Press "Enter" to skip to content

১৯১১ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে জিম করবেট ডজনখানেক মানুষখেকোকে যমলোকে পাঠান- যারা প্রায় ১৫০০ মানুষের প্রাণনাশ করেছিল……।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ জিম করবেট

বাবলু ভট্টাচার্য : জঙ্গল ছিল তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। অজস্র পশু- পাখির ডাক নকল করতে পারতেন তিনি। বাঘের মতোই নিঃশব্দ আর ক্ষিপ্র ছিল তাঁর গতি। কূমায়ুন, গাড়ওয়াল এর বনে-পাহাড়ে এমনি আরও হাজারো কাহিনি ছড়িয়ে আছে তাঁর নাম ঘিরে।

তিনি এডওয়ার্ড জেমস করবেট। সংক্ষেপে জিম করবেট। স্থানীয় মানুষদের প্রিয় ‘কার্পেট সাহেব’।

সাবেক মিলিটারি সদস্য ক্রিস্টোফার উইলিয়াম করবেট ও মেরি জেনের অষ্টম সন্তান তিনি। উইলিয়াম মিলিটারিতে ইস্তফা দিয়ে ১৮৬২ সালে নৈনিতালের কলাধুঙ্গিতে একটি বাড়ি কিনে সেখানেই সপরিবারে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানকার পোস্টমাস্টার বনে যান। এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি শিকারি জিম করবেট।

করবেট ভাইবোনেরা কলাধুঙ্গির বন্য পরিবেশে হেসে খেলে বেড়ে উঠতে থাকে। কিন্তু সত্বর এই হাসি-আনন্দে ছেদ পড়ে যখন পরিবারের একমাত্র আয়ক্ষম ব্যক্তি উইলিয়ামের মৃত্যু হয়। গৃহস্থালির তাগিদে খোদ বিধবা মেরি জেনই নেমে পড়েন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় এবং খুব অল্প সময়ে নৈনিতালের একজন সফল ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

কিছুকাল বাদে করবেটের বড় ভাই পিতার পোস্টমাস্টারের চাকরিতে বহাল হন। ততদিনে তাদের গ্রামের আশপাশের বন্য প্রকৃতি ও জন্তু-জানোয়ারেরা প্রবলভাবে আকর্ষণ করতে শুরু করেছে অল্পবয়সী জিম করবেটকে।

করবেট উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বেশি সময় ব্যয় করেননি। শেরউড কলেজে ভর্তি হলেও, ওক ওপেনিং স্কুল থেকে পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি ঘটে। জীবিকার প্রয়োজনে ফুয়েল ইন্সপেক্টর হিসেবে বেঙ্গল ও নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়েতে যোগদান করে তিনি সত্বর অর্থোপার্জনে ব্রতী হন।

তরুণ বয়সে জিমের ছিল প্রচণ্ড রকম মাছ ধরা ও শিকারের নেশা। পরবর্তীকালে অবশ্য বন্দুকের চেয়ে ক্যামেরার প্রয়োগ করতেই তিনি অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। যদিও মানুষখেকো বাঘ ও চিতা নিধনে তার বন্দুক সর্বদাই গর্জে উঠত।

১৯১১ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে জিম করবেট ডজনখানেক মানুষখেকোকে যমলোকে পাঠান- যারা প্রায় ১৫০০ মানুষের প্রাণনাশ করেছিল। আর এই সকল শিকারে মারাত্মক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি একাই যেতেন- কোনো মনুষ্য সহকর্মী বা সহায়ক তার ছিল না!

উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের তৎকালীন স্থানীয় সরকারের তলবে প্রায়ই মনুষ্যসংহারী বাঘ ও চিতা বধ করে তাকে জনমানসে শান্তি পুনঃস্থাপন করতে হতো। এই কারণেই কখনো কখনো তাকে ‘মানবতাবাদী শিকারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, আর স্মরণ করা হয় গভীর শ্রদ্ধায়।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও জিম করবেট আমাদের মহাদেশের একজন অগ্রদূত। ১৯৩৬-এ তারই আন্তরিক সহায়তায় নির্মিত হয় নৈনিতালের দ্য হেইলি ন্যাশনাল পার্ক, যেটি কি-না এশিয়ারই প্রথম ন্যাশনাল পার্ক।

পরবর্তীকালে ১৯৫৬ সালে এই পার্কের নাম পরিবর্তন করে ‘জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক’ রাখা হয়- এই মহান মানুষটির সম্মানে। দ্য ইন্দো-চাইনিজ টাইগার নামক এক জাতের বিলুপ্তপ্রায় বাঘের নামও ‘করবেট’স টাইগার’ রাখা হয় ১৯৬৮-তে।

ইন্ডিয়ান পাবলিক সার্ভিসে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি- স্বরূপ ‘কায়সার-ই-হিন্দ’ মেডেলে সম্মানিত, আজীবন অকৃতদার এই মানুষটি ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে ১৯৪৭ সালে বোন ম্যাগির সাথে কেনিয়াতে চলে যান। সেখানে তিনি তার সারাজীবনের দুর্ধর্ষ সব অভিযানের রোমাঞ্চগাথা মলাটবদ্ধ করতে থাকেন।

১৯৫৫ সালের ১৯ এপ্রিল, ট্রি টপস বইটি লেখার কিছুদিন পরে, করবেট পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

১৯৪৮ সালে ‘ম্যান ইটার্স অব কুমায়ুন’ শিরোনামে পরিচালক বায়রন হাসকিন হলিউডে নির্মাণ করেন প্রথম এবং একমাত্র জিম করবেট ফিল্ম। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় এই যে, গোটা সিনেমাটির কোনো দৃশ্যই করবেটের বই থেকে নেওয়া হয়নি- পুরো চিত্রনাট্যটাই ছিল নির্মাতার কল্পনাপ্রসূত।

পরবর্তীতকালে জিম করবেটের কীর্তি অবলম্বনে ১৯৮৬ ও ২০০৫ সালে যথাক্রমে ম্যান ইটার্স অব ইন্ডিয়া নামে একটি ডকুমেন্টারি ড্রামা এবং দ্য ম্যান ইটিং লেপার্ড অব রুদ্রপ্রয়াগ শিরোনামে একটি টিভি চলচ্চিত্র তৈরি হয়।

জিম করবেট ১৮৭৫ সালের আজকের দিনে (২৫ জুলাই) ভারতের নৈনিতালে জন্মগ্রহণ করেন।

More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.