছল, পড়েছেন ভালো স্কুলে। বাবা ছিলেন কনফুসিয়াসপন্থি, মা একনিষ্ট বৌদ্ধ। কাজেই ছেলেবেলায় এ দুটি মতে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন মাও সেতুং।
১৯১১ সালে ভর্তি হন হুনান টির্চাস কলেজে। এখানেই প্রথম পাশ্চাত্য দর্শন সম্বন্ধে জানতে পারেন মাও। সে সময়টায় চীনে চলছিল কিং রাজতন্ত্রের দুঃশাসন। তার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদীদের তীব্র গণআন্দোলন হচ্ছিল। সান ইয়াত সেন ছিলেন জাতীয়তাবাদীদের নেতা। তিনি রাজতন্ত্র ভেঙে গঠন করতে চান প্রজাতন্ত্র। তার ডাকে মাও উদ্ধুদ্ধ হন। যোগ দেন প্রজাতন্ত্রের সৈন্য বিভাগে। রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে সান ইয়াত সেন জয়ী হন। জয়ী হয়ে কউমিং টাং (জাতীয়তাবাদী) দল গঠন করেন। প্রধান হন তিনিই।
১৯১৮ সালে হুনান টির্চাস কলেজে থেকে পাস করে চাকরির খোঁজে বেইজিং যান মাও। কাজ জোটে বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। অখণ্ড অবসর। পাঠ করতে লাগেন সভ্যতার বিস্ময়কর এক তত্ত্ব মাকর্সবাদ। বুঝলেন মায়ের বুদ্ধবাদ ও বাবার কনফুসিয়বাদ কাজের জিনিস না। এসব ব্যক্তিদর্শন চীনের সামাজিক সমস্যা সমাধানে অক্ষম। এসব বালখিল্য দর্শনই চীনকে পিছিয়ে রেখেছে। চীনের প্রয়োজন প্রবল আধুনিকায়ন, তথা পাশ্চাত্যকরণ।
১৯১৯ সালের দিকে চীনকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে একটি আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনে মাও যোগ দিলেন। তবে স্বশরীরে নয়, লিখে। সে লেখায় তীব্র সমালোচনা করলেন কনফুসিয়াসের। সেই সঙ্গে ঐতিহ্যবিরোধী আরও সব অনলবর্ষী লেখা লিখলেন মাও।
সে সময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হচ্ছিল। সেই গোপন মিটিংয়ে উপস্থিত হলেন মাও। তারপর হুনান ফিরে এসে কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক শাখা খুললেন তিনি। কীভাবে ধর্মঘট করতে হয়— শ্রমিকদের তাই শেখালেন।
১৯২৫ সালে জন্মগ্রাম শাওশানে কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন মাও সেতুং। ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দিলেন তিনি। তার বিপ্লবে কৃষকরাই মূল চালিকা শক্তি, শ্রমিকরা নয়। মার্কসবাদবিরোধী বক্তব্য। কাজেই নিজের দলে হইচই পড়ে গেল।
সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিয়ে আরেকবার ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দিলেন মাও। হুনান প্রদেশের কৃষকদের নিয়ে সৈন্যবাহিনী গঠন করলেন তিনি। অবশ্য এ সংগ্রামে তিনি পরাজিত হলেন। দক্ষিণে পার্বত্য এলাকায় সরে এলেন। জায়গাটার নাম জিয়াংজি প্রদেশ। এখানে তিনি গ্রামীণ ভূমি সংস্কারে উদ্যোগী হলেন। ওদিকে অসংখ্য তরুণরা দলে দলে মাও নিয়ন্ত্রিত কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিচ্ছিল। মাও তাদের সংগঠিত করেন। ইতিহাসে এই সশস্ত্র দলটি রেড আর্মি। এদের লক্ষ একটাই— কৃষকের মুক্তি। আর সে লক্ষ্য অর্জনে অভিনব গেরিলা যুদ্ধের পথ অনুসরণ করে আরেকবার ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিলেন মাও।
হাঁটতে হাঁটতে অগণন কৃষকের সমর্থন পেলেন মাও— পেলেন অগণন কৃষাণীর ভালোবাসা। হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ্যে পৌঁছে গেলেন মাও। ক্রমশ বদলে দিলেন চীনের হাজার বছরের পুরনো রুগ্ন কৃষিকাঠামো। অপরকেও বদলে দিতে উদ্বুদ্ধ করলেন।
মাও সেতুং ১৮৯৩ সালের আজকের দিনে (২৬ ডিসেম্বর) চীনের হুনান প্রদেশের শাওশান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment