শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কলকাতা, ১২ মে, ২০২২। বিনোদন দুনিয়ায় মডেল ও অভিনেত্রী হিনা কৌসর একটি অতি পরিচিত নাম। করোনা কালের ঠিক আগে ২০১৯ মিসেস এশিয়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ী। এই মুহূর্তে তাঁর পরিচয় শুধু মডেল, অভিনেত্রী বা প্রাক্তন এশিয়াসুন্দরী নয়, তিনি সমাজকর্মীও বটে। একজন শিশুশিল্পী হিসেবে ডি ডি ন্যাশনাল চ্যানেলে আত্মপ্রকাশ হিনার।
ইচ্ছে ছিল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। কিন্তু মায়ের প্রবল আপত্তিতে তাঁকে পড়তে হয় এম বি এ। এইচ আর হিসেবে এখন কর্মরত। একটা সময় শারীরিক অসুস্থতায় শয্যাশায়ী ছিলেন। কিন্তু প্রাণশক্তি ও জেদ তাঁকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনে। শেষপর্যন্ত তাঁর শুভাকাঙ্খীদের দাবিতে ফের আসা গ্ল্যামার দুনিয়ায়। একসময় মিসেস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় নেমে ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছন। চলতে থাকে নিরলস প্রচেষ্টা। শেষপর্যন্ত জিতে নেন মিসেস এশিয়া খেতাব।
মায়ের আপত্তি থেকে হিনা’র বোধোদয় হয়, মেয়েদের ব্যক্তিগত ইচ্ছার এখনও তেমন গুরুত্ব নেই। পরিবার বা সমাজের বৃহত্তর অংশ মেয়েদের এখনও ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান। ফলে বহু প্রতিভাময়ী তাঁদের ইচ্ছাকে সফল করে তুলতে পারেন না। ২০২০ সাল থেকে তিনি শুরু করেন মিস্টার, মিস্ ও মিসেস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশানাল ফ্যাশন শো। সেই প্রথম অনুষ্ঠানে হিনা কৌসর ও প্রতিযোগীদের উৎসাহিত করতে হাজির ছিলেন অভিনেতা রাহুল রায়, বরুণ সুরি ও সাব্বির আলি।
এই বছর হিনা কৌসর পিঙ্ক রোজ এর ব্যানারে মিস্টার, মিস্ ও মিসেস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশানাল ২০২২ অনুষ্ঠিত করলেন রবিবার বিকেলে ভি আই পি রোড সংলগ্ন বিকা ব্যাংকয়েটে। এবারের অনুষ্ঠানে বিচারকের আসনে ছিলেন ডা: আরিফ নাসির বট, রোহিত সুমন, ডালিয়া মিত্র ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নাগমণি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুম্বাই ফিল্ম দুনিয়ার বর্ষীয়ান জনপ্রিয় অভিনেতা রাজা মুরাদ।
রাজা মুরাদ বলেন, হিনা’র উদ্যোগ প্রসংশনীয়। এই প্রতিযোগিতার বৈশিষ্ট্য আমাকে আকর্ষণ করেছে। এখানে নেই কোনো বয়সের সীমা। এমনকি যে বিবাহিতা মেয়েদের জীবন কাটে ঘরের মধ্যে আর রান্নাঘরে, তাঁরাও সুযোগ পাচ্ছেন তাঁদের জীবনের সুপ্ত কিছু ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে।
তাছাড়া একদল মূক ও বধির শিশুদেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যা সত্যিই অভিনব। হিনা এবার তাঁর তৃতীয় বর্ষের অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ করায় আমি গর্বিত অনুভব করছি। আবেগপ্রবণ হয়ে রাজা মুরাদ শোনান এক উর্দু শায়েরি। নশা পিলাকে গিরানা তো সবকো আতা হ্যায়, মজা তো তব আতা হ্যায় কি গিরনেকো থাম লে সাকী। অর্থাৎ, নেশা করিয়ে যে কেউ সবাইকে ফেলে দিতে পারে,কিন্তু তখনই তা মজার হয়, যখন পড়ে যাচ্ছেন কেউ তাঁকে কেউ তুলে ধরে।
হিনা যেসব মূক ও বধির শিশুদের মঞ্চে তোলেন, তাঁদের তিনি নিয়ে আসেন সুদূর লখনৌ থেকে। তাঁদের কলকাতায় নিয়ে আসা ,থাকা , খাওয়ার ব্যবস্থাও হিনা করেন তাঁর সংগঠনের খরচে। বিনোদন মাধ্যমে এক মানবিক স্পর্শ দিয়ে হিনা কৌসর যে অনুষ্ঠান করলেন, তা নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ।
Be First to Comment