শুভ জন্মদিন স্টিফানি মারিয়া ‘স্টেফি’ গ্রাফ
বাবলু ভট্টাচার্য : পিটার গ্রাফ ছিলেন গাড়ী ও বীমা সেবাপ্রদানকারী এবং টেনিস কোচ হিসেবে উৎসাহপ্রদানকারী একজন ব্যক্তি। তিনি তার তিন বছর বয়সী কন্যা স্টিফানি মারিয়া ‘স্টেফি’ গ্রাফ কে কাঠের র্যাকেটে কিভাবে বলকে সুইং করাতে হয় তা পারিবারিক শয়নকক্ষে শেখাতেন। চার বছর বয়সে সেই মেয়ে কোর্টে টেনিস শিখতে যান ও মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তিনি তার প্রথম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন।
স্টেফি গ্রাফ বিশ্বের খ্যাতনামা সাবেক পেশাদার প্রমিলা টেনিস খেলোয়াড়। একসময় তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ও সেরা টেনিস খেলোয়াড়ের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকের শেষার্ধ্ব থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত মহিলাদের টেনিসে একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন।
১৯৮২ সালে তিনি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ১২ ও ১৮ বছর বয়সসীমা নির্ধারণী প্রতিযোগিতা জয় করেন। মাত্র তেরো বছর বয়সেই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক টেনিস র্যাঙ্কিংয়ে অন্তর্ভূক্ত হন।
স্টেফি গ্রাফ তার দূর্দান্ত গতি, শক্তিশালী সম্মুখের হাতের পুরোটা ধরে রাখা, তীক্ষ্ণতার জন্য পরিচিত হয়ে আছেন। ১৯৯০-এর দশকে তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান।
তিনি সর্বমোট ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম এককের শিরোপা জয় করেন। ১৯৮৮ সালে টেনিস ইতিহাসে নারী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড়রূপে এক পঞ্জিকাবর্ষে চারটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম এককের শিরোপাসহ অলিম্পিক স্বর্ণপদকজয়ের বিরল কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। সিউলে অনুষ্ঠিত ১৯৮৮ সালের অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদকজয়ের মাধ্যমে অনন্য সাধারণ খ্যাতি বহন করে গোল্ডেন স্ল্যাম জয় করেন।
১৯৮৭ সালে তিনি তার প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন চেক বংশোদ্ভূত মার্কিন খেলোয়াড় মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাকে পরাভূত করার মধ্য দিয়ে। উইম্বলেডন চ্যাম্পিয়নশীপে মহিলাদের এককের শিরোপা জয় করেন (১৯৮৮-৮৯, ১৯৯১-৯৩, ১৯৯৫-৯৬) সাতবার— যা, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা’র নয়বার অর্জনের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।
এছাড়াও, ফ্রেঞ্চ ওপেন (১৯৮৭-৮৮, ১৯৯৩, ১৯৯৫-৯৬ ও ১৯৯৯) ছয়বার, ইউএস ওপেনে (১৯৮৮-৮৯, ১৯৯৩, ১৯৯৫-৯৬) পাঁচবার এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের এককে (১৯৮৮-৯০, ১৯৯৪) চারবার বিজয়ী হন।
এছাড়াও তিনি ১১ বার দ্বৈত শিরোপার অধিকারীনি। ৫৬টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতায় জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যান হচ্ছে ২২৮-৩৪ (৮৯%)। তারমধ্যে, ফ্রেঞ্চ ওপেনে ৮৭-১০, উইম্বলেডন চ্যাম্পিয়নশীপে ৭৫-৮, ইউএস ওপেনে ৭৩-১০ এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ৪৭-৬।
১৯৯৯ সালের উইম্বলেডন ফাইনালে পরাজয়ের পর বিশ্বের ৩ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে ক্রীড়াজীবন থেকে অবসর নেন স্টেফি গ্রাফ। এসময় তিনি শারীরিক আঘাতে পর্যদুস্ত ছিলেন। ২২ অক্টোবর, ২০০১ তারিখে তিনি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় টেনিস খেলোয়াড় আন্দ্রে আগাসি’র সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৯১ সালে লিপজিগে স্টেফি গ্রাফ ইয়ুথ টেনিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। চিলড্রেন ফর টুমরোনামীয় একটি অ-লাভজনক সংস্থার প্রতিষ্ঠান ও সভানেত্রী তিনি। এটি যুদ্ধ অথবা অন্য কোন সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সহায়তার লক্ষ্যে কাজ করছে। গ্রাফ-আগাসি দম্পতি সংস্থার অর্থসংগ্রহের লক্ষ্যে একত্রে টেলিভিশনের অনেকগুলো বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশগ্রহণ করেন।
স্টিফানি মারিয়া ‘স্টেফি’ গ্রাফ ১৯৬৯ সালের আজকের দিনে (১৪ জুন) পশ্চিম জার্মানির বাডেন-ভুর্টেমবার্গের মানহেইমে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment